ইরানের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা প্রধান আলী শমখানির পুত্র হোসেইন শমখানি বিশ্ব তেল বাজারে একটি প্রধান খেলোয়াড় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও, শমখানি দুবাই থেকে আন্তর্জাতিক তেল বাণিজ্য পরিচালনা করছেন এবং বৈশ্বিক জ্বালানি খাতের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছেন।
ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, হোসেইন শমখানির উত্থান তার পিতা আলী শমখানির সাথে গভীরভাবে যুক্ত। আলী শমখানি ইরানের প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা খাতে দীর্ঘদিন ধরে একটি প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করে আসছেন। বর্তমানে তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যদিকে, হোসেইন শমখানি বিশ্ব তেল বাজারে তার ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন, যা এখন বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তার করছে।
দুবাইয়ের সংযোগব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুসারে, দুই বছর আগে একটি অজানা কোম্পানি ‘মিলাভাউস গ্রুপ লিমিটেড’ দুবাইয়ের একটি কর্পোরেট টাওয়ারে প্রিমিয়াম অফিস স্থান ভাড়া নেয়। কিছু মাসের মধ্যেই এই কোম্পানি বৈশ্বিক তেল বাজারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে শুরু করে। সূত্রমতে, হোসেইন শমখানি, যিনি তেল বাণিজ্য চক্রে ‘হেক্টর’ নামে পরিচিত, মিলাভাউসের মূল চালিকাশক্তি।
দুবাই থেকে পরিচালিত এই কোম্পানি ইরান, রাশিয়া ও অন্যান্য দেশ থেকে তেল সংগ্রহ করে। এরপর সেই তেল বৈশ্বিক বাজারে বিক্রি করে বিপুল আয় করছে। মিলাভাউসের কাজের অন্যতম কৌশল হলো তেলের উৎস পরিবর্তন করে তা পুনরায় ব্র্যান্ডিং করা। যার ফলে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এড়াতে সহায়ক হয়।
প্রভাব ও এড়ানোর কৌশল
শমখানির পরিচালিত নেটওয়ার্ক ইরানের অন্যতম বৃহৎ তেল বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এড়াতে এটি আইনগত ফাঁক, কৌশলগত অংশীদারিত্ব এবং শেল কোম্পানির বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে। যদিও শমখানি নিজে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার অধীনে নন, তবুও তার পরিচালিত বেশ কয়েকটি জাহাজ মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। তবে তার অপারেশনের ব্যাপকতা ৬০টিরও বেশি জাহাজ নিয়ে গঠিত। মার্কিন কর্তৃপক্ষের পক্ষে সম্পূর্ণরূপে তার নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
বৈশ্বিক প্রসার
মিলাভাউসের নেতৃত্বে শমখানি তার তেল ব্যবসা চীনের সিনোপেক, চেভরন এবং বিপি'র মতো বৈশ্বিক জ্বালানি জায়ান্টদের কাছেও সরবরাহ করেছেন বলে ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এই কোম্পানিগুলো দাবি করেছে যে, তারা প্রাসঙ্গিক সব আইন ও নিষেধাজ্ঞা মেনে চলে।
মার্কিন সরকার শমখানির কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে, তবে এটি সহজ নয়। কারণ, এর প্রভাব বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে যখন মার্কিন নির্বাচনী বছরে জ্বালানি মূল্যের উপর নজর রাখা হচ্ছে। ইরানের তেল রপ্তানি থেকে প্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার আয় হয়, যা বাধাগ্রস্ত হলে বিশ্বজুড়ে তেলের বাজারে প্রভাব পড়তে পারে। সূত্র : এনডিটিভি
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল