শিরোনাম
১৭ আগস্ট, ২০২৪ ২০:৩৪
মেডিকেল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ ও হত্যা

পশ্চিমবঙ্গে আন্দোলন অব্যাহত, মমতার পদত্যাগের দাবিতে দিল্লিতে বিক্ষোভ

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

পশ্চিমবঙ্গে আন্দোলন অব্যাহত, মমতার পদত্যাগের দাবিতে দিল্লিতে বিক্ষোভ

কলকাতার আরজিকর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নারী ছাত্রীকে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার বিচার চেয়ে শনিবারও প্রতিবাদ, বিক্ষোভ মিছিলে উত্তাল গোটা পশ্চিমবঙ্গ। ন্যায় বিচারের দাবিতে শনিবারও রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। ওই একই ইস্যুতে মৃত ছাত্রীর রাজ্য উত্তর ২৪ পরগনা জেলার নাটাগড়ের বাড়ির সামনেও বড় মিছিল হয়েছে। যেখানে অংশ নেয় এলাকার বিভিন্ন স্কুলের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীসহ অনেকে।

ইতিমধ্যেই প্রতিবাদের ঢেউ আছড়ে পড়েছে দিল্লিতেও। কিন্তু শনিবার দিল্লির রাজপথ দখল করে মমতা ব্যানার্জির পদত্যাগ দাবি করেছে বিজেপির ছাত্র সংগঠন 'অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ' (এবিভিপি)।  মুখ্যমন্ত্রী কেন পদত্যাগ করছেন না, অপরাধীদের কেন ফাঁসি দেওয়া হচ্ছে না- এসব দাবি তুলে দিল্লির হ্যালি রোডে অবস্থিত 'বঙ্গভবন অভিযানে'র ডাক দেয় এবিভিপি। আর সেই অভিযানকে ঘিরেই পুলিশের সাথে ধস্তাধস্তি এবিভিপির কর্মী সমর্থকদের। 

অন্যদিকে বিচারের দাবিতে খালি গায়ে রাজপথে অভিনব মিছিল করলো কংগ্রেস। মিছিল থেকেই উঠল মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি। এদিন কলকাতার নীল রতন সরকার মেডিকেল কলেজের সামনে থেকে কার মিছিল বের করে কংগ্রেসের মধ্যকলকাতা শাখা। তাদের বক্তব্য 'একটা উলঙ্গ প্রসাশন চলছে, তাই তার বিরুদ্ধে এই উলঙ্গ প্রতিবাদ। যিনি নিজে একাধারে মুখ্যমন্ত্রী, পুলিশ মন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী- তিনিই আবার ন্যায় বিচার চাইছেন। আমরা ওই মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাই।' 

ঘটনার প্রতিবাদে এদিন দেশব্যাপী ২৪ ঘণ্টার (শনিবার সকাল ছয়টা থেকে রবিবার সকাল ছটা পর্যন্ত) কর্মবিরতি পালন করছে চিকিৎসকরা। ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)-এর ডাকা এই কর্ম বিরতিতে চালু ছিল কেবলমাত্র জরুরি পরিষেবা। বন্ধ ছিল আউটডোর ও অন্য পরিষেবা। ফলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগীদের। এমন অবস্থায় চিকিৎসকদের ধর্মঘট তুলে নিতে আহ্বান জানালে জানায় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। 

আইএমএ'এর দাবি চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় সরকারকে অবিলম্বে আইন প্রণয়ন করতে হবে। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তারকা জানানো হয়েছে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে একটি কমিটি গঠন করা হবে। 

এই ঘটনায় অভিযুক্তের ফাঁসির দাবিতে শুক্রবারই পথে নামেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এদিন বিকালে কলকাতার মৌলালি থেকে ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত একটি পদ যাত্রায় সামিল হন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার সাথেই সেই মিছিলে পা মেলান রাজ্যের একাধিক নারী মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক। 

