মঙ্গলবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

৪০ বছরে সবচেয়ে দৈন্যদশার পথে দক্ষিণ এশিয়া

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস

৪০ বছরে সবচেয়ে দৈন্যদশার পথে দক্ষিণ এশিয়া

করোনাভাইরাসের প্রভাবে জীবন-জীবিকা উভয়ে এখন কঠিন পরীক্ষায়। করোনাভাইরাসের প্রভাব শেষ পর্যন্ত ঠিক কোথায় গিয়ে থামবে তার কোনো ধারণা করতে পাচ্ছেন না কোনো বিশেষজ্ঞ। সেটা অর্থনীতি হোক বা চিকিৎসা। তবে এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি গত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপের পথে এগিয়ে চলেছে। মূলত করোনা মোকাবিলায় লকডাউনের কোপে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, মাত্র কয়েক মাস আগেও উন্নয়নের যে আশা দেখা দিয়েছিল, তা ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে এই ভাইরাসের থাবা। রবিবার এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা আফগানিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে করোনা সংক্রমণের হার বিশ্বের অন্যান্য দেশের থেকে তুলনামূলকভাবে অনেক কম হলেও চিকিৎসক এবং অর্থনীতিবিদদের একাংশের মতে, ভবিষ্যতে এই অঞ্চলই হয়ে উঠতে পারে করোনার ‘হটস্পট’। এর জেরে ধসে পড়তে পারে দক্ষিণ এশিয়ার বহু দেশের অর্থনীতি।

বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, গত কয়েক দশক ধরে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যে সুফল মিলছিল, লকডাউনের ফলে তা প্রবল ঝুঁকির মুখে। আর পিছিয়ে পড়া শ্রেণির ভবিষ্যৎ পুরোটাই অনিশ্চয়তার মুখে। লকডাউনের জেরে দৈনন্দিন জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হওয়ার প্রভাব পড়েছে সমাজের সব স্তরেই। তবে অর্থনৈতিকভাবে সমাজের নিম্ন শ্রেণির মানুষেরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমদানি-রপ্তানি নেই, বেহাল পর্যটন শিল্প, বন্ধ কলকারখানা, মার খাচ্ছে ছোট, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের ব্যবসা। যার জেরে হঠাৎই কাজ হারিয়েছেন দিনমজুর বা অস্থায়ী কর্মীরা। স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে সামাজিক বা অর্থনৈতিক সুরক্ষা সব জায়গাই অনিশ্চিত তাদের ভবিষ্যৎ। বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আদর্শ প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে পড়ছে দক্ষিণ এশিয়া। পর্যটন শিল্প অসাড় হয়ে পড়ে রয়েছে, সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত, বস্ত্র শিল্পে চাহিদা নেই, ক্রেতা বা বিনিয়োগকারীর কাজেও ধাক্কা লেগেছে।

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস, এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশে মন্দা, কোনো দেশে বা মহামন্দাও দেখা দিতে পারে। চলতি আর্থিক বছরে এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার কমে দাঁড়াতে পারে ১.৮ শতাংশ থেকে ২.৮ শতাংশে। যদিও বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণের আগে এ অঞ্চলে ৬.৩ শতাংশ আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস করেছিল বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির দাবি, এই আবহে সবচেয়ে  ক্ষতিগ্রস্ত হবে মালদ্বীপ। মূলত পর্যটন শিল্পের ওপরে নির্ভরশীল মালদ্বীপের জিডিপি ১৩ শতাংশ নিচে নেমে যেতে পারে। অন্যদিকে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে তা যথাক্রমে ৫.৯ শতাংশ ও ২.২ শতাংশ   নিম্নমুখী হতে পারে। স্বস্তিতে নেই দক্ষিণ এশীয়  অর্থনীতির হেভিওয়েট দেশ ভারতও। এ দেশে আর্থিক বৃদ্ধির হার ঘোরাফেরা করবে ১.৫ শতাংশ থেকে ২.৮ শতাংশের মধ্যে। করোনা পরিস্থিতির আগে যা ছিল ৪.৮ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে। বিশ্বব্যাংকের  হুঁশিয়ারি, আর্থিক দিকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ছাড়াও সামাজিক বৈষম্যের খাতেও বড়সড় ভাটার টান পড়বে ভারতসহ দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে। আনন্দবাজার।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর