আমাদের খুব কাছের গ্রহ। যার মাটি গোলাপি। সেই মঙ্গলগ্রহে এক সময় ছিল আর্দ্র ও গরম। দীর্ঘ নদী বয়ে যেত কুলু কুলু। জলে ভরা লেক আর সাগরও ছিল। এর এ অবস্থা আজ থেকে ‘মাত্র’ ৪৫ লাখ বছর আগে। যে পরিবেশ ছিল তা প্রাণের বসবাসের পক্ষে ছিল একেবারে উপযুক্ত। কিন্তু কী এমন হলো যে গোলাপি গ্রহ থেকে প্রায় হারিয়ে গেল নতুন প্রাণ সৃষ্টির সম্ভাবনাগুলো? মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা বলছে দোষটা আসলে এক ভয়ানক সৌর ঝড়ের। সৌর ঝড়ের দাপটে আস্তে আস্তে পাতলা হয় বায়ু স্তর। এরপর এটি হয়ে যায় একেবারে শুষ্ক ও ঠাণ্ডা। কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের মাভেন মিসনের প্রধান ব্রুস জাকোস্কি বলছেন, এ জন্যই এক সময় উষ্ণ এবং ভিজে মঙ্গলের চারপাশ আজ শুষ্ক আর শীতল। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ইতিহাসের ভাবনারও বহু আগে যে সময় প্রাণের আঁতুর ঘর হিসেবে আস্তে আস্তে জমাট বাঁধছে মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল তখনই ধ্বংস লীলা শুরু করে সেই সৌর ঝড়। সূর্যেরও তখন যুবক বয়েস। তেজও বেশি। তার বুকে তখন ঘন ঘন প্রবল ঝড়। তার একটিই ফাটল ধরাতে শুরু করে মঙ্গলের বায়ু মণ্ডলে। তারপর একের পর এক সৌর ঝড় আছড়ে পড়ছে মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে। কেড়েছে এর ঘনত্ব। মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলের ঠিক কী হয়েছিল, তা এখন জানতে পেরেছেন বলে দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার গবেষকেরা। গত এক বছর মঙ্গলের চার দিকে চক্কর কাটছে নাসার মহাকাশযান মাভেন। এটি মাপেছে মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরের আয়নের পরিমাণ। বোঝার চেষ্টা করেছে কীভাবে সৌর ঝড়ের প্রভাবে আস্তে আস্তে বায়ুমণ্ডল থেকে বিদায় নিয়েছে বহু গ্যাস। মাভেনের পাঠানো তথ্য বলছে, আজ হয়ত বায়ুস্তরের ক্ষয় অনেক ধীর হয়েছে। বিজ্ঞানীদের অনুমান এক সময় এ ক্ষয়ের হার অনেক বেশি এবং দ্রুত ছিল। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে গড়ে প্রতি সেকেন্ডে ১০০ গ্রাম করে ক্ষয় একদা পুরু বায়ুমণ্ডলকে এতটা পাতলা করে তুলেছে। এখন মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব পৃথিবীর এক শতাংশ মাত্র। গত মার্চ মাসে আরও একটি সৌর ঝড়ের মুখোমুখি হয় মঙ্গল। তখনই প্রথম বোঝা যায় কীভাবে এ ঝড়গুলো প্রভাব ফেলছে বায়ুমণ্ডলে, কমিয়ে দিচ্ছে নতুন প্রাণ সৃষ্টির সম্ভাবনা। ম্যাভেন নভোযানের সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মঙ্গলগ্রহের মেরুপ্রভা আর পৃথিবীর সুমেরু প্রভা প্রায় একই রকম। যখন সৌর ঝড় থেকে আসা চার্জিত কণা পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রে প্রবেশ করে এবং মেরুর দিকে পরিভ্রমণ করে বায়ুমণ্ডলের গ্যাসীয় কণার সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় তখন মেরুপ্রভা তৈরি হয়। কিন্তু মঙ্গলগ্রহে যেটুকু চৌম্বকক্ষেত্র অবশিষ্ট আছে সেখান থেকেই এর মেরুপ্রভার উৎপত্তি হয়। অর্থাৎ, মঙ্গলের মেরুপ্রভা বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এই গ্রহের আরও তথ্যের জন্য অপেক্ষা করছে বিজ্ঞানীরা। আলজাজিরা, সিএনএন।