৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১৬:০৫

সামরিক শক্তিতে ‘তিন ধাপ’ এগিয়ে থেকেও ইসরায়েলের চেয়ে কেন পিছিয়ে ইরান?

অনলাইন ডেস্ক

সামরিক শক্তিতে ‘তিন ধাপ’ এগিয়ে থেকেও ইসরায়েলের চেয়ে কেন পিছিয়ে ইরান?

ইসরায়েল-ইরান সংঘাত আবারও তুঙ্গে। মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে থমথমে পরিস্থিতি। ইরান সম্প্রতি ইসরায়েলে বড় ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। তবে হুমকি দিলেও ইসরায়েল এখনও পাল্টা ব্যবস্থা নেয়নি। ঠিক এই মুহূর্তে দাঁড়িয়েই অনেকের মনে হয়তো প্রশ্ন, সামরিক শক্তিতে এগিয়ে কারা? কাগজ-কলমের হিসাব বলছে সামরিক শক্তিতে ইসরায়েলের চেয়ে ইরান অন্তত ৩ ধাপ এগিয়ে আছে। তবে বাস্তব চিত্র ভিন্ন। এক বিশ্লেষণে সেটাই বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে সামরিক শক্তিতে এগিয়ে থেকেও মাঠ পর্যায়ের লড়াইয়ে কেন ইরান ইসরায়েলের চেয়ে পিছিয়ে থাকছে।

সামরিক শক্তিধর শীর্ষ ২০ দেশের মধ্যেই অবস্থান করছে ইরান ও ইসরায়েল। সামরিক সক্ষমতায় শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে র‍্যাঙ্কিংয়ে ইরানের অবস্থান ১৪তম আর ইসরায়েলের অবস্থান ১৭তম।

সেনার সংখ্যা

যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ‘ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (আইআইএসএস) এর ‘দ্য মিলিটারি ব্যালান্স ২০২৩’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানের সামরিক বাহিনীর সক্রিয় সদস্যসংখ্যা ৬ লাখ ১০ হাজার। এর মধ্যে ৩ লাখ ৫০ হাজার সেনাসদস্য, ১ লাখ ৯০ হাজার বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর সদস্য, ১৮ হাজার নৌসেনা, ৩৭ হাজার বিমানসেনা ও ১৫ হাজার বিমানপ্রতিরক্ষা সদস্য। দেশটির রয়েছে ৩ লাখ ৫০ হাজার রিজার্ভ সেনাও।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর সক্রিয় সদস্যসংখ্যা ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫০০। এর মধ্যে সেনাবাহিনীর সদস্য ১ লাখ ২৬ হাজার, নৌসেনা ৯ হাজার ৫০০ এবং বিমানবাহিনীর সদস্য ৩৪ হাজার। দেশটির রয়েছে ৪ লাখ ৬৫ হাজার রিজার্ভ সেনাও।

সামরিক ব্যয়

গবেষণাপ্রতিষ্ঠান স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) গত এপ্রিল মাসের তথ্যমতে, ইরান ২০২৩ সালে সামরিক খাতে ব্যয় করেছে ১০ দশমিক ৩ বিলিয়ন (১ হাজার ৩০ কোটি ডলার)। ২০২২ সালের তুলনায় এটি ০ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি।

একই সময়ে (২০২৩) ইসরায়েলের ব্যয় ছিল ২৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন (২ হাজার ৭৫০ কোটি ডলার)। এটি ২০২২ সালের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি। 

সমরযান

দ্য মিলিটারি ব্যালান্স ২০২৩ অনুযায়ী, ইরানের রয়েছে ১০ হাজার ৫১৩টি ট্যাংক, ৬ হাজার ৭৯৮টি কামান এবং ৬৪০টির বেশি সাঁজোয়া যান। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর রয়েছে ৫০টি হেলিকপ্টার, বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর রয়েছে আরও ৫টি।

বিপরীতে ইসরায়েলের রয়েছে প্রায় ৪০০ ট্যাংক, ৫৩০টি কামান ও ১ হাজার ১৯০টি সাঁজোয়া যান।

বিমানবাহিনীর যুদ্ধসরঞ্জাম

দ্য মিলিটারি ব্যালান্স ২০২৩ অনুযায়ী, ইরানের বিমানবাহিনীর রয়েছে ৩১২টি যুদ্ধবিমান, বিপ্লবী গার্ডের রয়েছে আরও ২৩টি। বিমানবাহিনীর রয়েছে ২টি জঙ্গি হেলিকপ্টার, সেনাবাহিনীর রয়েছে ৫০টি এবং বিপ্লবী গার্ডের ৫টি।

