ফিলিস্তিনের যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকা এবং ইসরায়েলের প্রতিবেশী সিরিয়া ও লেবাননের কিছু এলাকায় ইসরায়েলি সেনারা অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান করবে। এমনই ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। তিনি বলেন, “ইসরায়েলি বাহিনী যেসব এলাকা দখল করেছে, সেগুলো আর ছাড়বে না।”
বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, এ ধরনের মন্তব্য গাজায় হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তি নিয়ে চলমান আলোচনা আরও জটিল করে তুলতে পারে।
বুধবার সন্ধ্যার আগের ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ২২ জন নিহত হয়েছেন বলে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান। নিহতদের মধ্যে এক শিশু রয়েছে, যার বয়স এক বছরেরও কম।
গত মাসে যুদ্ধবিরতি শেষ করার পর ইসরায়েল হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে নতুন করে সামরিক অভিযান শুরু করে। ইতোমধ্যে গাজার অর্ধেকেরও বেশি এলাকা দখলে নিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতির পরও কিছু এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করেনি ইসরায়েল। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে বিদ্রোহীরা ক্ষমতাচ্যুত করার পর, ইসরায়েল দক্ষিণ সিরিয়ায় একটি বাফার জোন প্রতিষ্ঠা করে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেন, “অতীতে যা ঘটত, তার বিপরীতে এবার (ইসরায়েলি সেনা) যেসব এলাকা দখল করেছে, তা আর ছেড়ে দেবে না। গাজা, লেবানন ও সিরিয়ায় শত্রু ও ইসরায়েলি সম্প্রদায়ের মাঝে বাফার হিসেবে সেনা অবস্থান করবে।”
ফিলিস্তিন, লেবানন ও সিরিয়া এই সেনা উপস্থিতিকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন ও সামরিক দখলদারিত্ব হিসেবে দেখছে। লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন জানান, ইসরায়েলের অব্যাহত উপস্থিতি লেবাননের সেনা মোতায়েনে বাধা সৃষ্টি করছে, যা যুদ্ধবিরতির চুক্তিভঙ্গ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বুধবার দক্ষিণ লেবাননে দুটি ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় দুজন নিহত হন। জাতিসংঘ জানায়, নভেম্বরের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় ৭০ জনের বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
হামাস জানিয়েছে, “ইসরায়েলের সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহার ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ছাড়া বাকি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে না।” এদিকে জিম্মিদের পরিবারের প্রধান সংগঠন বলেছে, “সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল জিম্মিরাই অগ্রাধিকার। বাস্তবে তারা ভূখণ্ড দখলকেই প্রাধান্য দিচ্ছে।” সংগঠনটি আরও জানায়, “একটি চুক্তির মাধ্যমে সব জিম্মির মুক্তি এবং যুদ্ধের অবসান—এটাই একমাত্র গ্রহণযোগ্য সমাধান।”
ইসরায়েল বলছে, হামাসের ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে তথাকথিত ‘নিরাপত্তা অঞ্চলে’ নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা জরুরি। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বিগত দেড় বছরে ইসরায়েলি হামলায় ৫১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
সূত্র: এএফপি, এপি
বিডিদ প্রতিদিন/আশিক