মঙ্গলবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিভীষিকাময় সুনামি

বিভীষিকাময় সুনামি

ইন্দোনেশিয়ার সুন্দা শনিবারের সুনামিতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সেই ধ্বংসস্তূপে অসহায় দাঁড়িয়ে আছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো -এএফপি

ইন্দোনেশিয়ার সুন্দা প্রণালীর উপকূলবর্তী শহরগুলোতে শনিবার আঘাত হানা সুনামিতে এখন পর্যন্ত মারা গেছে ২৮১ জনের বেশি। আহত হয়েছেন সহসদ্াধিক মানুষ। ওই ঘটনার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী, যারা মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গেছেন, তাদের অভিজ্ঞতা বিবিসিকে জানান।

নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না : সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার হওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় একটি রিসোর্টের তাঁবুতে বিশাল আকারের ঢেউ আঘাত হানছে। ওই তাঁবুতে এক অনুষ্ঠানে গান গাইছিল ইন্দোনেশিয়ার বেশ জনপ্রিয় একটি রক ব্যান্ড দল ‘সেভেনটিন।’ ঢেউয়ের আঘাতে মঞ্চ তছনছ হওয়ার ভিডিও চিত্রে দেখা যায় ব্যান্ডদলের কয়েকজন সদস্যের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাটি। হৃদয়বিদারক এক ইনস্টাগ্রাম ভিডিওতে গায়ক রিয়েফিয়ান ফাযারসিয়াহ জানান যে ব্যান্ডের বেসিস্ট এবং ম্যানেজার নিহত হয়েছেন এবং তিনজন সদস্য ও ওই গায়কের স্ত্রী এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

ওই ব্যান্ডের এক নবীন সদস্য জ্যাক তার ইনস্টাগ্রাম পোস্টে লিখেছেন, স্টেজের অংশবিশেষ আঁকড়ে ধরে স্রোতের হাত থেকে বেঁচেছেন তিনি। শেষ কয়েকটি মুহূর্তে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল বলে জ্যাক তার পোস্টে লেখেন। সংবাদ সংস্থা এপি জানায়, ব্যান্ডটি তাদের একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, সে াত ফিরে যাওয়ার সময় আমাদের দলে অনেক সদস্যই পানিতে ধরে থাকার মতো অবলম্বন খুঁজে পাননি।”

বেঞ্চ আঁকড়ে ধরে ছিলাম : বানতেন প্রদেশের সিনাঙ্কা এলাকার একজন দোকান মালিক রুডি হেরদিয়ানসিয়াহ বলেন ‘সমুদ্র থেকে প্রকট এক শব্দ আসার’ আগ পর্যন্ত শনিবারে সমুদ্র শান্তই ছিল। পানির উঁচু দেয়াল সমুদ্রতীরে তার দোকানে আঘাত করলে ঢেউয়ের টানে ভেসে যান তিনি। এ সময় অন্তত তিনবার অজ্ঞান হয়ে যান বলে মনে করতে পারেন তিনি। ‘আল্লাহর কাছে অসংখ্য কৃতজ্ঞতা যে তিনি আমাকে বাঁচিয়েছেন।’ বলেন তিনি। হেরদিয়ানসিয়াহ বলেন তিনি সুনামির সতর্কতা বার্তা শোনেননি; কিন্তু বেশ কিছুদিন আগে একবার সুনামি প্রস্তুতি মহড়ায় অংশ নিয়েছিলেন। তার মন্তব্য, ওই মহড়ায় অংশ নেওয়ার কারণে আমি সচেতন ছিলাম। আমি কোনো কিছু ধরার চেষ্টা করছিলাম যা আমার জীবন বাঁচাতে পারে। শেষপর্যন্ত একটি বেঞ্চ আঁকড়ে ধরে ছিলাম।”

