শিরোনাম
রবিবার, ৫ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

\\\'ঋণের শর্ত\\\' প্রশ্নে গ্রিসে আজ গণভোট

\\\'ঋণের শর্ত\\\' প্রশ্নে গ্রিসে আজ গণভোট

অান্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের আরোপিত কড়া শর্তের বিষয়ে নিজেদের হ্যাঁ বা না সিদ্ধান্ত জানাতে গ্রিসে আজ রবিবার গণভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই গণভোট নিয়ে দৃশ্যত বড় বিভক্তি তৈরি হয়েছে গ্রিকদের মধ্যে। শুক্রবার রাজধানীতে প্রতিদ্বন্দ্বী দুটি পক্ষের বড় ধরনের সমাবেশে হাজার হাজার লোক অংশ নেয়। প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সি সিপ্রাস অবশ্য গণভোটে 'না' ভোট দিয়ে দেশকে ইজ্জতহানি থেকে বাঁচাতে তার দেশের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বর্তমানে দেশটির ঋণের পরিমাণ ৩২ হাজার ৩০০ কোটি ইউরো। ৬০ শতাংশ ঋণ নেয়া হয়েছে ইউরোজোনের বিভিন্ন দেশ থেকে। আইএমএফের ঋণের পরিমাণ ১০ শতাংশ।

গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সি সিপ্রাসের 'না’ ভোটের সমর্থনে ডাকা সমাবেশের পাশাপাশি ঋণের শর্তে প্রশ্নে 'হ্যাঁ ভোটের সমর্থকরাও একটি সমাবেশ করেছে। তাদের বক্তব্য, গ্রীসকে ইউরোজোনে রাখতে হলে হ্যাঁ ভোটের বিকল্প নেই।

দুই পক্ষের বিক্ষোভকালে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে পুলিশ ও তরুণ বিক্ষোভকারীরা। এ সময় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ পেপার স্প্রে ব্যবহার করে। অন্যদিকে, বিক্ষোভাকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোঁড়ে এবং পার্লামেন্ট ভবনের সামনে কিছু স্থাপনায় হামলা চালায়।

গ্রিসের একটি আদালত গণভোটের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একটি পিটিশন খারিজ করে দিয়ে বলেছে, গণভোট হতে পারে। গ্রিসের চলমান অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কর্মসূচি মঙ্গলবার শেষ হচ্ছে। এ সময় পর্যন্ত সকল ব্যাংক বন্ধ থাকছে এবং এটিএম বুথ থেকে মাত্র ৬০ ইউরো তোলা যাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের সঙ্গে কয়েক মাস ধরে গ্রিসের অচলাবস্থা চলছে। দেনায় ডুবে থাকা গ্রিস ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফের) ঋণের ১৬০ কোটি ইউরোর কিস্তি দিতে ব্যর্থ হয়েছে। যে কারণে দেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঋণ-খেলাপি। অন্যদিকে, গ্রিসের জন্য আন্তর্জাতিক আর্থিক উদ্ধার প্যাকেজের (বেইলআউট) চুক্তির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। নতুন করে ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে ঋণদাতারা গ্রিসকে কর বাড়ানোর পাশাপাশি জনকল্যাণমূলক ব্যয় কমানোসহ কঠিন আর্থিক পুনর্গঠনের কড়া শর্ত আরোপ করেছে। কিন্তু দেশটির বামপন্থী সরকার ঋণদাতাদের কড়া শর্তে ঋণ নিতে রাজি নয়। এ অবস্থায় ঋণ দাতাদের শর্তের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গণভোটের আয়োজন করেছে দেশটি। এই গণভোটের উপরই সব কিছু নির্ভর করছে।

ইতিমধ্যে গণভোটের পক্ষ-বিপক্ষ তৈরি হয়েছে। সময় যতই গড়াচ্ছে উভয় পক্ষ নিজেদের দিকে ভোটার টানতে তত্পর রয়েছে। গণভোটের পক্ষে-বিপক্ষে ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’ ভোটের পোস্টার লাগানো হয়েছে। গণভোট নিয়ে এথেন্স পত্রিকা শুক্রবার এক জনমত জরিপ চালায়। এতে দেখা যায় ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’র পক্ষে প্রায় সমান সমান ভোটার রয়েছে। হ্যাঁ এর পক্ষে ৪৪ দশমিক ৮ শতাংশ ও না এর পক্ষে ৪৩ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পড়ে। তবে ভোটের ২৪ ঘণ্টা আগে সব ধরনের জনমত জরিপ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

