শুক্রবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

আজোভ সাগরে ন্যাটোকে যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর অনুরোধ পোরেশেঙ্কোর

রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরেশেঙ্কো যুক্তরাষ্ট্র  নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোকে আজোভ সাগরে যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছেন। কের্চ প্রণালি ঘিরে রাশিয়ার সঙ্গে তীব্র উত্তেজনার মধ্যেই তার এ অনুরোধ এলো। রবিবার রুশ বাহিনীর সদস্যরা কৃষ্ণ সাগর ও আজোভ সাগরের মাঝে অবস্থিত ওই প্রণালিতে ইউক্রেনের তিনটি জাহাজ জব্দ ও ২৪ নাবিককে আটক করে। ন্যাটো এ ঘটনার পরিণতি সম্পর্কে মস্কোকে সতর্ক করলেও পোরেশেঙ্কোর অনুরোধ নিয়ে তাত্ক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।

পোরেশেঙ্কোর ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপড়েন চরম আকার ধারণ করে। ক্রিমিয়া অধিগ্রহণের পর আজোভ সাগর ঘিরে পশ্চিমাদের সঙ্গেও মস্কোর বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। পূর্বাঞ্চলীয় ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ক্রেমলিন সাহায্য করছে বলেও অভিযোগ আছে কিয়েভের। রুশপন্থি ওই বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ইউক্রেইন ভূখণ্ডের একটি বড় অংশকে কিয়েভের শাসন থেকে মুক্ত করতে চায়। বুধবার জার্মানির বিল্ড পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পোরেশেঙ্কো জানান, ন্যাটো আজোভ সাগরে যুদ্ধজাহাজ এনে ‘ইউক্রেনকে সহায়তা ও নিরাপত্তা’ দেবে বলেই প্রত্যাশা তার। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আজোভ সাগরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতেই ইউক্রেনের জাহাজগুলো জব্দ করেছেন বলেও মত তার। জার্মানি আমাদের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের একটি। ইউক্রেনকে সহায়তা ও নিরাপত্তা দিতে ন্যাটোর দেশগুলো আজোভ সাগরে তাদের যুদ্ধজাহাজগুলোর পুনর্বিন্যাসে প্রস্তুত বলেই আশা করছি আমরা। রাশিয়ার ‘আগ্রাসী নীতি’  কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। প্রথমে ক্রিমিয়া, এরপর পূর্ব ইউক্রেন। এখন তিনি (পুতিন) আজোভ সাগরও চান। জার্মানির নিজেকেই প্রশ্ন করা উচিত— পুতিন এরপর কী করবেন, যদি আমরা তাকে না থামাই?

পোরেশেঙ্কোর বক্তব্যের প্রসঙ্গে ন্যাটো তাত্ক্ষণিকভাবে কিছু না বললেও সোমবার সামরিক এ জোটটির প্রধান জেন্স স্টল্টেনবার্গ কের্চ প্রণালির ঘটনার পর ইউক্রেনকে ‘রাজনৈতিক ও বাস্তবিক সব ধরনের সহযোগিতা’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, ২০১৯-এর সাধারণ নির্বাচনের আগে জনপ্রিয়তা বাড়াতেই  পোরেশেঙ্কো এ নৌ ‘উসকানির’ ঘটনা ঘটিয়েছেন। সন্দেহাতীতভাবেই এটি উসকানি। আমার মনে হয়, ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আগামী মার্চের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দিয়ে ফের ক্ষমতায় ফিরতে চান। ২০১৪ সালে রাশিয়ার সঙ্গে চরম উত্তেজনার মুহূর্তেও সীমান্ত এলাকাগুলোতে সামরিক আইন জারি হয়নি, আর এবার ‘সামান্য ঘটনাতেই’ পোরেশেঙ্কোর ওই আইন জারি অন্য কিছুরই ইঙ্গিত দেয়, ভাষ্য রুশ প্রেসিডেন্টের। ইউক্রেনীয় জাহাজগুলো রাশিয়ার জলসীমায় ‘অবৈধ অনুপ্রবেশ’ করেছিল জানিয়ে কের্চ প্রণালির ঘটনায় সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়াকে ‘যথাযথ’ হিসেবেও অভিহিত করেছেন তিনি। পশ্চিমা সরকারগুলো অবশ্য এ ঘটনায় ইউক্রেনের পাশেই দাঁড়িয়েছে। তিন দিনের তর্ক-বিতর্কের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নও এক বিবৃতিতে ‘গভীর উদ্বেগ’ জানিয়েছে। রাশিয়ার কর্মকাণ্ড ওই এলাকায় উত্তেজনা বাড়াবে বলেও সতর্ক করেছে তারা। ইউক্রেনের জাহাজ জব্দের ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানালেও  ইইউ রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা জারির ক্ষেত্রে একমত হতে পারেনি। পোল্যান্ড নিষেধাজ্ঞা দিতে জোরালো চাপ দিলেও ফ্রান্স ও জার্মানি তাতে সাড়া দেয়নি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও সাম্প্রতিক ইউক্রেন সংকট নিয়ে অসন্তুষ্ট।— বিবিসি

সর্বশেষ খবর