এবার ইউক্রেনে নিয়োজিত রুশ বাহিনী গোটা দোনেৎস্ক অঞ্চল দখল করার দিকে মনোযোগ দেবে বলে গতকাল জানিয়েছেন লুহানস্কের গভর্নর। এর আগে রুশ প্রশাসন দাবি করেছে, লিসিচানস্ক শহর দখলের মধ্য দিয়ে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় লুহানস্কের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করেছে তারা। এখন দোনেৎস্ক অঞ্চলের স্লোভিয়ানস্ক শহরে ‘প্রচণ্ড লড়াই’ শুরু হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে রুশ বাহিনীর হামলায় সেখানে ছয়জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২০ জন। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ এ কথা জানিয়েছে। খবর আল-জাজিরার।
যুদ্ধের প্রথম সপ্তাহে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে হামলা চালালেও পরে সেখান থেকে সরে আসে রুশ সেনারা। এরপর রাশিয়ার আক্রমণ কেন্দ্রীভূত হয় লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক অঞ্চল নিয়ে গঠিত শিল্পাঞ্চলে দনবাসের কেন্দ্রে। ২০১৪ সাল থেকে রাশিয়া-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী দলগুলো এ অঞ্চলের ইউক্রেনের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। ইউক্রেনীয় বাহিনী বোমা বর্ষণে বিধ্বস্ত শহর লিসিচানস্ক ছেড়ে যাওয়ার পর রাশিয়া জানিয়েছে, লুহানস্ক এখন পুরোপুরি তাদের নিয়ন্ত্রণে।
লুহানস্কের গভর্নর সের্হেই গাইদাই রয়টার্সকে বলেন, সামরিক দিক থেকে অবস্থান ছেড়ে দেওয়া খারাপ। কিন্তু (লুহানস্ক হারানো) তেমন গুরুতর কিছু নয়। আমাদের যুদ্ধ জিততে হবে, লিসিচানস্কের লড়াই নয়। তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাপারটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক, কিন্তু এতেই যুদ্ধে হেরে যাইনি।’ সের্হেই গাইদাই বলেন, লিসিচানস্কে ইউক্রেনীয় সৈন্যরা ঘেরাও হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে ছিল। ‘এখনো তাদের (রুশ বাহিনীর) প্রথম লক্ষ্য দোনেৎস্ক অঞ্চল। স্লোভিয়ানস্ক ও বাখমুতে হামলা চালানো হবে। বাখমুতে ইতোমধ্যে ভারী গোলাবর্ষণ শুরু হয়েছে,’ বলেন তিনি। গাইদাই বলেন, তিনি আশা করেছিলেন যে স্লোভিয়ানস্ক এবং বিশেষ করে বাখমুত শহর আক্রমণের মুখে পড়বে; কারণ রাশিয়া পূর্ব ইউক্রেনের দনবাসের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করছে। মস্কো বলেছে, সেভেরোদোনেৎস্কের পর লিসিচানস্ক দখলের অর্থ হলো, তারা লুহানস্ক অঞ্চল ‘স্বাধীন’ করতে পেরেছে, যা ক্রেমলিনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল। এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রবিবার স্লোভিয়ানস্ক ও ক্রামাতোরস্ক শহরে গোলাবর্ষণ করেছে রুশ সেনাবাহিনী। খারকিভ শহরেও হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলায় মাল্টিপল লঞ্চার রকেট সিস্টেমের পাশাপাশি সোভিয়েত আমলের স্মের্চ রকেট ব্যবহার করা হয়। রাত্রিকালীন ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, শুধু স্লোভিয়ানস্কেই ছয়জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ২০ জন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ইয়েভা নামের এক শিশুও রয়েছে। আগস্টে তার বয়স হতো ১০ বছর। এদিকে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইউরিভ সাক বলেছেন, রাশিয়া লুহানস্ক দখলে নিতে পারলেও দনবাসের যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি।লুহানস্ক জয় মহাকাশেও উদ্যাপন : পূর্ব ইউক্রেইনের লুহানস্ক অঞ্চল কব্জায় আসার সুসংবাদকে উদ্যাপন করেছন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের রুশ নভোচারীরাও। রুশ মহাকাশ সংস্থা রসকসমস লুহানস্কে মস্কোর বিজয়কে ‘পৃথিবী ও মহাকাশ উভয় জায়গাতে উদ্যাপনের মতো মুক্তির দিন’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। সংস্থাটি এ উপলক্ষে বেশ কিছু ছবিও প্রকাশ করেছে যেখানে হাস্যোজ্জ্বল তিন মহাকাশচারী ওলেগ আরতেমেয়েভ, ডেনিস মাতভিভ ও সের্গেই কোর্সাকভকে রাশিয়ার স্বীকৃতি পাওয়া দুই প্রজাতন্ত্র লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক ও দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিকের পতাকা ধরে রাখতে দেখা যাচ্ছে। ‘লুহানস্ক অঞ্চলের দখলে থাকা অংশের বাসিন্দাদের জন্য এটি সেই দীর্ঘ-প্রতীক্ষিত দিন, যার জন্য তারা আট বছর ধরে অপেক্ষা করেছে। আমরা নিশ্চিত যে ৩ জুলাই, ২০২২ গণপ্রজাতন্ত্রী লুহানস্কের ইতিহাসে চিরকাল থাকবে,’ মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে বলেছে রসকসমস।