শিরোনাম
২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ২০:৫০

যাচ্ছে বাংলাদেশের ইলিশ, খুশির আমেজ পশ্চিমবঙ্গে

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

যাচ্ছে বাংলাদেশের ইলিশ, খুশির আমেজ পশ্চিমবঙ্গে

ফাইল ছবি

দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর অবশেষে পশ্চিমবঙ্গে যাচ্ছে বাংলাদেশের সুস্বাধু ইলিশ। আর তাতেই খুশির আমেজ পশ্চিমবঙ্গের মৎস্যজীবীদের মধ্যে।

আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে শনিবার ভারতে তিন হাজার টন ইলিশ মাছ রফতানির অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সুলতানা আক্তার স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়েছে, আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে বিভিন্ন রফতানিকারকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে নির্ধারিত শর্তাবলীপূরণ সাপেক্ষে তিন হাজার মেট্রিকটন ইলিশ মাছ রফতানির অনুমোদন দেওয়া হলো।

ই-মেইল মারফত কলকাতার ‘ফিস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন’কে বিষয়টি জানিয়েও দেওয়া হয়েছে। আর এরপরই খুশির আমেজ পশ্চিমবঙ্গের মৎস্য ব্যবসায়ীদের মধ্যে। 

শনিবার ‘ফিস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন’ এর সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মাকসুদ বলেন, “আমরা প্রত্যেক বছর পুজার আগে একটা চিঠি দিয়ে থাকি। যেখানে ইলিশ পাঠানোর জন্য আবেদন জানানো হয়। চলতি বছরেও গত ৯ সেপ্টেম্বর একটা আবেদন করেছিলাম। আমরা দেশটির সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতে ই-মেইল মারফত আবেদন পাঠিয়েছি, যাতে প্রত্যেক বছরের মত এবছরও পূজা উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকার আমাদের ইলিশ পাঠায়। কিন্তু সেই চিঠির পর আমরা বেশ কিছু নেতিবাচক রিপোর্ট পাই এবং তাতে কিছুটা হতাশ হয়ে পড়ি। আমরা ভেবেছিলাম এ বছর হয়তো ইলিশ আসবে না। যাইহোক আজকে সেই সুখবরটা এলো। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, আমাদেরকে তিন হাজার মেট্রিক টন ইলিশ দেওয়া হবে।”

এরপরই তিনি বলেন, “আমরা খুবই খুশি যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার থেকে আমরা এটা আদায় করতে পারলাম। কারণ আমাদের অতটা আশা ছিল না। কারণ আগের সরকারের সরে যাওয়া, তারপরে নতুন করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন, সব মিলিয়ে তারাও খুব ব্যস্ততার মধ্যে ছিল। তারপরও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বলে কথা- যেটা দু’দেশের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমন এক পরিপ্রেক্ষিতে ওরা যে আমাদের ইলিশ দিয়েছে সেটাই খুব সুখবর।”

বাংলাদেশ সরকার যদি ২৫ তারিখ থেকে অনুমতি দেয় তবে ২৬ তারিখ থেকে মাছ পশ্চিমবঙ্গে ঢুকবে বলেও আশাবাদী মাকসুদ। সেক্ষেত্রে কলকাতার পাইকারি বাজারে ইলিশের দাম কেজি প্রতি ১৫০০ থেকে ১৬০০ রুপি হতে পারে বলেও আভাস দিয়েছেন তিনি।

গত কয়েক বছর ধরেই সৌজন্যের খাতিরে আগস্ট থেকে অক্টোবর-পুজা মৌসুমে ভারতকে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ইলিশ রফতানি করে আসছিল শেখ হাসিনা সরকার। যদিও কলকাতা ফিস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে যে পরিমাণ মাছ চেয়ে আবেদন জানানো হয়েছে, তার থেকে অনেক কম মাছ রফতানি হয়। ২০২১ সালে ৪৬০০ টন ইলিশ রফতানির অনুমতি থাকলেও রফতানি হয়েছিল মাত্র ১৩০০ মেট্রিক টন। শেষবার গত বছর ৩৯৫০ টন ইলিশ রফতানির অনুমতি থাকলেও পশ্চিমবঙ্গবাসী পেয়েছে মাত্র ১৩০০ মেট্রিক টন।
 
এই তারতম্যের কারণ নিয়ে মাকসুদ বলেন, “এক্ষেত্রে বিষয়টি নির্ভর করে মাছের ল্যান্ডিং এবং সময়সীমার উপর। মাছ যদি ভালো ল্যান্ডিং করে তবে ১৫-২০ গাড়ি ঢুকতে পারে। সেক্ষেত্রে দুই-এক গাড়ি হলে পুরো মাছ নাও ঢুকতে পারে। কারণ একটি গাড়িতে পাঁচ থেকে ছয় টন মাছ বহন করা যায়। সেই কারণে গত কয়েক বছর ধরে আমাদের চাহিদা অনুযায়ী মাছ পাচ্ছি না।”

তিনি এও বলেন, “২০১২ সাল থেকে ইলিশ রফতানির উপরে একটা নিষেধাজ্ঞা ছিল। যদিও বিশেষ অনুমতি নিয়ে পূজা মৌসুমে নির্দিষ্ট পরিমাণ ইলিশ দিচ্ছে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। আগামী দিনে বাংলাদেশ সরকারকে একটি চিঠি দিয়ে জানানো হবে যে, ২০১২ সাল থেকে যে নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে সেটা যেন তুলে নেওয়া হয়।”

ভারতে ইলিশ পাঠানোর কারণে বাংলাদেশে ইলিশের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে দাবি করা হলেও তা নস্যাৎ করেছেন সৈয়দ আনোয়ার মাকসুদ। তিনি বলেন, “এই দাবি কোনওমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এর কারণ আপনার অভ্যন্তরীণ মার্কেট যদি শক্তিশালী হয় তবে কেউ কোথাও রফতানি করবে না। তাছাড়া ভারতে যে পরিমাণ মাছ রফতানি করা হয়, সেটা কোনও গনণার মধ্যেই আসে না। তাই এটা কেবল রটনা ছাড়া আর কিছুই নয়।”

হাওড়া পাইকারি ফিস মার্কেটের মৎস্য ব্যবসায়ী চন্দন কুমার মন্ডল জানান, আমাদের সকলেরই মন খারাপ ছিল। গত পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশের আগের সরকার আমাদেরকে ইলিশ দিতো, কিন্তু চলতি বছরের প্রথম থেকে ইলিশ রফতানি না করার একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আজকে আমরা জানতে পারলাম পুজার মৌসুমে তিন হাজার টন ইলিশ ভারতকে দেবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এই রুপালি ইলিশের প্রতি সকলেরই একটা আগ্রহ থাকে, সেক্ষেত্রে মৎস্য ব্যবসায়ী হিসেবে আমরা খুব আনন্দিত।”

তিনি আরও জানান, “ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পশ্চিমবঙ্গে ইলিশ আসলেও বাংলাদেশের ইলিশ স্বাদ ও গন্ধে অতুলনীয়। ফলে এর চাহিদা সবসময়ই থাকে।”

বিডি প্রতিদিন/একেএ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর