রবিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

ট্রাম্পের ‘গণশত্রুতার’ অভিযানের বিরুদ্ধে বসছে গণআদালত

ট্রাম্পের ‘গণশত্রুতার’ অভিযানের বিরুদ্ধে বসছে গণআদালত

গণআদালত

ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন-বিরোধী অভিযানকে ‘গণশত্রু’ হিসেবে অভিহিত করে সারা আমেরিকায় গণ-আদালত বসছে। এসব আদালতে আঞ্চলিক পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে। নির্বিচারে অভিবাসনের মর্যাদাহীনদের গ্রেফতার এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের কারণে পরিবার ভেঙে যাচ্ছে, জন্মগতভাবে আমেরিকানরা অভিভাবকহীন হচ্ছে বলে এসব আদালতে উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকেও গণ-আদালতে দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে।  ২৭ এপ্রিল শুক্রবার এমনি একটি আদালত বসেছিল নিউইয়র্ক সিটির বাংলাদেশি অধ্যুষিত চার্চ-ম্যাকডোনাল্ড সড়কদ্বীপে। জুমার নামাজ শেষে বিপুলসংখ্যক মুসল্লিও এতে অংশ নেন। ছিলেন জুইশ, খ্রিস্টান, স্প্যানিশরাও। সবাই ক্ষুব্ধ ট্রাম্পের এহেন আচরণে। গণ-আদালত বসিয়েছিল স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘দেশীজ রাইজিং আপ অ্যান্ড মুভিং’ তথা ড্রাম এবং ‘জুইশ ফর রেসিয়াল অ্যান্ড ইকনোমিক জাস্টিস’। এছাড়াও ছিল স্থানীয় কয়েকটি সামাজিক সংগঠন। প্রতীকী আদালতে নিউইয়র্কে আইস তথা ‘ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট’ এর পরিচালক থমাস আর ডেকার এবং উপ-পরিচালক স্কট মেকাওয়াস্কিকে অভিযুক্ত করা হয়। আইসের অভিযানে গ্রেফতার হওয়া বাংলাদেশি মোহাম্মদ ইসলামসহ ৩জন ভিকটিম অভিযোগ উত্থাপন করেন। নোয়াখালীর সন্তান মোহাম্মদ ইসলামের পক্ষে বলা হয়, দালালকে ৩০ হাজার ডলার প্রদানের বিনিময়ে ঢাকা থেকে দুবাই-ব্রাজিল-পেরু হয়ে বলিভিয়ায় পৌঁছার পর বিভিন্ন দেশের আরও ২০ জনের সঙ্গে মিলিত হই। সবারই গন্তব্য আমেরিকা। নিজ নিজ দেশে জুলুম-নির্যাতন অথবা বেকার জীবনে অতীষ্ঠ হওয়ায় সবাই স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় আসার চেষ্টা করি। বলিভিয়া থেকে দুর্গম পথে কলম্বিয়ায় পৌঁছি কোনো ধরনের খাবার ছাড়াই। এরপর শুরু হয় রাতের অন্ধকারে নৌকা দিয়ে ইকুয়েডরে প্রবেশের অভিযান। এরপর গভীর জঙ্গল পথে পানামা সীমান্ত অতিক্রম করতে হয় টানা ৫ দিন হেঁটে। এর কয়েক সপ্তাহ পর মেক্সিকো অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে পারলেও সীমান্ত রক্ষীর দৃষ্টির সীমা অতিক্রম করতে পারিনি। গ্রেফতারের সময়েই এসাইলাম প্রার্থনা করি। এরপর রাখা হয় ডিটেনশন সেন্টারে। টানা ৩ মাস অতিবাহিত হলো ডিটেনশন সেন্টারে। জানি না কবে মুক্তি পাব। ‘আইস অন ট্রায়াল ক্যাম্পেইন’ শীর্ষক এ কর্মসূচির আওতায় ভার্জিনিয়া, হিউস্টন, ডালাস, শিকাগো, লসএঞ্জেলেস, ফিলাডেলফিয়া, বস্টন, সানফ্রান্সিসকো, সিয়াটল, মায়ামী, আটলান্টা প্রভৃতি স্থানে গণ-আদালত বসেছে। আর এভাবেই সারা আমেরিকায় ট্রাম্প প্রশাসনের গণ-বিরোধী আচরণের বিরুদ্ধে জনমত সুসংহত করা হচ্ছে।  ব্রুকলীনের এই আদালতে প্রতীকী বিচারক ছিলেন নাঈম। দীর্ঘ শুনানি শেষে নাঈম তার মন্তব্যে উল্লেখ করেন, আইসের অমানবিক আচরণ নতুন কিছু নয়। এর সমর্থনে যথেষ্ট তথ্য-উপাত্তও পাওয়া গেছে। আজ আমরা এই গণ-আদালত থেকেও সত্যিকারের মতামত জানতে সক্ষম হলাম। জনতার আদালতই হচ্ছে গণতান্ত্রিক একটি সমাজের সর্বোচ্চ ফোরাম। তাই আমরা মার্কিন কংগ্রেসের প্রতি উদাত্ত আহ্বান রাখছি, জনতার মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটান। আইসের কোনো প্রয়োজন নেই। এখনি সেটি বিলুপ্ত করুন। অসহায় অভিবাসীদের ধরার পর ডিটেনশন সেন্টারে রাখা এবং সরকারি অর্থে নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দিতে বার্ষিক ৩ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করুন এবং এই অর্থ স্বল্প আয়ের লোকজনের কল্যাণে ব্যয় করার পদক্ষেপ নিন।’ জনতার এ আদালতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও বয়সের ৭০ জন অংশ নেন। তাদের মধ্য থেকে বলা হয় যে, নিরাপত্তার জন্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আগতদের গ্রেফতার-নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে, বহু বছর যাবত বসবাস করার ফলে এই সমাজের অংশে পরিণত হওয়া অভিবাসীদের বহিষ্কারের ফলে অরেক পরিবার ভেঙে যাচ্ছে, শিশু-কিশোররা অভিভাবকহীন হচ্ছে, গ্রেফতারের পর নিয়মিত খাবার দেওয়া দূরের কথা, অত্যাবশ্যকীয় চিকিৎসাও প্রদান করা হয় না। জনতার এ আদালত পরিচালকদের অন্যতম ‘ডিটেনশন ওয়াচ নেটওয়ার্ক’র সাংগঠনিক পরিচালক ডেনি সিন্ডারেজ বলেন, ‘আইস একটি সরকারি সংস্থা হিসেবে গ্রেফতারকৃতদের নির্যাতন ও কারও কারও মৃত্যুর দায় এড়াতে পারে না। এ আদালত মনে করছে, আইসের সব কর্মকাণ্ড জনসমক্ষে প্রকাশ পাওয়া উচিত। আইসের বর্বরোচিত আচরণ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’ ড্রামের নির্বাহী পরিচালক ফাহাদ আহমেদ সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান রেখেছেন, ‘অভিবাসন বিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার জন্যে।’ এনআরবি নিউজ।

সর্বশেষ খবর