শনিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

উত্তাল ফিলিস্তিন, নিহত ২

সারা বিশ্বে বিক্ষোভ পালন

উত্তাল ফিলিস্তিন, নিহত ২

ফিলিস্তিনিদের অস্ত্র বলতে গুলতি বা ঢিল। আর তাদের প্রতিরোধে ইসরায়েলের অস্ত্র ট্যাঙ্ক ও আধুনিক অস্ত্র। যা পুরোটাই অসম। তারপরও দমিয়ে রাখা যায়নি নিজের অধিকার আদায়ে সোচ্চার ফিলিস্তিনিদের —এএফপি

পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস শহর ও ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সংহতি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধিক্কার জানিয়ে  গতকাল সারা বিশ্বে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে।

এদিকে প্রতিরোধের আগুনে জ্বলছে ফিলিস্তিন। গতকাল পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমসহ বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় নেমে আসেন হাজার হাজার মানুষ। এ সময় নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে শুধু গাজা উপত্যাকায় কমপক্ষে দুই জন নিহত হয়েছেন। আহত হন আড়াই শতাধিক বিক্ষোভকারী। ফিলিস্তিন ছাড়িয়ে এই প্রতিরোধ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতেও।

জুমার নামাজকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের আশঙ্কায় ইসরায়েলি বাহিনী আগে থেকেই সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক অবস্থানে ছিল। এজন্য পশ্চিম তীরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত কয়েক হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়। তবে ইসলামের তৃতীয় পবিত্র স্থান জেরুজালেমের আল আকসা মসজিদে নামাজ আদায়ে কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি। এর আগে সকালে তেল আবিব থেকে জেরুজালেম ও পশ্চিম তীর অভিমুখী বেশকিছু যানবাহনে পাথর নিক্ষেপ করেন বিক্ষোভকারীরা। এ ছাড়া শুক্রবার থেকে নতুন ইন্তিফাদার ডাক দিয়েছে ফিলিস্তিনি মুক্তি আন্দোলনের সংগঠন হামাস। তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সির খবরে বলা হয়েছে, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে জুমার নামাজের পর বিক্ষোভে অংশ নেন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি। জুমার নামাজের পর পশ্চিম তীরের রামাল্লায় বে এইল সেনাঘাঁটি অভিমুখে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে শত শত ফিলিস্তিনি। বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে ইসরায়েলি বাহিনী।

সারা বিশ্বে বিক্ষোভ : গতকাল ভোরেই ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় মার্কিনবিরোধী বিক্ষোভ হয়। এর মধ্যে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে মার্কিন দূতাবাসের সামনে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করে এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের কুশপুত্তলিকা দাহ করে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক সব মুসলমানকে মার্কিন সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানিয়েছেন। ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার মার্কিন দূতাবাসের সামনে হাজারো মানুষ বিক্ষোভ করে। এ সময় তাদের হাতে নানা ধরনের প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন ছিল যাতে লেখা ছিল বায়তুল মুকাদ্দাস ইসরাইলের রাজধানী নয় এবং আমরা ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আছি। তিউনিশিয়ায়ও একই ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে। ইয়েমেনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সা’দা প্রদেশে হুথি আনসারুল্লাহ সংগঠন ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিশাল সমাবেশের আয়োজন করে। রাজধানী সানায়ও একই ধরনের বিক্ষোভ-সমাবেশের কথা রয়েছে। এ ছাড়া বিশ্বের অনেক শহরে গতকাল জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। এতে ধিক্কার জানানো হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে।

ট্রাম্পের ঘোষণা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী—ওআইসি : ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা বা ওআইসি বলেছে, ফিলিস্তিনের বায়তুল মুকাদ্দাস শহরকে ইহুদিবাদী ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতির বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে ঘোষণা দিয়েছেন তা আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ ছাড়া, ট্রাম্পের এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে বায়তুল মুকাদ্দাসে ইসরায়েলের দখলদারিত্বকে বৈধতা দেওয়া যাবে না বলেও উল্লেখ করেছে সংস্থাটি। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতির মাধ্যমে মুসলিম দেশগুলোর বৃহত্তম এ সংস্থা এসব কথা বলেছে। সংস্থাটি বলেছে, ১৯৬৭ সালের সীমানা অনুযায়ী বায়তুল মুকাদ্দাস হচ্ছে ফিলিস্তিনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

 রাশিয়ার হুঁশিয়ারি : ট্রাম্পের ঘোষণার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে রাশিয়া। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতি প্রকাশ করে এ হুঁশিয়ারি দিয়েছে। বিবতিতে বলা হয়েছে, বাইতুল মোকাদ্দাসকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সংকটের জন্ম দিয়েছেন।

জেরুজালেমে ১৪ হাজার বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা ইসরাইলের : ট্রাম্পের ঘোষণার পর সেখানে ১৪ হাজার নতুন বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা করছে ইসরাইল। এ খবর দিয়েছে দেশটির স্থানীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল। বলা হয়েছে, জেরুজালেমের উত্তরাঞ্চলে ৫ হাজার বসতি স্থাপন করা হবে। এ বসতিগুলো হবে রামাল্লার খুব কাছেই। এর মধ্যে পূর্ব জেরুজালেমে স্থাপন করা হবে ১ হাজার বসতি। এএফপি, বিবিসি, আলজাজিরা।

সর্বশেষ খবর