পৃথিবীর বুকে উষ্ণতা বাড়ছে। তা নিয়ে শত বছর ধরেই বিজ্ঞানীদের মধ্যে হা-হুতাশ। তাই প্রকৃতি মাঝে মধ্যেই বিগড়ে যাচ্ছে। প্রকৃতির রোষ আছড়ে পড়ছে বারবারই। তাতেও আমরা সাবধান হচ্ছি না। কিন্তু আর কত? বিপর্যয়ের সঙ্গে আর কতটা যুঝলে আমরা নিজেদের সচেতন করতে পারব? বিজ্ঞানীদের একটি অংশ মনে করছেন প্রকৃতির সঙ্গে ফাজলামোর ফল করোনাভাইরাস। এক মার্কেটে হাজার রকমের প্রাণী। কয়েকটা প্রাণীর ভাইরাস একসঙ্গে হয়ে হয়তো নভেল করোনা ভাইরাসের সৃষ্টি হয়েছে। আর তা হয়েছে বিধ্বংসী। অপরদিকে প্রকৃতিকে গরম করার কারণে উষ্ণায়ন এতটা থাবা বসিয়েছে যে, উত্তর মেরুর শীতলতম শহর, রাশিয়ার ভেরখোয়ানস্ক পুড়ছে দাবদাহে! গত সপ্তাহে সেখানে তাপমাত্রার পারদ ছুঁয়ে ফেলেছিল ৩৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড, যা আমাদের দেশে গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রার কাছাকাছি। মস্কো থেকে প্রায় ৫০০০ কিলোমিটার দূরে ভেরখোয়ানস্ক শহর। সাইবেরিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলের অন্যতম শীতল শহর এটি। মাত্র ১৩০০ বাসিন্দার বসবাস। এখানকার তাপমাত্রা রেকর্ড খতিয়ে দেখে আবহাওয়াবিদদের চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। দেখা যাচ্ছে, জানুয়ারি মাসে সেখানকার তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ৪২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড, জুনে সেটাই বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ ডিগ্রিতে। আর সম্প্রতি ৩০-এর কোঠা পেরিয়ে একেবারে ৩৮ ডিগ্রি।
উষ্ণতার এই মাত্রাতিরিক্ত হেরফের নিয়ে ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড্যান মিশেল বলছেন, ‘বছর বছর উষ্ণতা বৃদ্ধিতে নতুন রেকর্ড তৈরি হচ্ছে। কিন্তু মেরু অঞ্চলের তাপমাত্রা পৃথিবীর অন্য যে কোনো অঞ্চলের তুলনায় লাগামছাড়াভাবে বাড়ছে। ভবিষ্যতে আরও অনেক অনভিপ্রেত ঘটনার জন্য আমরা তৈরি।’ এই ভেরখোয়ানস্ক শহর থেকে খুব বেশি দূরে নয় নরিলস্ক। সপ্তাহকয়েক আগে এখানে ডিজেল ভর্তি ট্যাঙ্কার ফুটো হয়ে বরফের চাদরের ওপর ছড়িয়ে পড়েছিল। বিকৃয়ায় রক্তাভ হয়ে গিয়েছিল তুষারশুভ্র নদীও। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন পর্যন্ত তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন। কিন্তু এসব কিছু তুচ্ছ করে শীতল পরিবেশ একধাক্কায় উষ্ণ হয়েছে। এই আবহাওয়া ভেরখোয়ানস্কের মতো সাইবেরিয়ান অঞ্চলের বাসিন্দাদের একেবারেই অচেনা। ফলত এই গরমে তারা দগ্ধ হচ্ছেন। ভাবতে হচ্ছে অন্যরকমভাবে জীবনযাপনের কথা।