শনিবার, ১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিত্তবানদের আস্থা কেন সুইস ব্যাংকে


বিত্তবানদের আস্থা কেন সুইস ব্যাংকে

সবচেয়ে বড় ব্যাংক ক্রেডিট সুইস

সুইস ব্যাংক নিয়ে গোটা বিশ্বেই উৎসাহ। সারা দুনিয়ার ধনী এবং বিখ্যাত লোকজন তাদের টাকা রাখার জন্য সুইস ব্যাংককেই পছন্দ করেন। কিন্তু কেন? এর প্রধান কারণ, গ্রাহকের গোপনীয়তা বজায় রাখার ক্ষেত্রে সুইস ব্যাংকগুলোর সুনাম। এজন্য সুইজারল্যান্ডে ৩০০-এরও বেশি ব্যাংক রয়েছে। ২০১৬ সালে এ সংখ্যা ছিল ২৬১। কোন সুইস ব্যাংকে কে কত অর্থ জমা রেখেছেন, সেই তথ্য সুইস ব্যাংক পারতপক্ষে ফাঁস করবে না। অ্যাসোসিয়েশন অব সুইস প্রাইভেট ব্যাংকার্সের প্রধান মিশেল ডি রবার্ট কয়েক বছর আগে বিবিসির কাছে ব্যাখ্যা করছিলেন কীভাবে এই গোপনীয়তার নীতি কাজ করে। তিনি বলেন, ‘একজন ডাক্তার বা আইনজীবী যেভাবে তার রোগী বা মক্কেলের গোপনীয়তা বজায় রাখেন, এখানেও ব্যাপারটা তাই। একজন সুইস ব্যাংকার তার গ্রাহকের কোনো তথ্য কাউকে দিতে বাধ্য নন, এটা রীতিমতো নীতি ও আইনবিরুদ্ধ।’ ঠিক এ কারণেই সুইজারল্যান্ড হয়ে উঠেছে বিশ্বের ব্যাংকিং সেবার এক বড় কেন্দ্র। ৩০০-এর ওপরে ব্যাংক এবং আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান আছে সেখানে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় দুটি ব্যাংক হচ্ছে ক্রেডিট সুইস ও ইউবিএস। এই গ্রাহকের গোপনীয়তা কীভাবে রক্ষা করে সুইস ব্যাংকগুলো? সিনেমা, থ্রিলার উপন্যাসে কিংবা মিডিয়ায় বহুল প্রচলিত একটি ধারণা হচ্ছে, সুইস ব্যাংকগুলোয় বেনামি বা অনামি (অ্যানোনিমাস) অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। কিন্তু বাস্তবে তা সত্য নয়। সুইস ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন তাদের সাইটে বলছে, অনামি অ্যাকাউন্ট বলে কিছু সুইজারল্যান্ডে নেই। কোনো ব্যাংক গ্রাহকের অ্যাকাউন্টটি হয়তো কেবল সংখ্যা দিয়েই চিহ্নিত করা থাকবে, কিন্তু এই গ্রাহকের আসল পরিচয় ব্যাংকের খুবই অল্প কয়েকজন কর্মকর্তা অবশ্যই জানবেন। বিশ্বের অনেক দুর্নীতিবাজ রাজনীতিক, ব্যবসায়ী বা নামকরা তারকা সুইস ব্যাংকে তাদের অর্থ পাচার করেছেন, এমন খবর বিগত দশকগুলোয় বহুবার গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সুইজারল্যান্ডের ওপর চাপ বেড়েছে এ রকম অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অনেকেই দাবি জানিয়েছে, সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোকে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের গ্রাহকদের তথ্য প্রকাশ করতে হবে। বাধ্য হয়ে তাতে নতি স্বীকার করতে            হয়েছে তাদের।

সুইস ব্যাংকের ইতিহাস : বলা হয়, ১৯৩০-এর দশকে জার্মানিতে যখন ইহুদিরা নািসদের শুদ্ধি অভিযানের মুখে পড়েন, তখন তাদের অর্থ গোপন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রাখার মাধ্যমে সুইস ব্যাংকগুলোর এই ব্যবসার শুরু। তবে তারও আগে সুইস ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের গোপনীয়তা রক্ষার আইন করে। এই গোপনীয়তা আইনের সুযোগে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলো ফুলে ফেঁপে ওঠে। তৃতীয় বিশ্বের দুর্নীতিবাজ স্বৈরশাসক থেকে শুরু করে ইউরোপ-আমেরিকার কর ফাঁকি দেওয়া বিত্তশালী ব্যবসায়ী, সবাই তাদের অর্থ গোপন রাখার জন্য বেছে নেন সুইস ব্যাংকগুলোকে। বিবিসি বাংলা।

সর্বশেষ খবর