ইসরায়েলের রয়েছে ৩৪৫টি যুদ্ধবিমান ও ৪৩টি জঙ্গি হেলিকপ্টার।

নৌবাহিনীর সমরসরঞ্জাম

দ্য মিলিটারি ব্যালান্স ২০২৩ অনুযায়ী, ইরানের রয়েছে ১৭টি সাবমেরিন, ৬৮টি প্যাট্রল ও কোস্টাল কমব্যাটান্ট, ৭টি রণতরি, ১২টি ল্যান্ডিং শিপ, ১১টি ল্যান্ডিং ক্র্যাফট, ১৮টি লজিস্টিকস ও সাপোর্ট সরঞ্জাম।

ইসরায়েলের রয়েছে ৫টি সাবমেরিন ও ৪৯টি প্যাট্রোল ও কোস্টাল কমব্যাটান্ট।

 

আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা
দ্য মিলিটারি ব্যালান্স ২০২৩ অনুযায়ী, ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা মূলত নির্ভরশীল ‘আয়রন ডোম’-ব্যবস্থার ওপর। একেকটি আয়রন ডোম-ব্যবস্থায় থাকে একটি রাডার, যা সম্ভাব্য আঘাত হানা ক্ষেপণাস্ত্র বা অন্য বস্তুর গতি ও লক্ষ্যস্থল শনাক্ত করে। পরে নিয়ন্ত্রণকক্ষ হিসাবনিকাশ করে দেখে, এটি কোনো শহরের জন্য হুমকি কি না। হুমকি না হলে ওই ক্ষেপণাস্ত্র বা বস্তুকে ফাঁকা স্থানে পড়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়। আর হুমকি মনে হলে সেটি ভূপাতিত করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্দিষ্ট ইউনিট থেকে ছোড়া হয় ক্ষেপণাস্ত্র।

ইসরায়েলজুড়ে আছে ১০টি আয়রন ডোম ব্যাটারি। 

এদিকে ইরান গত ফেব্রুয়ারিতে স্বল্পপাল্লার আজারখশ (বজ্র) আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা মোতায়েন করেছে। এটি একটি ইনফ্রারেড শনাক্তকরণ ব্যবস্থা। সম্ভাব্য আঘাত হানা ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত ও তা প্রতিহত করতে এ ব্যবস্থায় যুক্ত আছে রাডার এবং ইলেক্ট্রো-অপটিক ব্যবস্থা। এটি যানবাহনের ওপরও স্থাপন করা যায়।

ইরানের আছে বিভিন্ন পাল্লার ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। এর মধ্যে আছে ৪২টির বেশ দূরপাল্লার রাশিয়ার তৈরি এস-২০০ ও এস-৩০০ এবং স্থানীয়ভাবে নির্মিত বাভার-৩৭৩; ৫৯টির বেশি মধ্যম পাল্লার যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এমআইএম-২৩ হক, এইচকিউ-২জে ও খোরদাদ-১৪। আছে চীন থেকে কেনা স্বল্পপাল্লার সিএইচ-এসএ-৪ ও ৯কে৩৩১ টর-এম১ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা।

ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) মিসাইল ডিফেন্স প্রজেক্টের দেওয়া তথ্য অনুসারে, ইরানের অস্ত্রভান্ডারে রয়েছে অন্তত ১২ ধরনের মধ্যম ও স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এগুলোর একটি টনডার ৬৯, এর পাল্লা ১৫০ কিলোমিটার। এ ছাড়া আছে খোরামশাহর ও সেজিল। এগুলোর পাল্লা ২ হাজার কিলোমিটার (১ হাজার ২৪৩ মাইল) পর্যন্ত।

অপর দিকে ইসরায়েলের রয়েছে অন্তত চার ধরনের স্বল্প ও মধ্যম এবং মধ্যবর্তী পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এর মধ্যে এলওআরএ ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ২৮০ কিলোমিটার (১৭৪ মাইল) ও জেরিকো-৩ ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ৪ হাজার ৮০০ কিলোমিটার (২ হাজার ৯৮৩ মাইল) থেকে ৬ হাজার ৫০০ কিলোমিটার (৪ হাজার ৩৯ মাইল)।

পারমাণবিক সক্ষমতা

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের মতে, ইসরায়েলের আনুমানিক ৯০টি পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্র রয়েছে।

এদিকে ধারণা করা হয়, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র নেই। তবে তার রয়েছে খুবই সমৃদ্ধ পারমাণবিক কর্মসূচি। দেশটি বেশ কিছু পারমাণবিক স্থাপনা ও গবেষণাকেন্দ্র পরিচালনা করছে।


বিডি প্রতিদিন/নাজমুল

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর