শনিবার, ১৭ মে, ২০১৪ ০০:০০ টা
দিল্লিতে জল্পনা তুঙ্গে

ব্যর্থতার দায় নিয়ে ইস্তফা দিতে পারেন সোনিয়া-রাহুল

ব্যর্থতার দায় নিয়ে ইস্তফা দিতে পারেন সোনিয়া-রাহুল

দলের ভরাডুবির দায় নিয়ে এবার কংগ্রেস সভানেত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন সোনিয়া গান্ধী। মায়ের পথ ধরে দলের সহ-সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিতে পারেন রাহুল গান্ধীও। আগামী সোমবার দলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন মা ও ছেলে। যদিও কংগ্রেস নেতৃত্ব সোনিয়া কিংবা রাহুল গান্ধীর ইস্তফা গ্রহণ করতে রাজি নয়। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে গান্ধী পরিবার ছাড়া কংগ্রসকে এই মুহূর্তে এগিয়ে নিয়ে যাবে এমন কোন বড় নেতা কংগ্রেস নেই। অন্যদিকে রাহুলের নেতৃত্ব নিয়েও বারংবার প্রশ্ন উঠেছে। সেখানে দাঁড়িয়ে রাহুলকে রেখে দেওয়াটা কতটা ঠিক হবে এটাই এখন লাখ রুপির প্রশ্ন।

২০০৪ সালে প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে সাফল্যের থেকে ব্যর্থতাই বেশি রাহুলের ঝুলিতে। রাহুলের নেতৃত্বে ২০০৭ সালে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করে কংগ্রেস পেয়েছিল মাত্র ২২টি আসন, আগের নির্বাচনের তুলনায় ৩টি কম। ২০১০ সালে বিহার বিধানসভায় রাহুলের পরামর্শেই একা লড়াই করেছিল কংগ্রেস, ঝুলিতে এসেছিল মাত্র ৪টি আসন, আগের নির্বাচনে থেকে ৫টি কম। একমাত্র ব্যতিক্রম ২০০৯ সালে লোকসভা নির্বাচন। উত্তরপ্রদেশের ৮০টি আসনের মধ্যে ২১টি আসনে জয় পেয়েছিল কংগ্রেস, তাও আনুপাতিক হার খুবই কম। এমতাবস্থায় দলকে জেতানোর কারিশমা যুবরাজের কোথায়?

রাহুলের নেতৃত্বেই সাড়ে চার মাস আগে ভারতের চার রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বড়সড় বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছিল। ছত্রিশগড়, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশে বিজেপির কাছে একপ্রকার নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে কংগ্রেসকে। দিল্লিতেও নবাগত আম আদমি পার্টির কাছে ধরাশায়ী হয়ে টানা ১৫ বছর পর ক্ষমতাহীন হয়েছিল শাসকদল। চার রাজ্যের সেই নির্বাচনী ফলকে সঙ্গী করেই লোকসভা নির্বাচনে নেমেছিল কংগ্রেস। কিন্তু সেই খাদ থেকে আর উঠতে পারল না।

এবারের নির্বাচনে বিজেপির অভূতপূর্ব সাফল্য ভারতের রাজনীতিতে একটা টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে। মোদি ঝড়ে ছোট ছোট আঞ্চলিক দলগুলির পাশাপাশি ১২৮ বছরের দল জাতীয় কংগ্রেসও যেভাবে কোমায় চলে গেল তা স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম। গোটা দেশে মাত্র ৪৩টি আসন পেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে কংগ্রেসকে। লাইন দিয়ে কংগ্রেসের একের পর এক মন্ত্রীরা গোহারা হেরেছেন। কংগ্রেসের এই ভরাডুবিকে ভূমিকম্পের সঙ্গে তুলনা করলেও হয়তো ভুল হবে না। জাতীয় কংগ্রেসের ইতিহাসে ৬২ বছরের নির্বাচনে এরকম দেউলিয়া ফল আগে কখনও হয়নি। এর আগে ১৫টি নির্বাচন হয়ে গেলেও ১০০ এর কম আসন পায়নি কংগ্রেস।

আর এরকম একটা ভরাডুবির পর অনিবার্যভাবেই আঙুল উঠেছে সেনাপতির দিকে। এবার রাহুলের গান্ধীর নেতৃত্বেই ভোটে লড়েছে কংগ্রেস। লড়াইটা দাঁড়িয়ে যায় নরেন্দ্র মোদি বনাম রাহুল গন্ধীর। দলের ভিতরেই সংশয় ছিল এবারের লড়াই অত্যন্ত কঠিন, রাহুল হয়তে এঁটে উঠবেন না। হলোও তাই। আর এটা আগে ভাগে আঁচ করতে পেরেই প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে আগাম ঘোষণায় দল বা সোনিয়া গান্ধী সায় দেননি। কিন্তু এত বড় ধাক্কা আসবে তা বোধহয় কল্পনা করতে পারেন নি দলের অতি বড় সমর্থকও। আর ফলাফল ঘোষণার পরই প্রশ্ন উঠে গেল রাহুল কি এবার নেতৃত্ব থেকে সরবেন?

সর্বশেষ খবর