শিরোনাম
রবিবার, ১ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভে ইসরায়েলের বর্বরতা, নিহত ১৭

স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জাতিসংঘের

গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভে ইসরায়েলের বর্বরতা, নিহত ১৭

ফিলিস্তিনিরা লাশ নিয়ে গতকাল গাজায় বিক্ষোভ করে —এএফপি

গাজা উপত্যকার সীমান্ত বরাবর ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর চালানো গুলিতে কমপক্ষে ১৭ জন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ১ হাজার ৪০০ শ’র বেশি লোক। নিহতদের স্মরণে গতকাল একদিনের শোক পালন করে ফিলিস্তিনের কর্তৃপক্ষ। এদিকে প্রাণহানির ঘটনায় স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতেরেস। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি এ আহ্বান জানিয়েছেন। গুতেরেস বিবৃতিতে ‘এমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি না করতে আহ্বান জানিয়েছেন যা হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারে।’ ফিলিস্তিনের বিভিন্ন সংগঠনের ডাকে ‘গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন’ কর্মসূচির শুরুর দিন শুক্রবার এ সংঘর্ষ হয়। সীমান্ত বেষ্টনী বরাবর ৫টি জায়গায় সমবেত হয়ে ফিলিস্তিনিরা তাদের ভূমিতে ফেরার আকুতি জানায়, ১৯৪৮ সালে যা ইসরায়েলের দখলে চলে গিয়েছিল। ছয় সপ্তাহব্যাপী বিক্ষোভের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা সেখানে তাঁবু খাটিয়ে অবস্থান নিয়েছেন বলে স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বিবিসি। প্রথম দিনের বিক্ষোভে অন্তত ১৭ হাজার ফিলিস্তিনি অংশ নিয়েছে বলে ধারণা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর। তারা বলছে, দাঙ্গা শুরু হওয়ার পরই গুলি ছোড়া হয়েছে। নিউইয়র্কে তাত্ক্ষণিকভাবে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সভায় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলো গাজা সীমান্তে সংঘর্ষের ঘটনার স্বাধীন তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছে। ১৯৪৮ সালে শরণার্থী হওয়া লাখ লাখ মানুষকে ইসরায়েলের দখলে থাকা এলাকায় ফিরতে বাধা দেওয়ার প্রতিবাদে সীমান্ত বরাবর এ বিক্ষোভের ডাক  দেওয়া হয়েছে। শুরুর দিন হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে ৩০ মার্চকে; ১৯৭৬ সালের এই দিনে ভূমি দখলের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ছয় বিক্ষোভকারী নিহত হন। কর্মসূচি শেষ হওয়ার নির্ধারিত তারিখ ১৫ মে। ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ‘যুদ্ধে জড়ানোর উসকানি দিতেই’ এ বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়েছে। বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে  কোনো সহিংসতার জন্য হামাস এবং বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ফিলিস্তিনি সংগঠনগুলোই দায়ী হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে তেল আবিব। দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ঠেকাতে সেনারা কেবল সীমান্ত বেষ্টনী ভাঙার চেষ্টাকারীদের লক্ষ্য করেই গুলি ছুড়েছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ। ফিলিস্তিনিদের সীমান্ত থেকে দূরে সরিয়ে দিতে ইসরায়েল টিয়ার গ্যাস ব্যবহারের পাশাপাশি ট্যাংক এবং স্নাইপারও মোতায়েন করেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। প্রত্যক্ষদর্শীরা অন্তত একটি স্থানে কাঁদানে গ্যাস ফেলতে ইসরায়েলি বাহিনী ড্রোন ব্যবহার করেছে বলেও জানিয়েছে। সংঘর্ষে নিহতদের মধ্যে ১৬ বছরের এক বালক আছে বলে জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। তারা জানান, বিক্ষোভ শুরুর আগেই খান ইউনিস শহরের কাছে ২৭ বছর বয়সের এক কৃষকও ইসরায়েলি ট্যাংকের গোলায় নিহত হন। হতাহতের ঘটনার জন্য গতকাল জাতীয় শোক দিবস পালন করেছে  ফিলিস্তিন। হতাহতের ঘটনায় ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে দায় দিয়ে ‘ফিলিস্তিনি জনগণকে রক্ষায় এগিয়ে আসতে’ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। ২০০৭ সাল থেকে গাজা নিয়ন্ত্রণে রাখায় হামাস ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে নারাজ। শুক্রবারের বিক্ষোভেও দলটির নেতা ইসমাইল হানিয়া একই কথা বলেন। ‘আমরা ফিলিস্তিনি ভূমির এক কণাও ছাড়ব না। অন্যদিকে গাজা পরিস্থিতিতে কুয়েতের অনুরোধে শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদ জরুরি বৈঠকে বসে। কিন্তু বৈঠকে প্রাণহানির ঘটনায় প্রতিবাদ জানাতে ব্যর্থ হয় নিরাপত্তা পরিষদ। বিবিসি, এএফপি।

সর্বশেষ খবর