শিরোনাম
রবিবার, ৩১ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনার টিকার সর্বজনীন স্বত্বের লক্ষ্যে হু-৩৭ দেশের জোট

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন যুক্তরাষ্ট্রের

করোনার টিকার সর্বজনীন স্বত্বের লক্ষ্যে হু-৩৭ দেশের জোট

করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবিলায় এর টিকা, ওষুধ ও ডায়াগনস্টিক সরঞ্জামে সাধারণ বা সর্বজনীন মালিকানা চেয়ে আবেদন জানিয়ে একটি জোট গঠন করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং ৩৭টি দেশ। উন্নত দেশগুলোর কারণে কিংবা মেধাসত্ত্ব আইনের পাল্লায় পড়ে অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলো যাতে করোনাভাইরাসের টিকা বা চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত না হয় তার জন্যই এ পদক্ষেপ।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, স্থানীয় সময় শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ ঘোষণা দিয়ে বলেছে, ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা ‘কভিড-১৯ টেকনোলজি অ্যাকসেস পুল (সি-টিএপি)’ উদ্যোগে সমর্থন দিয়েছে। এই দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে।

উন্নয়নশীল ও ছোট কিছু দেশ মনে করে, হাতে গোনা উন্নত কয়েকটি দেশ সবার আগে করোনাভাইরাসের টিকা বা ওষুধ পেতে জোর খাটাতে পারে। এতে দরিদ্র, উন্নয়নশীল ও ছোট কিছু দেশ সময়মতো টিকা বা ওষুধ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে গত মার্চে একটি জোট গড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন কোস্টারিকার প্রেসিডেন্ট কার্লোস আলভারাদো।

শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান ডা. টেড্রোস আধানম গেব্রেয়েসুস যখন সি-এটিপির বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন সে সময় অনলাইনে উপস্থিত ছিলেন কোস্টারিকার প্রেসিডেন্ট আলভারাদো। তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস সংক্রান্ত টিকা, ওষুধ বা চিকিৎসা পদ্ধতি অবশ্যই সবার জন্য উন্মুক্ত থাকতে হবে’।

ডা. আধানম বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মেধাসত্ত্ব আইনকে গুরুত্ব দেয়। এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু এখন এমন এক সময় উপস্থিত হয়েছে যখন সবার আগে মানুষকে গুরুত্ব দিতে হবে।’

এদিকে করোনাভাইরাস ইস্যুতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সংস্থাটিতে অনুদান স্থগিতের কয়েক সপ্তাহের মাথায় আনুষ্ঠানিকভাবে সংস্থাটির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের এ ঘোষণা দিলেন ট্রাম্প। স্থানীয় সময় শুক্রবার হোয়াইট হাউসে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

চীনের চাপে ডব্লিউএইচও করোনাভাইরাস নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানাতে ব্যর্থ হয়েছে বলে শুরু থেকেই অভিযোগ করে আসছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। করোনা ইস্যুতে চীনের প্রতি সংস্থাটির পক্ষপাতের অভিযোগও রয়েছে ট্রাম্পের। তার দাবি, ডব্লিউএইচও বেইজিংকে করোনভাইরাস মহামারী সম্পর্কে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে ব্যর্থ হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে বছরে ৪০ কোটি মার্কিন ডলার অনুদান দিত মার্কিন সরকার। তবে শুক্রবার ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘অনুরোধ এবং প্রয়োজন সত্ত্বেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের অভ্যন্তরীণ সংস্কার না করায় আমরা তাদের সঙ্গে সব সম্পর্কের ইতি টানছি এবং ওই তহবিল বিশ্বের অন্যান্য জনস্বাস্থ্য খাতে দান করা হবে।’

যুক্তরাষ্ট্র করোনাভাইরাসের আঘাতে জর্জরিত শীর্ষ দেশ। চীনে ভাইরাস শুরু হলেও যুক্তরাষ্ট্রই এখন এর মূলকেন্দ্র। দেশটিতে সর্বশেষ খবর পর্যন্ত ভাইরাসের আক্রান্ত সংখ্যা ১৮ লাখ ছড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যাও এরই মধ্যে লাখ ছাড়িয়ে গেছে।

আগামী নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন সামনে রেখে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এরই মধ্যে প্রচার শুরু করেছেন। তবে করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবিলায় চরম বিশৃঙ্খলার পরিচয় দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এতে কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এ অবস্থায় অনেকে বলছেন, করোনা মোকাবিলায় নিজের ব্যর্থতা ঢাকতেই উল্টো চীনকে দোষারোপ করছেন তিনি। তবে তিনি বরাবরই অভিযোগ করে আসছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর প্রথম থেকে চীনের পক্ষপাতী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। অবশ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এমন অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে। আর চীন ট্রাম্পের অভিযোগকে ভিত্তিহীন উল্লেখ করে করে তার ও তার প্রশাসনের আচরণকে আগামী নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক কূটকৌশল বলে আখ্যায়িত করেছে।

সর্বশেষ খবর