যদিও মমতার এই আচরণ নিয়ে কটাক্ষ করেছেন সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী। তার বক্তব্য 'নিজের বিরুদ্ধে নিজেই আন্দোলনের নামছে। অদ্ভুত ব্যাপার! ভারতবর্ষের রাজনীতিতে মমতা ব্যানার্জি এক নিদর্শন তৈরি করল।' 

এদিকে এখন ভারতে মেডিকেল কলেজের ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদে প্রতিবেশী বাংলাদেশেও পথে নেমেছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এমনকি মৃতার বাবাকে ফোন করে তার পরিবারের পাশে থাকার বার্তা এসেছে বাংলাদেশ থেকে। ফলে মানসিকভাবে অনেকটাই ভরসা পেয়েছেন মৃত শিক্ষার্থীর বাবা।

শনিবার তিনি জানান 'বাংলাদেশে আমার এক ফেসবুক ফ্রেন্ড বন্ধু আছে তিনি আমাকে দুটো ভিডিও পাঠিয়েছিলেন। ফোন করে তিনি জানিয়েছিলেন 'আমরা আপনাদের পাশে আছি, সাথে আছি। আপনারা চিন্তা করবেন না।' তবে শুধু বাংলাদেশ নয় প্রতিবেশী পাকিস্তান, লন্ডন, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশেই ওই ঘটনার প্রতিবাদে পথে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। স্বভাবতই মৃতার বাবা জানিয়েছেন 'আমি এক মেয়েকে হারিয়েছি, কিন্তু কোটি কোটি মেয়েকে পেয়েছি।' 


গত ৯ আগস্ট আরজিকর হাসপাতালের সেমিনার হলে  ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ উঠেছে, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন মৃত শিক্ষার্থীর বাবা। এদিন গণমাধ্যমের সামনে তিনি বলেন 'আমার তো সন্দেহ হচ্ছে যে আদৌ ওখানে খুন করা হয়েছিল কি না।' তাহলে কি অন্য ঘরে খুন হয়েছে? উত্তরে বলেন 'হতে পারে'। হয়তো তথ্য প্রমাণ লোপাটের জন্যই এটা হয়ে থাকতে পারে।' 


এই ঘটনার ঘটনার পেছনে গোটা ডিপার্টমেন্ট জড়িত আছে বলে অভিযোগ করেছেন মৃত শিক্ষার্থীর বাবার। ডিপার্টমেন্টের গাফিলতি যদি না থাকতো তবে এই ঘটনা ঘটত না বলেও দাবি তার। 


ছাত্রীর মৃত্যু এবং তার পরে আরজিকর হাসপাতালে হামলা, ভাঙচুরসহ গোটা ঘটনায় ওই শিক্ষার্থীর বাবার অভিযোগ 'গোটা ঘটনার পিছনে একটা বড় চক্র কাজ করছে। তবে সেই বড় চক্রটা কি তা জানাতে চাননি তার বাবা। হাসপাতালে কি অবৈধ কাজকর্ম হত? বাবার উত্তর 'নিশ্চয়ই হতো।'  

ডিপার্টমেন্টের গাফিলতির অভিযোগ তুলে ওই ছাত্রীর মা'ও বলেন 'পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া সিভিক পুলিশ সঞ্জয় রায় আসল দোষী হিসেবে আমরা মনে করছি না কারণ আমার মেয়ে ওইদিন সিঙ্গেল রুমে ছিল এটা ভিতরের কেউ সঞ্জয়কে না জানালে সে জানতো না।' তার স্পষ্ট বক্তব্য 'আমার মেয়ের মরদেহ দেখে কখনোই মনে হয়নি যে, কোন একা ব্যক্তির পক্ষে এই কাজ করা সম্ভব। এমনকি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের কর্মকর্তা আমাদের বাড়িতে এসে একাধিক ব্যক্তির জড়িত থাকার কথা বলেছেন।' 


বিডি প্রতিদিন/নাজমুল

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর