শুক্রবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

রাজতন্ত্রের সমালোচনা করলেই নিখোঁজ

রাজতন্ত্রের সমালোচনা করলেই নিখোঁজ

আব্দুল আজিজ - তুর্কি বিন বান্দার - সাইফ আল-নাসের

সৌদি রাজতন্ত্রের সমালোচনায় মুখর ছিলেন সাংবাদিক জামাল খাশোগি। আর এ কারণে তাকে খুব পরিকিল্পতভাবে খুন করা হয়েছে। সেও তুরস্কে। কিন্তু খুন করে পার পাচ্ছে না সৌদি প্রশাসন। ধরা পড়ে গেছে খুনিরা। আর গোটা বিশ্বে সৌদি যুবরাজ মোহামেদ বিন সালমানকে এ ঘটনার জন্য দায়ী করা হচ্ছে। খাশোগির ঘটনা ধরা পড়লেও এ ধরনের আরও নানা ঘটনা আছে যেগুলো ধরা পড়ছে না। সৌদি রাজতন্ত্রের সমালোচনা কেবল বাইরের লোকই করে না রাজপরিবারের মধ্য থেকেও মাঝে মধ্যে সমালোচনা হয়। ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ইউরোপে বসবাসরত তিনজন সৌদি রাজপুত্র নিখোঁজ হয়ে যান যাদের প্রত্যেকেই সৌদি সরকারের সমালোচক ছিলেন। তাদের তিনজনকেই অপহরণ করে সৌদি আরবে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছিল—এমন প্রমাণও রয়েছে। কিন্তু আর তারপর থেকে তাদের সম্পর্কে আর কিছু জানা যায়নি।

সুলতান বিন তুর্কি বিন আব্দুল আজিজ: ২০০৩ সালের ১২ জুন সকালের ঘটনা। সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরের বাইরে একটি প্রাসাদে ঢুকতে দেখা যায় একজন সৌদি রাজপুত্রকে। তার নাম সুলতান বিন তুর্কি বিন আব্দুল আজিজ। তিনি রাজতন্ত্রের বিরোধী ছিলেন। বাদশাহ ফাহাদের ছেলে রাজপুত্র আবদুল আজিজ বিন ফাহাদের সঙ্গে সকালের নাস্তা খেতে সুইজারল্যান্ডের ওই প্রাসাদে যান যুবরাজ সুলতান। একপর্যায়ে সৌদি সরকারের সমালোচক সুলতানকে নিজ দেশ সৌদি আরবে ফিরে যেতে অনুরোধ করেন আব্দুল আজিজ। সুলতান ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানালে কিছুক্ষণের মধ্যেই মুখোশ পরা কয়েকজন ঘরে ঢুকে এবং সুলতানকে চেতনাহীন করে সেখান থেকে সরিয়ে নেয়। অজ্ঞান অবস্থাতেই সুলতানকে জেনেভা বিমানবন্দরে নেওয়া হয় এবং সেখানে অপেক্ষারত একটি বিমানে উঠানো হয় তাকে। পরে তাকে কারাগারে এবং ঘরে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। দীর্ঘসময় কারাগারে এবং বাড়িতে আটক থাকার পর সুলতানের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাতে সম্মত হয় রাজপরিবার।

২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্র গিয়ে সুইস আদালতে আব্দুল আজিজ বিন ফাহাদ এবং শেখ সালেহ আল-শেখ এর বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা করেন সুলতান। পরে ইউরোপের নানা গণমাধ্যমে সৌদি সরকারের সমালোচনা করে সাক্ষাৎকার দিতে শুরু করেন সুলতান। তিনি রাজপরিবারের সদস্য ও সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেন। এরপর ২০১৬ সালে তাকে প্যারিস থেকে কায়রো নিয়ে যাওয়া হবে বলে একটি বিমানে উঠিয়ে রিয়াদে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর থেকে আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি এই যুবরাজের।

রাজপুত্র তুর্কি বিন বান্দার : রাজপুত্র তুর্কি বিন বান্দার একসময় সৌদি পুলিশের একজন মেজর ছিলেন। কিন্তু উত্তরাধিকারের দ্বন্দ্বে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়লে একসময় কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাকে। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ২০১২ সালে প্যারিসে চলে যান তিনি। সেখানে গিয়েই সৌদি আরবের সংস্কার চেয়ে ইউটিউবে ভিডিও পোস্ট করা শুরু করেন তিনি। এরপর ২০১৫ সালের শেষদিকে হঠাৎই উধাও হয়ে যান তিনি। তারপর এখন পর্যন্ত তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

রাজপুত্র সউদ বিন সাইফ আল-নাসের: রাজপুত্র তুর্কি নিখোঁজ হওয়ার কাছাকাছি সময় একই ধরনের পরিণতি হয় আরেকজন রাজপুত্র সউদ বিন সাইফ আল-নাসেরের। ইউরোপে বিলাসবহুল জীবনযাপনে উৎসাহী ছিলেন এই রাজপুত্র। ২০১৪ সাল থেকে টুইটারে সৌদি রাজতন্ত্রকে কটাক্ষ করে পোস্ট দেওয়া শুরু করেন সউদ। এ কারণে তিনিও নিখোঁজ হয়ে যান। আরেক রাজপুত্র খালেদ গণমাধ্যমকে বলেন, সৌদি রাজতন্ত্রের  সমালোচনা করা আমরা চারজনই ছিলাম ইউরোপে, যাদের মধ্যে তিনজনকেই অপহরণ করা হয়েছে। রাজপুত্র খালেদ আশঙ্কা করছেন নিকট ভবিষ্যতে তাকেও  অপহরণ করা হতে পারে। বিবিসি বাংলা

সর্বশেষ খবর