অনেক জল্পনার পর অবশেষে কোরীয় জলসীমায় ঢুকে পড়েছে মার্কিন নৌবহর ইউএসএস কার্ল ভিনসন স্ট্রাইক গ্রুপ; যা কোরীয় উপদ্বীপে ক্রমে উত্তপ্ত হতে থাকা পরিস্থিতি আরও তিতিয়ে তুলল। গত পরশু উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, তাদের একটি বোমা-ই সমুদ্রে ডুবিয়ে দিতে পারবে মার্কিন রণতরীকে। গতকাল কিম আরও বলেন, তার সেনাবাহিনীর এই শক্তি আছে যে, মার্কিন রণতরী ডোবানোর সঙ্গে সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার রণতরীকে তারা ধূলিসাৎ করে দিতে পারবে। তবে মার্কিন নৌবহর কোরীয় উপদ্বীপে ঢোকার খবরে এবার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে চীন। আমেরিকা, জাপান, দুই কোরিয়াসহ সব পক্ষকে গতকাল সংযত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং।
আজ উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনীর ৮৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ ধরনের দিন পালনের অঙ্গ হিসেবে উত্তর কোরিয়া একাধিকবার পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বা ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। কিন্তু এবার তেমন কিছু হলে আচমকা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে বলে ওয়াকিবহাল মহলের আশঙ্কা। ইতিমধ্যেই পাঁচটি পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উন। একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উেক্ষপণও ঘটিয়ে চলেছেন তিনি। জাতিসংঘ এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার হুমকিও এসব পরীক্ষা থেকে ফেরানো যায়নি উত্তর কোরিয়াকে। খুব শিগগিরই ষষ্ঠ পরমাণু বিস্ফোরণটি ঘটানোর সব আয়োজন শেষও করে রেখেছেন তিনি। এ পরিস্থিতিতেই কার্ল ভিনসন স্ট্রাইক গ্রুপকে কোরীয় উপদ্বীপের দিকে যাওয়ার নির্দেশ দেন ট্রাম্প। কোরীয় উপদ্বীপে মার্কিন নৌবহরটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জাপানি দুটি যুদ্ধজাহাজও।
উত্তর কোরিয়াকে ভয় দেখাতে কোরীয় সমুদ্রসীমার খুব কাছে জাপানের সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়া শুরু করেছে মার্কিন নৌ-সেনা। গতকাল দক্ষিণ কোরিয়া জানিয়েছে, তাদের নৌ-সেনাও এই মহড়ায় অংশ নেওয়ার কথা ভাবছে। এদিকে উত্তর কোরিয়ার শাসক দল ওয়ার্কার্স পার্টির মুখপত্র রডং সিনমুনে লেখা হয়েছে, ‘আমেরিকার ক্ষিপ্ত হয়ে ছোটাছুটি করা উচিত নয় এবং খুব গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত তাদের সেনা নির্বোধের মতো কার্যকলাপ চালিয়ে গেলে ফল কতটা শোচনীয় হতে পারে।’ কার্ল ভিনসন স্ট্রাইক গ্রুপকে কোরীয় উপদ্বীপের দিকে পাঠানোর সিদ্ধান্তকে ‘চরম বিপজ্জনক পদক্ষেপ’ আখ্যা দিয়ে রডং সিনমুনে আরও লেখা হয়েছে, উত্তর কোরিয়া দখল করার লক্ষ্যে পরমাণু যুদ্ধ বাধানোর ছক কষা হচ্ছে।অস্ট্রেলীয় রণতরীতেও হামলার হুমকি : এবার অস্ট্রেলিয়াকে পারমাণবিক হামলার হুমকি দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। অন্যদিকে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে মহড়ার জন্য মার্কিন রণতরীর সঙ্গে জাপানের দুটি যুদ্ধজাহাজ যোগ দেওয়ার পর দেশটি বলেছে, সামরিক শক্তি দেখাতে প্রয়োজনে মার্কিন ওই রণতরীতে হামলায় প্রস্তুত তাদের বাহিনী। গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কেসিএনএতে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশপের বিষোদগার করা হয়। বিশপ বলেছিলেন, উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়া আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, উত্তর কোরিয়াকে বিচ্ছিন্ন করতে মার্কিন পদক্ষেপ অনুসরণ করলে ও প্রভু যুক্তরাষ্ট্রের গোলাম হয়ে থাকলে, অস্ট্রেলিয়া আমাদের কৌশলগত বাহিনীর পারমাণবিক হামলার ব্যাপ্তিতে পড়বে। গার্ডিয়ান ও রয়টার্স।
