মঙ্গলবার, ১৪ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

রাজস্থান দখলে চোখ বিজেপির

রাজস্থান দখলে চোখ বিজেপির

গত বছর দশেকের মধ্যে ভারতে আস্তে আস্তে সব জায়গা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে কংগ্রেস। এর মধ্যে কভিড-১৯ শুরুর আগে কংগ্রেসের হাত থেকে প্রথমে হাতছাড়া হয়েছে কর্নাটক। তারপর করোনার মধ্যেই জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার বিদ্রোহ এবং তার জেরে মধ্যপ্রদেশে ক্ষমতা হারিয়েছে কংগ্রেস। বিজেপির নজরে এবার রাজস্থান। ঠিক মধ্যপ্রদেশের কায়দায় সেখানে কংগ্রেসের সরকারকে ফেলে দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চাইছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল। কংগ্রেসের হাতে রয়েছে সাকল্যে গোটা ছয়েক রাজ্য সরকার। সেগুলো  থেকেও সনিয়া গান্ধীর দলকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করতে তৎপর বিজেপি।

মধ্যপ্রদেশে বিদ্রোহ করেছিলেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। তার সমর্থক ২২ জন বিধায়ক ইস্তফা দেন। ফলে কমলনাথ সরকার সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে। বিজেপি ক্ষমতায় চলে আসে। রাজস্থানে এবার উপ মুখ্যমন্ত্রী শচিন পাইলট বিদ্রোহ করেছেন। সঙ্গে ৩০ জন অনুগামী বিধায়ক আছেন বলে তার দাবি। জয়পুর ছেড়ে এখন ঠিকানা দিল্লি। সূত্র জানাচ্ছে, কথা চলছে বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে। হয় তিনি বিজেপিতে যোগ দেবেন অথবা নিজের আলাদা দল তৈরি করবেন। অশোক গেহলটের নেতৃত্বে কংগ্রেসের সরকার পড়ে যাবে। বিজেপির রাজস্থান দখল হয়ে যাবে। কংগ্রেস অভিযোগ করলে বলা হবে, সনিয়া-রাহুল গান্ধী তো নিজের ঘরই ঠিক রাখতে পারছেন না। সেখানে বিধায়করা বিদ্রোহ করছেন। এতে বিজেপির কী করণীয় আছে। কর্নাটক ও মধ্যপ্রদেশেও একই কথা বলেছিল বিজেপি। একদিক থেকে দেখতে গেলে কথাটায় ভুল নেই। বিদ্রোহটা কংগ্রেসের মধ্যে থেকে হচ্ছে। কিন্তু কংগ্রেসের অভিযোগ, সেই বিদ্রোহটা করাচ্ছেন মোদি-শাহ। কংগ্রেসের অসন্তুষ্ট নেতা, মন্ত্রী ও তাদের অনুগামীদের মদদ দিয়ে। মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের অভিযোগ, কংগ্রেসের বিধায়ক কিনতে মাঠে নেমেছে বিজেপি। প্রত্যেক বিধায়ককে ১৫ কোটি টাকার অফার দেওয়া হয়েছে। এ দিন সরকার ফেলার চিত্রনাট্য যখন ক্রমশ ক্লাইম্যাক্সে যাচ্ছে, তখন অশোক গেহলটের দুই সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মন্ত্রীর বাড়িতে হানা দিয়েছে, আয়কর এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি-র অফিসাররা। কংগ্রেস নেতারা বলছেন এটাও চেনা ছক। কংগ্রেস বিধায়ক-মন্ত্রীদের ভয় দেখানোর।

রাজস্থানে সরকার ফেলার চেষ্টা নিয়ে শুরু হয়েছে ভরপুর নাটক। শচিন পাইলট দলের নির্দেশের তোয়াক্কা না করে দিল্লিতে বসে আছেন। আর কংগ্রেসের নেতারা দিল্লি থেকে ছুটেছেন জয়পুরে। অজয় মাকেন, রণদীপ সূরযেওয়ালা, অবিনাশ পান্ডেরা গিয়ে পরিস্থিতি সামলাবার চেষ্টা করছেন। রবিবার রাতেই সব বিধায়কের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। রাত আড়াইটার সময় সংবাদ সম্মেলন করে অবিনাশ পান্ডে জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। তবে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী গেহলট পোড় খাওয়া রাজনীতিক। মাথা ঠা া। এই ধরনের অনেক পরিস্থিতি অতীতে সামলেছেন। গত দুই বছর ধরে শচিনের ক্ষোভ-বিক্ষোভও সামলাচ্ছেন। কিছুদিন আগেও সংগঠনের দায়িত্বে থাকা দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। খুবই সুশীল রাজনীতিক। গতকাল সকালে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে বিধায়ক দলের বৈঠক ডাকা হয়েছিল। হুইপও ছিল, সবাইকে যোগ দিতে হবে। সেখানে দলের ১০৭ জন বিধায়কের মধ্যে পাইলটসহ পাঁচজন অনুপস্থিত ছিলেন বলে কংগ্রেসের দাবি। তার মানে, ১০২ জন বিধায়ক বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। এই সংখ্যার বদল না হলে গেহলট শেষরক্ষা করে ফেলতে পারবেন এবং বিজেপির প্রয়াস ব্যর্থ হবে। শচীনের বিদ্রোহও। অন্য দলের পাঁচ বিধায়কসহ দশজন নির্দল বিধায়ক গেহলটকে সমর্থন করছেন।

সর্বশেষ খবর