শিরোনাম
১ আগস্ট, ২০২৪ ১৭:১৮

‘নিহত’ হামাসের শীর্ষ কমান্ডার কে এই মোহাম্মদ দেইফ

অনলাইন ডেস্ক

 ‘নিহত’ হামাসের শীর্ষ কমান্ডার কে এই মোহাম্মদ দেইফ

মোহাম্মদ দেইফ

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সামরিক শাখার প্রধান মোহাম্মদ দেইফ নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলের সেনাবাহিনী আজ বৃহস্পতিবার এমনটাই দাবি করেছে। তবে হামাসের পক্ষ থেকে তার নিহতের তথ্য নিশ্চিত করা হয়নি।

ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর ভাষ্য, গত ১৩ জুলাই ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার খান ইউনিস এলাকায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় মোহাম্মদ দেইফ নিহত হন।

খবর অনুসারে, হামাসের কমান্ডার দেইফকে হত্যা করতে সাতবার চেষ্টা চালিয়েছে ইসরায়েল। হত্যার দাবি করার আগের চেষ্টাটি ছিল ২০২১ সালে। তবে শেষ হামলার আগে প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছে ইসরায়েল।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে মোহাম্মদ দেইফ একজন রহস্যে ঘেরা মানুষ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি প্রকাশ্যে এসে কথা বলতে পছন্দ করতেন না। সংবাদমাধ্যমে তার তিনটি ছবি ঘুরেফিরে আসতো। দেইফের বয়স যখন বিশের কোঠায়—একটি ছবি তখনকার। অন্য দুটি ছবির মধ্যে একটিতে দেইফকে মাস্ক পরে থাকতে এবং অন্যটিতে তার ছায়া দেখা যায়। তিনি কোথায় বসবাস করতেন, সেটাও স্পষ্ট ছিল না।
ইসরায়েলিদের বিশ্বাস, ৭ অক্টোবরের আকস্মিক ও ব্যাপক হামলার মূল পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নকারী মোহাম্মদ দেইফ।

মোহাম্মদ দেইফ হামাসের সামরিক শাখা আল–কাসেম ব্রিগেডের কমান্ডার। হামাস–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ৭ অক্টোবর হামলার পেছনে দেইফ ও ইয়াহিয়া সিনওয়ার একসঙ্গে পরিকল্পনা করেছেন। সিনওয়ার গাজায় হামাসের নেতা। তবে এটা ঠিক যে হামলার পেছনে দুটি মস্তিষ্ক কাজ করেছে। কিন্তু মূল ‘হোতা’ বা মাস্টারমাইন্ড একজনই। সেটা দেইফ।

 

জন্ম শরণার্থীশিবিরে
মোহাম্মদ দেইফের জন্ম ১৯৬৫ সালে, খান ইউনিস শরণার্থীশিবিরে। ১৯৪৮ সালের আরব–ইসরায়েল যুদ্ধের পর এই শরণার্থীশিবির প্রতিষ্ঠিত হয়। দেইফের নাম ছিল মোহাম্মদ মাসরি। ১৯৮৭ সালে প্রথম ইন্তিফাদা শুরুর পর তিনি হামাসে যোগ দেন। তখন তার নাম হয় মোহাম্মদ দেইফ।
১৯৮৯ সালে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন দেইফ। তখন ১৬ মাস কারাগারে ছিলেন তিনি। হামাসের সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। সূত্রটি আরও জানায়, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব গাজা থেকে বিজ্ঞান বিষয়ে ডিগ্রি নেন দেইফ। পদার্থ, রসায়ন এবং জীববিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি। তবে নানা বিষয়ে তার আগ্রহ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কমিটির প্রধান ছিলেন। মঞ্চে অভিনয় করেছেন। গাজায় হামাসের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় অসংখ্য টানেল বা সুড়ঙ্গ রয়েছে। এ নেটওয়ার্ক উন্নয়নে কাজ করেছেন দেইফ। এ ছাড়া তিনি হামাসের বোমা বানানোর প্রকল্পে ভূমিকা রেখেছেন। কয়েক দশক ধরে ইসরায়েলের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় দেইফের নাম রয়েছে।
পরিবার হারানো ব্যক্তি তিনি
হামাস–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইসরায়েলের পক্ষ থেকে হত্যাচেষ্টায় দেইফ একটি চোখ হারান। সেই সঙ্গে পায়ে গুরুতর আঘাত পান। ২০১৪ সালে ইসরায়েলের বিমান হামলায় দেইফের স্ত্রী, সাত মাসের পুত্রসন্তান এবং তিন বছর বয়সী মেয়ের মৃত্যু হয়। ইসরায়েল পাল্টা আক্রমণ শুরু করার পর দেইফের পরিবারের ওপর চরম প্রতিশোধ নিয়েছে ইসরায়েল। গাজায় বিমান হামলায় দেইফের বাবা, এক ভাই এবং তার পরিবারের আরও দুই সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। হামাস–সংশ্লিষ্ট সূত্রটি হামলা ও নিহত হওয়ার এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। 

ফিলিস্তিনিদের কাছে একজন মুক্তির নায়ক মোহাম্মদ দেইফ। বারবার আঘাত, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, গোপন জীবন, পরিবারের সদস্যদের হত্যা—কিছুই তাকে দমাতে পারেনি। ফিনিক্স পাখির মতো ঘুরে দাঁড়িয়েছেন দেইফ। হামাসের সূত্র জানিয়েছে, স্মার্টফোনের মতো আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করতেন না দেইফ। তিনি একজন রহস্যপুরুষ। তিনি ছিলেন অধরা, তিনি ছিলেন ছায়ার মানুষ।

বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর