৩ আগস্ট, ২০২৪ ১৭:৩১

ডেমোক্র্যাটদের প্রতি কমিউনিটির আস্থার ভীত নড়বড়ে হয়েছে: মার্কিন অ্যাটর্নি

যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি

ডেমোক্র্যাটদের প্রতি কমিউনিটির আস্থার ভীত নড়বড়ে হয়েছে: মার্কিন অ্যাটর্নি

অ্যাটর্নি অশোক কর্মকার ও অ্যাটর্নি জান্নাতুল রুমা

নির্বাচন এলেই ইমিগ্রেশনের ইস্যুটি সামনে আসে। এক্ষেত্রে এগিয়ে থাকেন ডেমোক্র্যাটরা। তবে এবার পিছিয়ে থাকতে চাচ্ছে না ট্রাম্পের রিপাবলিকানদেরও। তারাও নানা সস্তা প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি দিচ্ছেন। এরফলে বিভ্রান্ত কমিউনিটি। গত ৩০ বছরের মধ্যে যতগুলো নির্বাচন এসেছে সবকটিতেই ইমিগ্রেশনের ভঙ্গুর অবস্থা বিবৃত হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের পর কোনো প্রেসিডেন্টই এ সমস্যাকে সমাধানের আন্তরিক কোনো উদ্যোগ নেননি। বারাক ওবামা চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু রিপাবলিকানদের বিরোধিতায় কমপ্রিহেনসিভ ইমিগ্রেশন রিফর্ম বিলটি সিনেটের অনুমোদন পায়নি। 

কারণ, কমপক্ষে ৬০ ভোটের প্রয়োজন হয় সিনেটের অনুমোদনের জন্য। এই তবে বিল ক্লিন্টনের আমলে একবার কংগ্রেসের উভয়কক্ষেই সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল ডেমোক্র্যাটরা। তবুও কিছু করা হয়নি। অধিকন্তু ক্লিন্টনের আমলেই দু’বছরের অধিক সাজাপ্রাপ্ত গ্রীণকার্ডধারিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের আইন হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে ইমিগ্র্যান্টরা নাজুক অবস্থায় নিপতিত হয়েছিলেন। কিছুদিন আগেও তিনি হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইমিগ্র্যান্টদের ঢালাওভাবে (কাগজপত্রহীন) বহিষ্কারের। সেই ট্রাম্প এখোন ভোটের কারণে নমনীয় হয়েছেন। সবকিছুই ব্যালটের ছক এবং এ অবস্থায় ইমিগ্র্যান্ট কমিউনিটির ভোটাররা কী করবেন নভেম্বরের নির্বাচনে তা নিয়ে কথা হয় নিউইয়র্কে ইমিগ্রেশন আইনজীবীদের সাথে। 

অ্যাটর্নি অশোক কর্মকার এ প্রসঙ্গে বলেন, উভয় পার্টির অঙ্গিকারই অপূরণীয়। কারণ, কংগ্রেসের অনুমোদন ব্যতিত সত্যিকারের কোনো বিধি তৈরী করা সম্ভব হবে না। বিগত বছরসমূহে তা প্রমাণিত হয়েছে। সামনের নির্বাচনেও যদি সামান্য মার্জিনে কোনো দল সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় তাহলে একই ঘটনা অবাক বিস্ময়ে অবলোকন করতে হবে সকলকে। আর এমন স্থবিরতা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনাই বাড়ছে। 

অশোক কর্মকার আরো বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি ক্ষমতায় আসেন, তাহলে তাকে ইমিগ্রেশনের আইন দ্রুত পরিবর্তন করতে হবে। প্রেসিডেন্ট তার নির্বাহী আদেশ দিতে পারেন জনমত পক্ষে রাখতে। তবে তা উচ্চতর আদালতে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়ে আবার সবকিছু থেমে থাকতে দেখেছি অতীতে। এ অবস্থায় আমি তেমন কিছু দেখছি না যে অঙ্গিকার অনুযায়ী কোন কিছুর বাস্তবায়ন ঘটবে। 

