শিরোনাম
বুধবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

কৃষকদের হরতালে স্থবির ভারত

জন্মদিন না পালনের সিদ্ধান্ত সোনিয়ার । দিনটিকে কৃষকদের প্রতি উৎসর্গ মমতার

কলকাতা প্রতিনিধি

কৃষকদের হরতালে স্থবির ভারত

কৃষকের ডাকা ভারতজুড়ে হরতাল পালিত হয়েছে। প্রায় গোটা ভারত ছিল গতকাল স্থবির। তবে একাধিক রাজ্যে মিশ্র সাড়া পড়েছে। শান্তিপূর্ণ হরতালের কথা বলা হলেও অন্ধ্রপ্রদেশ, পাঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িষ্যাসহ কয়েকটি রাজ্যে বাম দলগুলো ও কৃষক সংগঠনের তরফে সড়ক অবরোধ, রেল অবরোধে শামিল হয়। দাহ করা হয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কুশপুত্তলিকা। কিছু জায়গায় জোর করে দোকান-পাট বন্ধেরও অভিযোগ ওঠে।

কেন্দ্রীয় সরকারের তিন কৃষি আইনকে বিতর্কিত দাবি করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে দিল্লি-হরিয়ানা সীমান্তের সিঙ্ঘু ও তিকরি এলাকায় হাজার হাজার কৃষক গত ১৩ দিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। এই সমস্যা সমাধানে কৃষক সংগঠন ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে কয়েক দফার বৈঠকও হয়েছে। কিন্তু দুই পক্ষই তাদের অবস্থানে অনড়। এ অবস্থায় গতকাল দেশজুড়ে হরতালের ডাক দেয় কৃষক সংগঠনগুলো। আর কৃষকের ডাকা এই অরাজনৈতিক হরতালকে কংগ্রেস, সিপিআইএম, তৃণমূল কংগ্রেস, বসপা, এনসিপি, আপ, ডিএমকে’এর মতো রাজনৈতিক দলগুলো ও শ্রমিক সংগঠনগুলো সমর্থন দেওয়ায় তা অন্য চেহারা নিয়েছে। গোটা দেশেই হরতালের প্রভাব পড়েছে। যদিও কৃষক সংগঠনের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল সাধারণ মানুষের সমস্যা তৈরি না করেই শান্তিপূর্ণভাবেই হরতাল পালন করা হবে। হরতালে ছাড় দেওয়া হয়েছে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য পরিষেবায়।

তবু দেশজুড়ে কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে। পডুচেরিতে হরতালের সমর্থনে পথে নামে কংগ্রেস। এমনকি রাস্তায় নেমে বিক্ষোভে অংশ নিতে দেখা যায় কেন্দ্রীয় শাসিত রাজ্য পডুচেরির মুখ্যমন্ত্রী ভি. নারায়ণস্বামীকে। গাজীপুর (দিল্লি), গাজিয়াবাদ (উত্তরপ্রদেশ) সীমান্তেও হরতালের সমর্থনে রাস্তায় বসে পড়ে অবরোধ শুরু করে কৃষক সংগঠনের সদস্যরা। এক কৃষক নেতার কথায় ‘সরকার যদি কোনো আইন চালু করতে পারে তবে তা প্রত্যাহারও করতে পারে। সরকারের উচিত কৃষক সংগঠন ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে একযোগে কাজ করা।’ তেলেঙ্গানার কামারেড্ডি ও রঙ্গা এলাকায় হরতালের সমর্থনে রাস্তায় নামে তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি (টিআরএস)-এর নেতা কে কবিতা ও কে টি রামা রাও। উত্তর-পূর্বের রাজ্য আসামেও হরতালের সমর্থনে রাস্তায় নামে বিভিন্ন সংগঠনগুলোর সদস্যরা। কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুর বিধান সৌধে অবস্থিত মহাত্মা গান্ধীর মূর্তির সামনে হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ দেখায় কংগ্রেস কর্মীরা। অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়ওয়াড়াতে বিক্ষোভ দেখায় বাম সংগঠনগুলোর সদস্যরা। ওড়িষ্যার ভুবনেশ্বরসহ একাধিক জায়গায় রেল অবরোধে শামিল হয় বাম রাজনৈতিক দল, শ্রমিক ও কৃষক সংগঠনের সদস্যরা। মহারাষ্ট্রের বুলধানা জেলার মাল্কাপুরে রেল অবরোধ করে ‘স্বাভিমানি শ্বেতকারী স্বাগতানা’ আমে একটি সংগঠনের সদস্যরা।

কৃষকদের প্রতি উৎসর্গ মমতার : এদিকে গতকালের হরতালের দিনটি আন্দোলনকারী কৃষকদের প্রতি উৎসর্গ করেন মমতা ব্যানার্জি। রানীগঞ্জে একটি জনসভা থেকে এ ব্যাপারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মমতা বলেন, ‘সাধারণত আমি কোনো হরতালকে সমর্থন দিই না। কারণ এমনিতেই মানুষ অসুবিধায় আছে। তা সত্ত্বেও আমি বলব যে কৃষক তার জমি, তার পিঠ বাঁচানোর জন্য লড়াই জারি রেখেছে- আমাদের দল প্রথম দিন থেকেই তাকে সমর্থন জানিয়ে আসছে এবং তা জারি থাকবে।’

জন্মদিন পালন করবেন না সোনিয়া : এদিকে কেন্দ্রের কৃষি আইনের বিরোধিতা করে কৃষকদের চলমান বিক্ষোভ ও দেশজুড়ে কভিড-১৯ প্রকোপের কারণে নিজের জন্মদিন পালন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কংগ্রেস অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি সোনিয়া গান্ধী। আজ সোনিয়ার ৭৪তম জন্মদিন। দিল্লিতে অতিরিক্ত বায়ু দূষণের কারণেই চিকিৎসকদের পরামর্শে বর্তমানে গোয়ায় অবস্থান করছেন তিনি।

কেজরিওয়ালকে গৃহবন্দী করে রাখার অভিযোগ : আন্দোলনকারী কৃষকদের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টি (আপ) প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গৃহবন্দী (হাউস অ্যারেস্ট) করা হয়েছে বলে দাবি করেছে দল।

সর্বশেষ খবর