বেশ কিছুদিন ধরেই চীন ও আমেরিকার মধ্যে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে মূলত একটি সফর ঘিরে। আর সেটা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যানসি পেলোসির তাইওয়ান সফরের ঘোষণা। এখনো ওই সফরের দিনক্ষণ ঠিক হয়নি। কিন্তু আগামী মাসে এই সফরের সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু চীন বলছে, এই সফর দুই দেশের সম্পর্কে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। চীন এ ক্ষেত্রে তাইওয়ানে সামরিক ব্যবস্থাও নিতে পারে। এর মধ্যে গত পরশু চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের মধ্যে ভার্চুয়াল বৈঠক হলো। এক-দুই মিনিটের বৈঠক ছিল না এটি। দুই নেতা পাক্কা দুই ঘণ্টা ১৭ মিনিট কথা বলেন। মূলত তাইওয়ান নিয়ে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। উত্তপ্ত বাক্যালাপ হয়েছে বলেও সূত্র জানিয়েছে।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের পাশে এই সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিনকেনসহ আরও কয়েকজন মার্কিন অফিসার উপস্থিত ছিলেন।
কভিড রোগের শুরু থেকে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ক্রমশ খারাপ হয়েছে। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু এরপর বাইডেন ক্ষমতায় আসার পরেও তার উন্নতি হয়নি বরং ইউক্রেন যুদ্ধকে সামনে রেখে সম্পর্ক আরও জটিল হয়েছে।এর মধ্যে পরশু দুই দেশের নেতাদের এই বৈঠক হলো। কিন্তু বৈঠকে কী আলোচনা হলো? কী বাদ গেল, তা বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ফোনালাপে বাইডেন ও শি সশরীর মুখোমুখি বৈঠকে বসার ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন। এটি হবে তাদের প্রথম সশরীর মুখোমুখি বৈঠক। তবে কখন, কোথায় এই বৈঠক হবে তা পরে আলোচনা করে ঠিক করা হবে জানানো হয়েছে।
বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তির দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বিভিন্ন বিরোধ নিয়ে বাইডেন ও শির মধ্যে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় পক্ষ এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া বলেছে, বাইডেনের সঙ্গে ফোনালাপে তাইওয়ানের ব্যাপারে মার্কিন নীতির বিষয়ে কঠোর ছিলেন শি। এই ইস্যুতে তিনি কড়া শব্দ ব্যবহার করেছেন।
মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের পরিকল্পনার খবরে ক্ষুব্ধ চীন। পেলোসির পরিকল্পনাকে বড় ধরনের উসকানি হিসেবে দেখছে বেইজিং। তবে পেলোসির সফরের বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কিন্তু বাইডেনকে গতকাল শি বলেছেন, যারা আগুন নিয়ে খেলবে, তারা পুড়বে। তিনি আশা করেন, যুক্তরাষ্ট্র এই বিষয়টি পুরোপুরি বুঝবে।
বাইডেনকে শি বলেছেন, তাইওয়ান ইস্যুতে চীন সরকার ও জনগণের অবস্থান একই। ১৪০ কোটির বেশি চীনা জনগণের চাওয়া হলো, চীনের জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখ তা সুরক্ষিত থাকুক। জবাবে শিকে আশ্বস্ত করে বাইডেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নীতি অপরিবর্তিত থাকবে। এই নীতির আওতায় চীনের সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র। তবে যে কোনো ধরনের জোরজবরদস্তির তারা বিরোধিতা করে। তাইওয়ানের স্বতন্ত্র শাসনকে তারা অনুমোদন দেয়। এদিনের বৈঠকে দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়েও কথা হয়েছে বলে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে।
অবশ্য মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, আলোচনায় চীনের বিরুদ্ধে থাকা গণহত্যা, জোরপূর্বক শ্রমচর্চার মতো সংবেদনশীল বিষয় উত্থাপন করেছেন বাইডেন। বাণিজ্য নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যে অভিযোগ করে থাকে, তা গতকাল শির সঙ্গে ফোনালাপে তুলে ধরেন বাইডেন।
এদিকে এই সফর নিয়ে একটি বিশ্লেষণ করেছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স। তাতে বৈঠকের বিষয়ে বেইজিংয়ের দেওয়া বিবৃতির বরাত দিয়ে ‘জার্মান মার্শাল ফান্ড অব দ্য ইউনাইটেড স্টেটস’-এর চীন-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ বনি গ্যাসের বলেছেন, ‘তাইওয়ান নিয়ে আলাপের অংশটি একেবারে গত বৈঠকের আলাপের মতোই।’ আবার সেন্টার ফর আ নিউ আমেরিকান সিকিউরিটির’ ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় নিরাপত্তা ফেলো জ্যাকব স্টোকস বলেছেন, ‘আমার উপলব্ধি হলো এই বৈঠক না হলে উত্তেজনা যে পর্যায়ের হতো, দুই নেতার সরাসরি কথা বলার ফলে উত্তেজনার সেই পারদ সম্ভবত কিছুটা হলেও কমেছে।’ তবে তিনি বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের টানাপোড়েনের কিছু ইস্যু রয়ে গেছে। যেমন স্পিকার পেলোসির তাইওয়ানে সফরের সম্ভাবনা রয়েছে।’