শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা

বর্ধমান বিস্ফোরণ কান্ডে জড়িত জেএমবি

বর্ধমান বিস্ফোরণ কান্ডে জড়িত জেএমবি

বর্ধমান বিস্ফোরণ কান্ডের নেপথ্যে বাংলাদেশের সন্ত্রাসী সংগঠন জামাত-উল-মুজাহিদিন জড়িত বলে পরিস্কার করে জানিয়ে দিল ভারতের জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)।

আজ এক প্রেস বিবৃতি জারি করে এনআইএ-এর তরফে জানিয়ে দেওয়া হয় এই বিস্ফোরণ কান্ডে অভিযুক্তরা এই সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য।

গত ২ রা অক্টোবর বর্ধমান জেলার খাগড়াগড়ে একটি বাড়িতে বিস্ফোরণে শাকিল আহমেদ এবং শোবহান মন্ডল নামে ২ ব্যক্তির মৃতু্য হয়। গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আবদুল হাকিম। ওই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে দুই মহিলা সহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য রাজিয়া বিবি (মৃত শাকিলের স্ত্রী) এবং আমিনা বিবি (হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আবদুল হাকিমের স্ত্রী)। ধৃতদের জেরা করেই এই বিস্ফোরণ কান্ডে জামায়াত-ইসলামের সহযোগী সংগঠন জেএমবি যোগ থাকার বিষয়টি স্পষ্ট হয়। তদনে্ত নেমে খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণস্থল এবং পাশের অঞ্চল থেকে প্রচুর হাত গ্রেনেড, বিস্ফোরক, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, নথিপত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ।

ওই জেলারই শিমুলিয়া মাদ্রাসা থেকেও উদ্ধার করা হয় তলোয়ার, ছুটি, এয়ারগানের গুলি, ফোন নম্বর, জেহাদি বক্তব্য সম্বলিত ডায়েরি, টেপ রেকর্ডার। তদন্তে নেমে এনআইএ-এর গোয়েন্দারা জানতে পারে খাগড়াগড়ে জেএমবি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি তাদের কাজকর্ম চালাতে প্রচুর রুপি খরচ করত। আর এই রুপি বাংলাদেশ থেকে হাওলার মাধ্যমে অসম হয়ে পশ্চিমবঙ্গে আসত। তারপর তা লাগানো হত বিস্ফোরক তৈরির কাজে। এরপর সেই বিস্ফোরক চোরাপথে বাংলাদেশে পাঠানো হত। গোয়েন্দারা এও জানতে পেরেছে পশ্চিমবঙ্গের মাটি ব্যবহার করে বাংলাদেশের মাটিতে নাশকতা সৃষ্টি করা এবং সেদেশের হাসিনা সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলতেও ছক কষেছিল। একইসঙ্গে ভারতের অন্যান্য রাজ্যে বিস্ফোরণ ঘটানোও তাদের লক্ষ্য ছিল। এনআইএ-এর বক্তব্য বর্ধমানের সন্ত্রাসী ডেরায় বসে যে 'বৃহত্তর ষড়যন্ত্র'-এর পরিকল্পনা করা হয়েছিল তা রীতিমতো ভাবাচ্ছে সবপক্ষকে।

এরপরই ঘটনার গুরুত্ব বিচার করে শুক্রবার বিস্ফোরনস্থল পরিদর্শনে আসেন দেশটির জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)-এর মহাপরিচালক (ডিজি) শরদ কুমার। এদিক সকাল এগারোটা নাগাদ তিনি কলকাতা থেকে হেলিকপ্টারে যান বর্ধমান জেলায়। প্রথমে তিনি জেলা পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলার পর খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণস্থলটি পরিদর্শনে শরদ কুমার। শরদ কুমারের সঙ্গে ছিলেন এনআইএ-এর আইজি সঞ্জীব কুমার সিং এবং এসপি বিক্রম খারাটে। প্রায় পনেরো মিনিট সেখানে কাটিয়ে বাদশাহী রোডে অবস্থিত এই ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তি শেখ রেজাউলের বাড়িতে যান তিনি। ওই জেলারই শিমুলিয়া মাদ্রাসাও পরিদর্শন করেন তারা। বর্ধমানের পরই তারা উড়ে যান মুর্শিদাবাদ জেলায়। সেখানে মৃত শাকিল গাজি'র ভাড়া বাড়িটি পরিদর্শন করেন। 'বোরখা হাউজ' নামে শাকিলের একটি দোকানও ঘুরে দেখেন শরদ কুমার।

বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শন করে এদিন সন্ধ্যেবেলাতেই কলকাতায় তদন্তকারী অফিসারদের সঙ্গে বৈঠক সেরে কেন্দ্রকে একটি প্রাথমিক রিপোর্ট পাঠান এনআইএ-ডিজি শরদ কুমার। কেন্দ্রকে পাঠানো সেই রিপোর্টে যথেষ্ট উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। এরপরই বর্ধমান বিস্ফোরণ কান্ডের গতিপ্রকৃতি খতিয়ে দেখতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলকে পশ্চিমবঙ্গে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় সরকার। আগামী সোমবারই তিনি রাজ্যে পা রাখছেন। তাঁর সঙ্গে থাকছেন দেশটির এলিট বাহিনী ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড (এনএসজি)-র প্রধান জয়ন্ত নারায়ন চৌধুরী। এছাড়াও ওই দলে থাকবেন ভারতের গুপ্তচর সংস্থা রিসার্চ অ্যানালিসিস উইং (র) এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি)-এর উচ্চপদস্থ কর্তারা। ঐদিনই বর্ধমান জেলার খাগড়াগড় বিস্ফোরণস্থল সহ একাধিক জায়গা পরিদর্শন করবেন।

বিডি-প্রতিদিন/ ২৪ অক্টোবর, ১৪/ সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর