পৃথিবীকে বাঁচাতে অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনের শেষ দিনে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন মোকাবিলার লক্ষ্যে তৃতীয় একটি খসড়া চুক্তি প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় প্রকাশিত এই খসড়ায় নতুন বেশ কিছু প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে; যা উষ্ণতা মোকাবিলায় বৈশ্বিক প্রচেষ্টাকে জোরদার করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা প্রত্যাশা করছেন। শুক্রবার কপ২৬ সম্মেলনের সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পর জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসায় অতিরিক্ত সময়ে গড়ায় এবারের এই সম্মেলন। প্রকাশিত নতুন খসড়া চুক্তিতে কয়লা শক্তি এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ভর্তুকি বন্ধ করার আহ্বান রয়েছে। তবে এই রূপান্তরের জন্য সহায়তার প্রয়োজনীয়তার কথা চুক্তিতে স্বীকার করা হয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সব পক্ষকে ২০২২ সালের শেষ নাগাদ তাদের ২০৩০ সালের গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের হ্রাসকৃত লক্ষ্যমাত্রা আবার পর্যালোচনা এবং এ বিষয়ে দৃঢ় পদক্ষপ নেওয়ার আহ্বানও রয়েছে। নতুন চুক্তিতে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনে খাপ খাইয়ে নিতে সহায়তা করার জন্য ২০১৯ সালের স্তর থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে উন্নত দেশগুলোর জলবায়ু অর্থায়ন সামগ্রিকভাবে কমপক্ষে দ্বিগুণ করার আহ্বান জানানো হয়। গতকাল আরও পরের দিকে এই চুক্তির বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল; যেখানে চুক্তির শর্তে আরও পরিবর্তন অথবা আপত্তি আসতে পারে। ওই অধিবেশনের পর বিশ্বের প্রায় ২০০ দেশের প্রতিনিধিরা সম্মেলনস্থল ত্যাগ করার কথা রয়েছে। এক দশক আগে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় ১০০ বিলিয়ন ডলারের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় গভীর অনুশোচনা প্রকাশ করা হয়েছে চুক্তিতে। এর আগে শুক্রবার ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছিলেন, দুই সপ্তাহের আলোচনায় এক উচ্চাভিলাষী ফলাফল আসবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। যদিও এই সম্মেলন এখন অতিরিক্ত সময়ে গড়িয়েছে। অন্য একটি প্রস্তাবে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত গ্রিনহাউস নিঃসরণের জন্য ২০২৫ সালের মধ্যে নতুন লক্ষ্যমাত্রা জমা দিতে উৎসাহিত করা হয়। প্রত্যেক পাঁচ বছর অন্তর এই লক্ষ্যমাত্রা পর্যালোচনার কথাও বলা হয় ওই প্রস্তাবে। যদিও অতীতে উন্নয়নশীল দেশগুলো প্রত্যেক পাঁচ বছর অন্তর এটি করবে বলে প্রত্যাশা করা হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির প্রাক-শিল্পযুগের তুলনায় চলতি শতাব্দীর শেষ নাগাদ বৈশ্বিক উষ্ণতা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস (২.৭ ফারেনহাইট) হ্রাসের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য অর্জনের পথে নেই বিশ্ব। গ্লাসগো থেকে আলজাজিরার প্রতিনিধি অ্যান্ড্রু সিমনস বলেছেন, শনিবার প্রকাশিত খসড়া চুক্তির শর্তগুলো যৌক্তিকভাবে ইতিবাচক মনে হয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিক একটি চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য সবাইকে এই চুক্তিতে সম্মতি জানাতে হবে। বিবিসি ও আলজাজিরা