বুধবার, ২৩ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

যুক্তরাষ্ট্র ইরান সংকট কি যুদ্ধ বাধাবে?

যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ইরানকে নিয়ন্ত্রণে আনা বেশ কঠিন হবে

পরমাণু নিয়ে ইরানের সঙ্গে ছয়জাতি চুক্তি থেকে সরে আসার ঘোষণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দিয়েছেন চলতি মাসের ১২ তারিখ। এরপর দেশটির ওপর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে তা অনুমান করা হচ্ছিল। এরমধ্যে গত পরশু মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও ঘোষণা দিয়েছেন ইরানের বিরুদ্ধে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর নিষেধাজ্ঞার আদেশ শিগগিরই আসছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতি বাস্তবসম্মত কিনা সেই প্রশ্নও উঠছে। মূলত ইরানকে দমে রাখতে নানা রকম কঠিন শর্ত দিচ্ছে। ওই সব শর্ত মানতেই কঠিন নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এটিকে মার্কিন প্রশাসনের প্ল্যান ‘বি’ বলা হচ্ছে। এখন ইরানকে শুধু তাদের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা পরিত্যাগ করলেই চলবে না। তাদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি বন্ধ করতে হবে। বিশেষ করে ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের প্রভাব বিস্তারের নীতি বন্ধ করতে হবে। এসব করা না হলে ইরানকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে হবে।

কিন্তু তেহরানের সঙ্গে নতুন সমঝোতার ক্ষেত্রে এটিকে কি বাস্তবসম্মত নীতি বলা যায়? নাকি এটি উত্তেজনা বাড়ানোর একটি রেসিপি? প্রকৃতপক্ষে যুক্তরাষ্ট্র কঠিন কূটনৈতিক অবস্থান থেকে এমন একটি নীতির কথা যে বলছে, এর মূল উদ্দেশ্য কী ইরানে ক্ষমতার পরিবর্তন আনা? যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও অবশ্য স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ইরানকে নিয়ন্ত্রণে আনা বেশ কঠিন হবে। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব সম্পর্কে পম্পেও বলেছেন, সেই প্রভাব কমিয়ে আনাও সহজ হবে না। কিন্তু সৌদি আরব এবং ইসরায়েল ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের আর কারা এই নীতি সমর্থন করবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।

প্ল্যান বি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাখ্যা কী? : পম্পেও তাদের নতুন নীতির ব্যাপারে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তাতে হয়তো কিছু যুক্তি আছে। পম্পেও বলেছেন, ২০১৫ সালে করা চুক্তিতে মৌলিক বিষয়ে ত্রুটি ছিল। সেজন্য তিনি ওবামা প্রশাসনের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ এনেছেন। তিনি মনে করেন, সেই চুক্তি কাজ করেনি। সে কারণে ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির দিকেই এগিয়েছে। তিনি এখন ইরানকে ডজন খানেক শর্ত দিয়েছেন। সেই দাবিগুলো মানা না হলে কঠিন নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছেন।

ব্যবসায় কী প্রভাব ফেলবে? : যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলকে তেহরানের বিরুদ্ধে দমন নীতি বলা যায়। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করতে যুক্তরাষ্ট্র ওই অঞ্চলে মিত্রদের উপর নির্ভর করবে। যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে হয়তো তাদের অনেকে মিত্র তাতে সমর্থন করবে। কিন্তু বর্তমানে ইউরোপ ইরানের সঙ্গে আগের চুক্তি বহাল রাখার পক্ষে রয়েছে। কারণ ইউরোপের অনেক প্রতিষ্ঠান ইরানে বিনিয়োগ করেছিল। এখন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের কারণে ইউরোপ দুই ধরনের সমস্যায় পড়েছে। একদিকে তাদের ইরানে বিনিয়োগ বাঁচাতে হবে। অন্যদিকে তাদের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসা করতে হবে। তবে অনেক কোম্পানি ক্ষতি স্বীকার করে হলেও ইরানে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে শুরু করেছে। রাশিয়া, চীন এবং ভারত মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কাছে কী নতি স্বীকার করবে, সেই প্রশ্নে নিশ্চিত কোনো জবাব এখনই নেই। তারা ইরানে দীর্ঘদিনের তাদের ব্যবসার ক্ষতি কতটা মেনে নেবে তা বলা মুশকিল। বিবিসি।

সর্বশেষ খবর