মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির বিদ্রোহীদের হামলায় দেশটির নয় পুলিশ নিহত হয়েছেন। গতকাল স্থানীয় এক কর্মকর্তা এ কথা জানিয়েছেন বলে খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের। শনিবার গভীর রাতে ইয়ো তা ইয়োকে গ্রামে পুলিশের একটি পোস্টে হামলা চালায় আরাকান আর্মির যোদ্ধারা। এ সময় গ্রামবাসী গোলাগুলির শব্দ শুনেছেন বলে জানিয়েছেন। সেখানে আরকান আর্মি হামলায় নয় পুলিশ নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন গ্রাম প্রশাসক সান অং থিয়েন। তবে হামলার বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু জানাতে পারেননি তিনি। রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিত্তওয়ে থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার উত্তরে মিয়ানমারের অন্যান্য অংশের সঙ্গে শহরটির যোগাযোগের প্রধান মহাসড়ক বরাবর হামলার এ ঘটনাটি ঘটেছে।
পঞ্চাশোর্ধ এক ব্যক্তি রয়টার্সকে জানিয়েছেন, স্থানীয় সময় রাত ১১টার একটু পর চালানো ওই হামলায় পোস্টটিতে মোতায়েন পুলিশদের মধ্যে মাত্র দুজন রক্ষা পেয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই গ্রামবাসী বলেন, ‘প্রায় ২০ মিনিট ধরে লড়াই হয়। ওই সময় আমি গ্রামে ছিলাম এবং অনেক গোলাগুলির শব্দ শুনেছি; কিন্তু গ্রামবাসীরা পালিয়ে যায়নি।’ আরাকান আর্মি প্রধানত রাজ্যটির সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ রাখাইন নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে। ঘটনার বিষয়ে মন্তব্যের জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স। এবারের ঘটনাস্থলের আরও উত্তরে জানুয়ারিতে আরাকান আর্মির একই ধরনের হামলায় ১৩ পুলিশ নিহত হয়েছিল। এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি ডিসেম্বর থেকে প্রায়ই মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াচ্ছে। রাখাইনের স্বায়ত্তশাসনের জন্য লড়াইরত এ বিদ্রোহী গোষ্ঠীটিকে দমন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন মিয়ানমারের নেতারা।
কিন্তু তাদের প্রত্যয় সত্ত্বেও নতুন নতুন এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ছে এবং এ পর্যন্ত পাঁচ হাজারেরও বেশি লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। অনেক লোক মানবিক সংকটে থাকলেও রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ এলাকায় আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলোর প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। ২০১৭ সালে রাখাইনের বেশ কয়েকটি নিরাপত্তা পোস্টে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা হামলা চালানোর পর রাজ্যটির উত্তরাঞ্চলে রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান শুরু করে দেশটির সামরিক বাহিনী। তাদের এই নিষ্ঠুর দমনমূলক অভিযানের মুখে সাত লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় এসে আশ্রয় নেয় বলে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর তথ্য।