শনিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

প্লাজমা দিয়ে চিকিৎসায় সাফল্য দিল্লির

প্লাজমা দিয়ে চিকিৎসায় সাফল্য দিল্লির

গোটা পৃথিবী এখন ব্যস্ত একটি প্রতিষেধক আবিষ্কারের আশায়। কবে আসবে সেই মহাওষুধ। যা নিঃশেষ করে  দেবে কভিড-১৯ কে। এই রোগে কাতারে কাতারে মানুষ মরছে। আপাত সান্ত্বনা খুঁজতে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে করোনার চিকিৎসা করার প্রয়াসও চলছে। দিল্লিতে সরকারি চিকিৎসকরা সেরকমই একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে করোনার চিকিৎসায় প্রাথমিক সাফল্য পেয়েছেন। ডাক্তারি ভাষায়, এই পদ্ধতির নাম হলো প্লাজমা থেরাপি। সহজে ব্যাখ্যা করা যাক। যাদের করোনা হয়েছিল এবং সেরে উঠেছেন, তাদের শরীরে করোনার অ্যান্টিবডি তৈরি হয় বা রক্তে প্রোটিন জাতীয় পদার্থ তৈরি হয়, যা ওই ভাইরাস প্রতিরোধের ক্ষমতা রাখে। প্লাজমা পদ্ধতির অর্থ হলো, ওই ব্যক্তিদের রক্ত থেকে প্লাজমা সংগ্রহ করে করোনা আক্রান্তের শরীরে দেওয়া। যাতে রোগীর শরীরেও অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। প্রাথমিকভাবে দিল্লিতে চারজনের প্লাজমা থেরাপি হয়েছিল। তার মধ্যে যে দুজন রোগীর  দেহে আগে প্লাজমা দেওয়া হয়েছিল, তারা এখন প্রায় সুস্থ। এই দুজন রোগীকেই ভেন্টিলেটারে পাঠাবার মতো অবস্থা হয়েছিল। বাকি দুজনকে পরে প্লাজমা দেওয়া হয়েছে। তাদেরও শারীরিক অবস্থার অনেকটা উন্নতি হয়েছে। এই অবস্থায় আরও বেশি করে রোগীর প্লাজমা থেরাপি করা হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।

দিল্লির লোকনায়ক জয়প্রকাশ নারায়ণ হাসপাতালে প্লাজমা দিয়ে করোনা রোগীদের চিকিৎসা হচ্ছে। এর দায়িত্বে আছেন চিকিৎসক এস কে সারিন। তিনি জানিয়েছেন, ‘করোনার তিনটি পর্যায় আছে। প্রথম পর্যায়ে করোনা আক্রান্তের জ্বর, সর্দি, গলাব্যথা, দুর্বলতা দেখা দেয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে করোনা ফুসফুসকে আক্রমণ করে। তৃতীয় পর্যায়ে করোনার কারণে দেহের অনেক যন্ত্র আক্রান্ত হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ের রোগীদের প্লাজমা থেরাপি করা হচ্ছে। চারজন  রোগীর ক্ষেত্রে এই থেরাপি সফল হয়েছে। আরও তিনজনকে গতকালই প্লাজমা দিয়ে চিকিৎসা করার কথা।

সারিন জানিয়েছেন, ‘এ ক্ষেত্রে একটাই সমস্যা। প্লাজমা জোগাড় করা। প্লাজমা তাদের কাছ থেকেই পাওয়া যাবে, যারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে সেরে উঠেছেন। তাদের এগিয়ে আসতে হবে। প্লাজমা নেওয়ার পদ্ধতিও খুব সহজ। যিনি দেবেন, তার কোন ক্ষতি হবে না। যত বেশি প্লাজমা পাওয়া যাবে, তত বেশি রোগীর শরীরে তা দেওয়া সম্ভব হবে।’ তারপরেও ড. সারিনকে প্রশ্ন করা হয়, প্লাজমা থেরাপি দিয়ে করোনা সারিয়ে তোলা কি সম্ভব? সারিনের বক্তব্য, ‘এটা নতুন কোনো পদ্ধতি নয়। যে রোগের ওষুধ থাকে না, সেখানে এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হয়। ১৯০১ সালে এভাবে ডিপথিরিয়ার চিকিৎসা হয়েছে। করোনার  কোনো ওষুধ নেই। তাই প্লাজমা দিয়ে চেষ্টা করা হয়েছে। প্রাথমিক সাফল্য পাওয়া গিয়েছে। চিকিৎসক সুব্রত কুন্ডু ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এত তাড়াতাড়ি রায় দেওয়া যায় না। এটা ঠিক, প্রাথমিক সাফল্য পাওয়া গিয়েছে। এখন আরও অনেকের ওপর তা প্রয়োগ করতে হবে। তারপর যাদের প্লাজমার মাধ্যমে চিকিৎসা করা হলো এবং যাদের করা হয়নি, দুই ধরনের ঘটনা তুলনা করে দেখতে হবে। এই গবেষণায় সময় লাগে। অন্তত ছয় মাস থেকে এক বছর লাগবে।

সর্বশেষ খবর