শুক্রবার এথেন্সের সমাবেশে ২৫ হাজার থেকে ৫০ হাজারের মত লোক জড়ো হয়েছিল। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যানুযায়ী, ‘না’ ভোট সমর্থনকারীদের সমাবেশ বড় ছিল। রাজধানী ছাড়াও গ্রিসের অপর ১০টি নগরীতে উভয় পক্ষের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার রাতে এক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী সিপ্রাস বলেন, গ্রিসের মর্যাদা রক্ষা করা প্রয়োজন এবং বুক ফুলিয়ে ‘না’ ভোট দেয়া উচিত। তিনি বলেন, এটা কোন বিক্ষোভ নয়। এটা ভয় ও ব্লাকমেইল কাটিয়ে ওঠার উত্সব। সিপ্রাস মর্যাদা সহকারে ইউরোপে বসবাস করার জন্য গ্রিসবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ‘হ্যাঁ’ ভোটের অর্থ ইউরোপ ত্যাগ এটা তিনি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমরা তাদের ইউরোপকে ধ্বংস করার অনুমতি দিতে পারি না। ‘না’ ভোট দেয়ার মাধ্যমে তিনি তার হাতকে শক্ত করার আহ্বান জানান। যাতে ঋণদাতাদের সঙ্গে আলোচনা করে তুলনামূলক কম শর্তে বেশি আর্থিক প্যাকেজ পাওয়া যায়।

আর কয়েক শ’ মিটার দূরে হ্যাঁ ভোটের সমর্থকরা জানান, তারা ইউরো থেকে বেরিয়ে যাবে না বলে যে ভান করছে তা তারা করতে পারে না। আর ইউরো থেকে বেরিয়ে গেলে দুর্দশার অন্ত থাকবে না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, গণভোট খুবই ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত। ইতিমধ্যে গণভোটকে কেন্দ্র করে গ্রিস বিভক্ত হয়ে গেছে। বছরের পর বছর মজুরি ও পেনশন কমানোয় বিরক্ত অনেক গ্রিক বলছেন, যথেষ্ট হয়েছে। তারা ইউরোজান থেকে বেরিয়ে তাদের আগের নিজস্ব মুদ্রায় ফিরে যেতে চায়। অন্যদিকে অনেকেই চাইছে ইউরোকে ধরে রাখতে।

গ্রিসের গণভোটের দিকে নজর রয়েছে সারা বিশ্বের। কারণ এর কম-বেশি প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে পড়বেই। বর্তমানে গ্রিসের ঋণের পরিমাণ প্রায় ৩২৩ বিলিয়ন ইউরো। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ ঋণ নিয়েছে ইউরোজোনের দেশগুলো থেকে। আইএমএফের ঋণের পরিমাণ ১০ শতাংশ। ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক থেকে নেয়া হয়েছে প্রায় ৬ শতাংশ ঋণ। ১৫ শতাংশ আছে বন্ড। বাকি ৯ শতাংশ গ্রিসের নিজস্ব ব্যাংক, বিদেশি ব্যাংক ও অন্যান্য ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের।

গ্রিসের 'না’' ভোটের পক্ষেই মত দিয়েছেন নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিজত্ এবং পল ক্রুগম্যানের মতো অর্থনীতিবিদরা। তাদের আশঙ্কা, আবার ব্যয় কাটছাঁটের শর্তগুলো মানলে গ্রিসের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। কারণ বিগত পাঁচ বছরে ব্যয় হ্রাসের পর গ্রিসের মোট অভ্যন্তরীণ উত্পাদন (জিডিপি) প্রায় ২৫ শতাংশ কমে গেছে। তার থেকে ইউরো ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে নিজের মুদ্রায় ফিরে গেলে গ্রিসের সুবিধা হবে বলেই তাদের মত। তবে এক্ষেত্রে মুদ্রার অবমূল্যায়ন হলে গ্রিসের রফতানি ক্ষেত্রে বিকাশের সম্ভাবনা থাকবে। তাই প্রাথমিকভাবে অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উপরে চাপ পড়লেও গ্রিসের দীর্ঘমেয়াদি লাভ হবে।

তবে গণভোটের পর ইউরো ব্যবস্থা আদৌ বজায় রাখা সম্ভব কিনা তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও ঋণদাতাদের এখনো আশা শেষ পর্যন্ত গ্রিস ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে যাবে না। খবর : বিবিসি ও সিএনএন'র।

বিডি-প্রতিদিন/৫ জুলাই ২০১৫/শরীফ

সর্বশেষ খবর