এসাইলামের আবেদন তৈরী এবং আদালতে যুক্তির আলোকে মঞ্জুর করিয়ে নিতে ইতিমধ্যেই ব্যাপক পরিচিতি লাভকারি অ্যাটর্নি কর্মকার অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে আরো বলেন, ট্রাম্প জয়ী হলে অনেকের ঘুম হারাম হবে। বিশেষ করে রিপাবলিকান শাসিত স্টেটসমূহের গভর্ণররা বলবেন আনডক্যুমেন্ট ইমিগ্র্যান্টদের ধরেই বহিস্কারের কথা। স্টেট পুলিশকে সে ক্ষমতা দিলে কাগজপত্রহীনরা আবার আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হবেন। অ্যাটর্নি কর্মকার অবশ্য উল্লেখ করেন যে, ডেমোক্র্যাটরাই মোর পজিটিভ এক্ষেত্রে। আল্টিমেটলি কতখানি লাভ হবে সেটি পরের ঘটনা। 

খুবই কম সময়ে জনপ্রিয়তা অর্জনকারি অ্যাটর্নি জান্নাতুল রুমা নানাবিধ কারণে বিতশ্রদ্ধ উভয় পার্টির প্রতি। তাই তিনি এবার কাউকেই ভোট দিতে চান না। গাজা পরিস্থিতির জন্য জো বাইডেন-কমলা হ্যারিসের ভূমিকা তার পছন্দ নয়। একইভাবে ট্রাম্পের ইমিগ্রেশন ও মুসলিম বিদ্বেষী মনোভাবকেও তিনি পছন্দ করেন না। অ্যাটর্নি রুমা বলেন, নানাবিধ কারণে ইমিগ্র্যান্টরা মনে করেন যে, ডেমোক্র্যাটরা তাদের ভরসার স্থল। কিন্তু গত সাড়ে ৩ বছর সময়ে বাইডেনের আচরণে সে ভরসা টিকে থাকেনি। অধিকন্তু নানাবিধ পদক্ষেপে ইমিগ্র্যান্টরা নিষ্পেষিত। বিশেষ করে করোনা থেকে জেগে উঠার পরিক্রমায় যে কঠিন অবস্থার সম্মুখীন ইমিগ্র্যান্টরা হয়েছেন তা কবে নাগাদ দূর হবে তার কোন নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে না। অধিকন্তু প্রতিনিয়ত পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। বাড়ি ভাড়া বেড়েই চলছে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য হ্রাসের কোন লক্ষণ দেখছি না। অপরদিকে স্বল্প ও মাঝারি আয়ের লোকজনের বেতন-ভাতাও বাড়েনি বাজার দলের সাথে সঙ্গতি রেখে। অ্যাটর্নি রুমা উল্লেখ করেন, ভাড়াটে এবং ল্যান্ডলর্ডের মধ্যেকার ঝামেলা নিষ্পত্তির জন্য ফেডারেল প্রশাসন এবং কংগ্রেসের নিরবতা অনেক ইমিগ্র্যান্টের আমেরিকান স্বপ্ন তছনছ করে দিচ্ছে। বাস্তবতার আলোকে টিনেন্ট/ল্যান্ডলর্ড আইন ঢেলে সাজানো হচ্ছে না। 

রুমা বলেন, আগে থেকেই অনেক আনডকুমেন্টেড বিদেশির কোন সমাধান না করেই সীমান্ত খুলে দেয়া হয় সেন্ট্রাল আমেরিকার মানুষদের স্বাগত জানাতে। মানবিক কারণে এবং বিশ্বের মোড়ল হিসেবে নিজেদের অবস্থানকে অটুট রাখতে বিপদগ্রস্ত মানুষদের আশ্রয় প্রদানে কোনো সমস্যা নেই। তবে আগে থেকেই যারা আছেন তাদের ব্যাপারেও একটি পদক্ষেপ নেয়া জরুরী ছিল। সেটি না করে নবাগতদের পাঁচ তারকা হোটেলে রাখা হচ্ছে জামাই আদরে। এমন স্ববিরোধী আচরণে ডেমোক্র্যাটদের প্রতি অনেক মানুষের বিরক্তি বেড়েছে। 

জ্যাকসন হাইটসে ৭৭ স্ট্রিটে নতুন অফিসে কথা হলো অ্যাটর্নি রুমার সাথে। তিনি বলেন, আমার অনেক ক্লায়েন্টের এসাইলাম মঞ্জুর হয়েছে এবং হচ্ছে। এটাই আমার পেশাগত সাফল্য। রুমা বলেন, এসাইলামের আবেদনে যুক্তিসঙ্গত তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপনের পর তার সমর্থনে ডকুমেন্ট সাবমিট করা সম্ভব হলে খুবই দ্রুত সুফল পাওয়া যায়। আমার ক্লায়েন্টরা সেভাবে পাচ্ছেন। 


বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর