রবিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

ইসরায়েলের গুলিতে ৪ ফিলিস্তিনি নিহত, আহত ৯৫০

ইসরায়েলের গুলিতে ৪ ফিলিস্তিনি নিহত, আহত ৯৫০

গাজা সীমান্তে ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিবর্ষণ অব্যাহত আছে। বিক্ষোভ দমাতে শুক্রবার তাদের গুলিতে অন্তত চার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ৯৫০ জনের বেশি।  সীমান্তমুখী এ বিক্ষোভে তেল আবিব ‘অত্যধিক শক্তি’ প্রয়োগ করছে বলে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান জেইদ রা’দ আল হুসেইনের সমালোচনার কয়েক ঘণ্টা পরই ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ফের ফিলিস্তিনি আন্দোলনকারী নিহতের এ খবর এলো। ১৯৪৮ সালে শরণার্থী হওয়া লাখ লাখ মানুষকে ইসরায়েলের দখলে থাকা এলাকায় ফিরতে বাধা দেওয়ার প্রতিবাদে সীমান্ত বরাবর ‘গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন’ নামের এ বিক্ষোভের ডাক দেয় হামাসসহ বিভিন্ন সংগঠন। শুরুর দিন হিসেবে বেছে নেওয়া হয় ৩০ মার্চকে; ১৯৭৬ সালের এই দিনে ভূমি দখলের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ছয় বিক্ষোভকারী নিহত হন। ভূমি থেকে উচ্ছেদ হওয়ার ৭০তম বার্ষিকীতে আগামী ১৫ মে এ কর্মসূচি শেষ হওয়ার নির্ধারিত তারিখ। ফিলিস্তিনিদের দাবি, শরণার্থী হওয়া পরিবারগুলোকে তাদের ভূমিতে ফিরতে দিতে হবে। অন্যদিকে ইসরায়েল বলছে, হামলার দূরভিসন্ধি থেকেই হামাস এ বিক্ষোভের ফন্দি এঁটেছে। বিক্ষোভের চার সপ্তাহে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলি ও গোলাবর্ষণে অন্তত ৪১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। আলজাজিরা।

আহতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৫ হাজার। গণমাধ্যম বলছে, ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের ইট পাথর নিক্ষেপের প্রত্যুত্তরে ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনী গাজা সীমান্তের ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ বেষ্টনীর পেছনে নিজেদের দখলে থাকা ভূমি থেকে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে তাজা গুলি ও  কাঁদানে গ্যাস ছুড়ছে। গুলিতে আহত দুই বিক্ষোভকারীর অবস্থা ‘গুরুতর’ বলে জানিয়েছেন গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। শুক্রবারের বিক্ষোভে ১২ থেকে ১৪ হাজার ফিলিস্তিনি অংশ নিয়েছে বলে দাবি ইসরায়েলের। বিক্ষোভকারীরা সেখানে ‘দাঙ্গা সৃষ্টি করার পর’ নিরাপত্তা রক্ষীরা তা মোকাবিলা করে বলেও ভাষ্য তাদের। কিছু কিছু বিক্ষোভকারী সীমান্ত বেষ্টনী ভেঙে ইসরায়েলে প্রবেশের চেষ্টা চালালে তাদের বাধা দিতেই অস্ত্র ব্যবহার করা হয় বলেও জানায় ইসরায়েলি বাহিনী।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, শুক্রবারের বিক্ষোভে ইসরায়েলের ছোড়া গুলিতেই অন্তত দুই শতাধিক আন্দোলনকারী আহত হয়েছেন; এদের মধ্যে এক সাংবাদিকের পায়ের পাতাও গুলিতে জখম হয়েছে। চার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ কয়েক ডজন আহত হয়েছেন কাঁদানে গ্যাসে। বিক্ষোভকারীদের নিরুৎসাহিত করতে সীমান্ত বেষ্টনীর সামনেও একটি কাঁটাতার বসিয়েছে ইসরায়েল; বিক্ষোভকারীদের অনেকেই সেই কাঁটাতার ভেদ করে এগিয়ে যাওয়ারও চেষ্টা করেন বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। শুক্রবার রাতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, তাদের জঙ্গি বিমানগুলো ‘সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও ইসরায়েলের সীমানা টপকাতে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের উসকে দেওয়া’ হামাসের নৌবাহিনীর ছয়টি লক্ষ্যে হামলা চালিয়েছে। গাজা উপকূলে থাকা দুটি নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে স্বীকার করলেও এতে কোনো হতাহত হয়নি বলে দাবি হামাসের। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, স্বাধীন সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা কমে আসায় হতাশ ফিলিস্তিনিদের বাড়তে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখা যাচ্ছে এবারের বিক্ষোভে। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি আলোচনা বন্ধ বেশ কয়েক বছর ধরে, উল্টো দিকে তেল আবিব একের পর এক এলাকায় দখলদারিত্ব বাড়িয়েই চলছে।  ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ নিয়ে তাত্ক্ষণিক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। দেশটির সরকার অবশ্য শুরু থেকেই সীমান্ত রক্ষা করতেই এ ধরনের পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করে আসছে। আলজাজিরা।

 

সর্বশেষ খবর