নথিপত্র নেই এবং পাকিস্তানে থাকার অস্থায়ী অনুমতি আছে- এমন আফগান নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে পাকিস্তান। বিশাল সংখ্যক আফগানকে ঠাঁই দিতে অপারগতা জানিয়েছে দেশটি।
নিরাপত্তা ইস্যু ও জনসেবার ওপর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান সরকার। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই আফগানদের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে পাকিস্তান ছাড়ার সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।
এ মাসে কমপক্ষে ১৯ হাজার ৫০০ আফগানকে পাকিস্তান থেকে প্রত্যাবর্তন করা হয়েছে। কমপক্ষে ৮০ হাজার ইতোমধ্যে পাকিস্তান ছেড়েছেন। প্রতিদিন ৭০০-৮০০ পরিবারকে প্রত্যাবর্তন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তালেবান সরকারের কর্মকর্তারা।
তারা আরও বলেন, তারা ধারণা করছেন কয়েক মাসের মধ্যে ২০ লাখ আফগানকে ফেরত পাঠানো হতে পারে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
উল্লেখ্য, শনিবার তালেবান সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে যান পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। সেখানে ওই প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেন তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি। পাকিস্তানে কমপক্ষে ৩৫ লাখ আফগান বসবাস করেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা। এর মধ্যে প্রায় ৭ লাখ মানুষ ২০২১ সালে পুনরায় তালেবান ক্ষমতায় আসলে আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে আসেন। যুগের পর যুগ ধরে চলা যুদ্ধে নাস্তানাবুদ আফগানিস্তান। কয়েক যুগ ধরে চলাকালীন যুদ্ধে সেখান থেকে আসা আফগানদের আশ্রয় দিয়েছে পাকিস্তান।
তবে পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, অতিরিক্ত শরণার্থীর কারণে সেখানে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এছাড়া জনসেবার ক্ষেত্রেও চাপ সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে সীমান্তে সংঘর্ষ বেড়েছে। পাকিস্তান এর জন্য আফগানিস্তানে অবস্থিত জঙ্গিদেরকে দায়ী করেছে। তবে তা প্রত্যাখ্যান করেছে তালেবান সরকার। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শনিবারের বৈঠকে দুই দেশের ‘পারস্পরিক স্বার্থের’ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এদিকে তোরখাম সীমান্তে পাকিস্তান থেকে বহিষ্কৃত কিছু আফগান বলছেন, তারা কয়েক যুগ আগে আফগানিস্তান ছেড়েছেন। সায়েদ রহমান নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমি আমার পুরো জীবনটাই পাকিস্তানে অতিবাহিত করেছি। এখানে বিয়ে করেছি। আমি এখন কী করব? তালেবান সরকারের অধীন জীবন কেমন হবে এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিন কন্যার পিতা সালেহ। তার মেয়েরা পাকিস্তানের পাঞ্জাবের স্কুলে পড়াশোনা করত। তবে আফগানিস্তানে ১২ বছরের বেশি বয়সী মেয়েদের পড়াশোনার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তালেবান সরকার। সালেহ বলেন, আমি চাই না আমার মেয়েরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হোক। তারা শিক্ষিত হোক। সবারই শিক্ষা গ্রহণের অধিকার আছে।
অন্য আরেক ব্যক্তি বলেন, আমার সন্তানরা কখনও আফগানিস্তান দেখেনি। আমি নিজেও জানি না দেশটি কেমন। আমাদের সেখানে কাজ পেতে এক বছর বা তার বেশি সময় লাগতে পারে। নিজেদেরকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে।
পাকিস্তান থেকে ফেরত যাওয়া আফগানদের ৪ হাজার থেকে ১০ হাজার আফগানি মুদ্রা দিচ্ছে তালেবান কর্তৃপক্ষ। সূত্র: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/একেএ