আমেরিকায় ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমর্থকদের মারণাত্মক সংঘর্ষের পর, জাতিগত উত্তেজনা এখন আসন্ন প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের মূল উপজীব্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পোর্টল্যান্ডে কয়েক সপ্তাহ ধরে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ প্রতিবাদকারীরা বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছিলেন, তবে ট্রাম্পের সমর্থকরা বাধা দেয়। রবিবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বড় একটি সমর্থক দল সেখানে জড়ো হয়ে বাধা দেওয়ার চেষ্টা চালালে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। ডেমোক্র্যাটিক দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে বেপরোয়াভাবে সহিংসতাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য দোষারোপও করেছেন। তবে রবিবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প টুইটার বার্তায় তার সমর্থকদের মহৎ দেশপ্রেমিক বলে আখ্যায়িত করেছেন।
এদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, আমেরিকায় জাতিগত বিভেদ জেঁকে বসেছে। দেশটির বিচার বিভাগের সহায়তায় পুলিশের পক্ষ থেকে তারা যথারীতি বৈষম্য ও সহিংসতার শিকার হয়েই চলেছে। এ বিষয়টি জাতিসংঘকে ভাবিয়ে তুলেছে। বিশেষ করে গত ২৫ মে আমেরিকার মিনিসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলিসে এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ জর্জ ফ্লয়েড নামের এক কৃষ্ণাঙ্গকে পাশবিক কায়দায় হত্যা করার পর জাতিসংঘের টনক নড়ে। জাতিসংঘের ‘বর্ণবাদ অপসারণ কমিটি’ সম্প্রতি মার্কিন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা যেন জরুরি ভিত্তিতে পুলিশ প্রশাসনে কাঠামোগত বর্ণবাদ ও বর্ণবৈষম্য দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়। এই কমিটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আমেরিকার সরকার এবং স্থানীয় ও সরকারি কর্মকর্তারা যেন তাদের বিচার বিভাগ ও পুলিশ বিভাগে বিদ্যমান বৈষম্যমূলক পদক্ষেপগুলো অপসারণ করে। বিশেষ করে যারা বর্ণবৈষম্যের শিকার হয়েছে তাদের অধিকার বাস্তবায়নে যেন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর আগে জানিয়েছেন, তিনি এমন একটি নির্বাহী আদেশ চূড়ান্ত করতে যাচ্ছেন যা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে ‘বিরাজমান স্ট্যান্ডার্ড’ কাজে লাগাতে উৎসাহিত করবে। এর আগেও জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচলেট আমেরিকায় বর্ণবাদকে ‘কাঠামোগত’ বলে অভিহিত করে এর নিন্দা করেছিলেন। ব্যাচলেট বলেন, আমেরিকায় নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গদের হত্যা বন্ধ করা উচিত এবং তাদের দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়া উচিত। কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর পুলিশি সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। যে কাঠামোগত বর্ণবাদ মার্কিন সমাজকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে সেই বর্ণবাদ বিরোধীদের কণ্ঠ রোধ না করে তাদের দাবি-দাওয়াগুলো শুনতে হবে। জাতিসংঘের এই আহ্বানের মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারের দাবিদার আমেরিকার সমাজে বিদ্যমান প্রকৃত স্বরূপ উন্মোচিত হয়ে গেছে।
প্রকৃতপক্ষে জাতিগত, শিক্ষামূলক, পেশাগত এবং সামাজিক বৈষম্যের পাশাপাশি কৃষ্ণাঙ্গদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনাগুলো আমেরিকার সমাজে এখন সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমেরিকার বিগত তিন শতাব্দীর ইতিহাসে কৃষ্ণাঙ্গরা সবসময়ই দাসত্ব, ব্যাপক নির্যাতন, হত্যা এবং সহিংসতার টার্গেট ছিল। দিন দিন এই সমস্যা আমেরিকায় এখন চরম আকার ধারণ করেছে। তার প্রভাবও পড়ছে নির্বাচনে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আকার-ইঙ্গিতে শ্বেতাঙ্গদের পক্ষ নিয়ে পুলিশকে তার কাজ চালিয়ে যেতে বলছে। অর্থাৎ আরও কোনো কৃষ্ণাঙ্গকে হত্যা করলেও পুলিশের কাজে হস্পক্ষেপ করবে না। আর ফ্যাসাদকে কীভাবে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাওয়া যায় তা নিয়ে কৌশল তৈরি করছে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। তিনি শ্বেতাঙ্গদের চটাতে চাইছেন না আবার কৃষ্ণাঙ্গদের বিক্ষোভকেও খুব বেশি সমর্থন করছেন না। তবে নির্বাচনে যে এবার এই জাতিগত ইস্যু প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে তা অনেকটা নিশ্চিত।