অবৈধ অভিবাসনে রাশ টানতে সরকার ও প্রধান বিরোধী শিবির যে আলোচনা প্রক্রিয়া শুরু করেছে, বিরোধীরা তা বর্জন করছে। জার্মানির প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যেও সীমান্তে কড়া নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অসন্তোষ বাড়ছে।
অবৈধ অভিবাসন কমাতে মরিয়া জার্মান সরকার প্রধান বিরোধী ইউনিয়ন শিবিরের সঙ্গে ঐকমত্যের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের উদ্যোগ নিতে চেয়েছিল। বিরোধীরাও ‘দেশের স্বার্থ’ সামনে রেখে সরকারের সঙ্গে আলোচনার পথ বেছে নিয়েছিল।
চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস ইউনিয়ন শিবির ও দেশের ১৬টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক আলোচনার আয়োজন করেছিলেন। সরকারের প্রথম দফার কিছু প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছিল। সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেসার স্থলসীমান্তে কড়া নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর মঙ্গলবার বিরোধীদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সরকারের তীব্র সমালোচনা করে সিডিইউ ও সিএসইউ দল আলোচনা ছেড়ে চলে গেছে। ফলে রাজনৈতিক আশ্রয় ও অবৈধ অভিবাসন নীতি আরও কড়া করার উদ্যোগ নিয়ে ঐকমত্যের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়লো।সিডিইউ দলের নেতা ফ্রিডরিশ ম্যারৎস বলেন, তারা সীমান্তে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন সার্বিকভাবে নাকচ করার যে মূল দাবি জানিয়েছিলেন, শলৎসের জোট সরকার তা মানতে প্রস্তুত নয়। ফলে সেই প্রশ্নে ঐকমত্য সম্ভব হয়নি। আলোচনায় দলের প্রধান প্রতিনিধি বলেন, সরকার শুধু স্থলসীমান্তে আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়া আশ্রয়প্রার্থীদের দ্রুত ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিচ্ছে। আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা কমানোর কোনো চেষ্টা করছে না। সিডিইউ দল জাতীয় স্তরে জরুরি অবস্থা ঘোষণার যে দাবি জানিয়েছে, সরকার তাও নাকচ করে দিয়েছে।
শলৎস উলটে ম্যারৎসের সমালোচনা করে বলেন, সিডিইউ নেতা যে খোলা মনে মধ্যপন্থা অর্জনের জন্য প্রস্তুত নন, তা আলোচনার আগেই তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তিনি বিরোধী নেতার চারিত্রিক দৃঢ়তা ও সততার অভাবের সমালোচনা করেন। তার মতে, নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্যই হলো আপোশ করার প্রস্তুতি।
পূবের ব্রান্ডেনবুর্গ রাজ্যে নির্বাচনের ঠিক আগে জার্মানির সরকারি জোট ও প্রধান বিরোধী শিবিরের তৎপরতা ভোটারদের মনে কতটা প্রভাব ফেলছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। পশ্চিমের সোলিঙেন শহরে ছুরিকাঘাতের ঘটনার পর অবৈধ অনুপ্রবেশ ও অপরাধের বিষয়টি অন্য দুটি রাজ্যের নির্বাচনের উপর যে গভীর প্রভাব ফেলেছিল, তা ফলাফলেই স্পষ্ট দেখা গেছে। চরম দক্ষিণপন্থিদের বিপুল সাফল্য মূল স্রোতের রাজনৈতিক দলগুলিকে কড়া অবস্থান নিতে কার্যত বাধ্য করছে।
অবৈধ অভিবাসন ও আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়া আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে অপরাধের প্রবণতা জার্মানির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে উত্তাল করে তুললেও ইউরোপীয় স্তরে বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তি বাড়ছে। শলৎসের সরকার একতরফাভাবে সীমান্তে কড়া নিয়ন্ত্রণ চালু করার ঘোষণা করেছে, জার্মানির একাধিক প্রতিবেশী দেশ সে বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছে। অস্ট্রিয়া ও পোল্যান্ড সরাসরি জার্মানির সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছে। জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিয়ম লঙ্ঘন না করেই আপাতত ছয় মাসের জন্য সীমান্তে কিছু কড়া পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, জার্মানি আগের মতোই প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে নিবিড় সহযোগিতার উপর নির্ভর করে আছে।
সূত্র : ডয়চে ভেলে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত