ইউরোপের সঙ্গে ব্রিটেনের থাকা না থাকা নিয়ে অর্থাৎ ব্রেক্সিট বিষয়ে গত জুন মাসে দেশটিতে গণভোট হয়। তাকে ইইউয়ের সঙ্গে না থাকার পক্ষে ব্রিটিশরা রায় দেয়। এ রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন পদত্যাগ করেন। আর ব্রেক্সিটের পক্ষে থাকায় পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী হন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। কিন্তু গণভোটের এক মাস আগে বিনিয়োগকারী ব্যাংকারদের সঙ্গে এক বৈঠকে তেরেসা মে ব্যক্তিগতভাবে সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন যে ইউরোপ ছাড়ার পক্ষে ভোট দিলে দেশ থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো চলে যাবে। বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকসে বলা তার ওই মন্তব্যের রেকর্ডিং এসেছে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের হাতে। ফাঁস হওয়া এ রেকর্ডিং থেকে জানা যাচ্ছে, ব্রিটেনের ইইউ ত্যাগ নিয়ে অনেক উদ্বেগ ছিল তার। ২৬ মে লন্ডনে ওই ব্যাংকে কথা বলার সময় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মে ইইউতে থাকার অর্থনৈতিক সুবিধাগুলো আরও স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেন। তিনি এও বলেছিলেন, ইউরোপে ব্রিটেনের নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করার সময় এসেছে। ভোটাররা অতীতের দিকে না তাকিয়ে ভবিষ্যতের দিকে দেখবে এমন আশা ব্যক্ত করেছিলেন তিনি। ব্যাংকারদের সঙ্গে এক ঘণ্টার ওই আলোচনায় তিনি ব্রিটিশ অর্থনীতিতে ব্রেক্সিটের প্রভাব নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি অর্থনৈতিক যুক্তিগুলো স্পষ্ট।
আমার বিবেচনায় ৫০০ মিলিয়ন বাণিজ্যিক ব্লকের অংশ হওয়াটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমনটা কিছুক্ষণ আগে বলছিলাম, অন্যতম একটা ইস্যু হলো অনেকে এখানে বিনিয়োগ করবে কেননা ইউকে ইউরোপের একটা অংশ। আমরা যদি ইউরোপে না থাকতাম তাহলে আমি মনে করি প্রতিষ্ঠানগুলো ভাবতো তারা কী ইউরোপে তাদের অবস্থান গড়ে তুলবে নাকি ইউকেতে। কাজেই আমি মনে করি, অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের সুনির্দিষ্ট নানা সুবিধা রয়েছে।’
সাম্প্রতিক সময়ে তেরেসা মে’র করা মন্তব্যের সঙ্গে ওই মন্তব্যগুলোর অনেক ফারাক। কনজারভেটিভ পার্টির কনফারেন্সে মে বলেছিলেন, তিনি সিঙ্গেল মার্কেটের অংশ হওয়ার তুলনায় অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে অগ্রাধিকার দিতে চান। তার বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, ‘সিঙ্গেল মার্কেটে বাণিজ্য করার ক্ষেত্রে ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানগুলোর সর্বোচ্চ স্বাধীনতার প্রয়োজন আছে। তবে সেটা অভিবাসন নিয়ে ফের নিজেদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নয় বা লুক্সেমবার্গের বিচারকদের রায় মেনে নিয়ে নয়।’ওদিকে, গোল্ডম্যান স্যাকসে মে বলেছিলেন, ইউরোপে থাকলেই ব্রিটেনের নিরাপত্তা সব থেকে বেশি ভালো থাকবে বলে তিনি মনে করেন। গণভোটের এক মাস আগের এসব মন্তব্য ফাঁস হওয়াটা প্রধানমন্ত্রীর জন্য বিব্রতকর হয়ে উঠতে পারে।