‘ভেবেছিলাম মারা যাব : ১৬ বছর বয়সী আযকি কুর্নিয়াওয়ান জানান, কারিতা সৈকতের একটি জনপ্রিয় রিসোর্ট পাত্রা কমফোর্ট হোটেলে আরও ৩০ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে একটি প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ নিচ্ছিলেন তিনি। সেসময় হঠাৎ হোটেলের লবিতে থাকা লোকজন ‘সমুদ্রের পানি বাড়ছে’ বলে তীব্র চিৎকার শুরু করে। সংবাদ সংস্থা এপিকে তিনি জানান, কী হচ্ছিল তা তিনি বুঝতে পারছিলেন না, কারণ কোনো ভূমিকম্প অনুভব করেননি তিনি।

দ্রুতবেগে দৌড়ে পার্কিং লটে পৌঁছান আযকি। উদ্দেশ্য ছিল নিজের মোটর বাইকটি নিয়ে হোটেল থেকে বের হয়ে যাওয়া, কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখেন সবকিছু ততক্ষণে পানিতে তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। হঠাৎ করে প্রায় এক মিটার উঁচু এক ঢেউ আঘাত করে আমাকে।”

সমুদ্রসৈকত থেকে প্রায় ৩০ মিটার দূরে থাকা একটি বেড়ার দিকে ভেসে যাই আমি। আমি যখন ওই বেড়া শক্ত করে ধরে রেখে সে াতের বিরুদ্ধে লড়াই করছি, তখন বারবার মনে হচ্ছিল যে হয়তো আজই আমার মৃত্যু হবে।”

জঙ্গলের দিকে দৌড়ায় সাধারণ মানুষ : আসেপ পেরাংকাট নামের এক ব্যক্তি সংবাদ সংস্থা এএফপিকে জানায়, শহরের ওপর দিয়ে সমুদ্রের ঢেউ যাওয়ার সময় জাভার কারিতা দ্বীপে পরিবার নিয়ে সময় কাটাচ্ছিলেন তিনি।

তিনি বলেন, সমুদ্রের খুব কাছে অবস্থিত স্থাপনাগুলো তছনছ হয়ে গেছে, গাছ এবং বৈদ্যুতিক খাম্বাগুলো সব ধ্বংস হয়ে গেছে। বাসিন্দাদের প্রায় সবাই জঙ্গলের দিকে দৌড়ে গিয়ে অবস্থান নেয়। জাভার পানডেগলাং অঞ্চলের বাসিন্দা আলিফ মেট্রো টিভিকে জানায় নিখোঁজ থাকা অনেক ব্যক্তির স্বজনরা এখনো তাদের আত্মীয়দের খুঁজছেন।

‘ঢেউ ছিল দুটি’

আয়স্টেইন লুন্ড অ্যান্ডারসন, নরওয়েজিয়ান ফটোগ্রাফার জানান, ক্রাকাতাউ আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ছবি তোলার জন্য সৈকতেই ছিলাম আমি। সেদিন সন্ধ্যায় আগ্নেয়গিরি থেকে বেশ কয়েকদফা অগ্ন্যুৎপাত হলেও ঠিক সুনামির আগে দিয়ে আগ্নেয়গিরি ছিল একদম শান্ত। অন্ধকারের মধ্যে হঠাৎই বিশাল এক ঢেউ আসতে দেখি এবং দৌড়াতে শুরু করি। প্রথম ঢেউটা অতটা শক্তিশালী ছিল না। আমি দৌড়ে হোটেলে চলে আসি আমার পরিবারের কাছে। হোটেল থেকে আমার স্ত্রী-পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে বের হই তখন দ্বিতীয় ঢেউটি আঘাত করে। এটি ছিল আরও অনেক ভয়াবহ আকারের। হোটেলের অন্যান্য মানুষের সঙ্গে সঙ্গে আমরাও দৌড়ে পাশের উঁচু জঙ্গলে আশ্রয় নেই।

সব ধ্বংস হয়ে গেছে: জাভার আনইয়েরে সমুদ্রসৈকতে একটি দোকান চালান রাণী বলেন, সুনামিতে সব কিছুই তছনছ হয়ে গেছে। সব শেষ হয়ে গেছে; আমাদের কাছে টাকাও নেই যে আমরা এগুলো নতুন করে বানাবো। বছরের এই সময়টা পর্যটনের জন্য ভালো সময় হিসেবে বিবেচিত হয় এবং ওই এলাকার মানুষের আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস পর্যটনই। বিবিসি বাংলা

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর