মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ‘আরব বসন্ত’ নামে পরিচিত গণআন্দোলনের কারণে ওই অঞ্চলে ৬১৪ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। জাতিসংঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর ওয়েস্টার্ন এশিয়া বলছে, ক্ষতির এই পরিমাণ ২০১১ থেকে ২০১৫ সালে মধ্যে ওই এলাকার মোট দেশজ উৎপাদনের ৬ শতাংশ। পুলিশের দুর্নীতি ও দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদে ২০১০ সালের ১৭ ডিসেম্বর নিজের গায়ে আগুন জ্বেলে বিপ্লবের দাবানল জ্বালেন ফেরিওয়ালা বাওয়াজিজি। এই বিদ্রোহের আগুন আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। তিউনিশিয়া, মিসর, লিবিয়া, ইয়েমেন, বাহরাইন থেকে সিরিয়া পুড়তে থাকে বিদ্রোহের আগুনে। বাধ্য হয়ে তিউনিশিয়ার স্বৈরশাসক জয়নাল আবেদিন বেন আলী ২০১১ সালের ১৪ জানুয়ারি পদত্যাগে বাধ্য হন। তাতে অবশ্য লাভ হয়নি দেশটির। এখন সেখানে লাখ লাখ মানুষ বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তিউনিশিয়ায় বিপ্লবের সফল পরিণতি উজ্জীবিত করে মিসরের সাধারণ মানুষকে। ২০১১ সালের ২৫ জানুয়ারি সে দেশেও বিপ্লবের আগুন জ্বলে ওঠে। কায়রোর তাহরির স্কয়ার পরিণত হয় মুক্তিকামী মানুষের জনসমুদ্রে। ১৮ দিনের টানা বিক্ষোভে প্রায় ৮৫০ জন মানুষের রক্ত ঝরিয়ে এই বিপ্লব সাফল্যের মুখ দেখে। ১১ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন হোসনি মোবারক। কিন্তু আরব বসন্তের পর ওই অঞ্চলে কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও শান্তি ফিরে আসেনি। আরব বসন্তের আগে ওই অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস এবং পরের চার বছরে অর্জিত প্রবৃদ্ধি বিচার করে ক্ষতির পরিমাণ হিসাব করেছে জাতিসংঘের সংস্থাটি। ওই অঞ্চলের যেসব দেশে আন্দোলন হয়নি, কিন্তু আরব বসন্তের কারণে শরণার্থী, রেমিট্যান্স ও পর্যটনের দিক দিয়ে যেসব দেশকে ভুগতে হয়েছে, তাদের ক্ষতির হিসাবও রয়েছে এর মধ্যে। একই সময়ে সিরিয়ায় শুরু হওয়া সরকারবিরোধী আন্দোলন এখন জটিল এক গৃহযুদ্ধের রূপ পেয়েছে, যেখানে জড়িয়ে গেছে বিভিন্ন পরাশক্তি। জাতিসংঘের হিসাবে ২০১১ সাল থেকে সিরিয়ার জিডিপি ও মূলধনী ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫০ বিলিয়ন ডলার। ইউএন ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর ওয়েস্টার্ন এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরব বসন্তের মধ্য দিয়ে যেসব দেশে ক্ষমতার পরিবর্তন হয়েছে, সে সরকারগুলো আন্দোলনের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়েছে দেশগুলো। বিবিসি।