সময়টা ২০১১ সালের ২ মে। গোটা বিশ্ব চমকে গিয়েছিল আল কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর খবর শুনে। লাদেনের মৃত্যুতে চরম ধাক্কা খায় আল কায়েদা। সেই সময়ে ওই জঙ্গি সংগঠনটিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেয় ইসলামিক স্টেট অর্থাৎ আইএস। এমন একটি সন্ধিক্ষণে আল কায়েদার দায়িত্ব নেন আয়মান আল জাওয়াহিরি। যিনি পেশায় ছিলেন একজন চক্ষু চিকিৎসক। পরে পেশা বাদ দিয়ে নাম লেখান জঙ্গি সংগঠনে। যিনি লাদেনের জীবদ্দশায় সংগঠনে দ্বিতীয় ব্যক্তি ছিলেন। ২০০১ সালে মার্কিন টুইন টাওয়ারে যে হামলা হয় তার অন্যতম হোতা ছিলেন জাওয়াহিরি। আমেরিকা তাঁর মাথার দাম ঘোষণা করেছিল আড়াই কোটি ডলার (প্রায় আড়াই শ কোটি টাকা)। আল কায়েদা প্রধান সেই জাওয়াহিরিই নিহত হলেন লাদেন হত্যার ঠিক ১১ বছরের মাথায়। লাদেনের মৃত্যু হয়েছিল পাকিস্তানে। ঘটনাচক্রে মিসরীয় জওয়াহিরির মৃত্যু হলো আফগানিস্তানে। লাদেনের মতো তালেবানদের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল জাওয়াহিরির। মার্কিন কর্তৃপক্ষ বলছে, জাওয়াহিরিকে খতম করার জন্য পরিকল্পনার বীজ বোনা হয়েছিল বছর খানেক আগে। আফগানিস্তান থেকে সেনা সরানোর সময় থেকে তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করা হতে থাকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়াশিংটনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জাওয়াহিরির সঙ্গে আল কায়েদার যে নেটওয়ার্কের সরাসরি যোগাযোগ ছিল তাদের ওপর বছর খানেক আগে থেকেই নজরদারি শুরু হয়। আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে একটি সেফ হাউসে রয়েছেন আল কায়েদা প্রধান- সেটা গোয়েন্দারা জানতে পারে। জওয়াহিরি কী করেন, কী খান, কোথায় যান গত কয়েক মাস ধরে তাঁর জীবনযাপনের ওপর নজর রাখছিলেন মার্কিন গোয়েন্দারা। এ নিয়ে ওয়াশিংটনের কর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগও রাখতেন তারা। সেই বাড়ির ব্যালকনিতে কখন উপস্থিত হন জাওয়াহিরি, সেদিকে দৃষ্টি রাখেন মার্কিন কর্মকর্তারা। ওই ভবনটির গঠন ও গাঠনিক কাঠামো নিয়ে গোপনে বিশ্লেষণ করেন তারা। যাতে অভিযানে কোনো বেসামরিক মানুষ মারা না যায়, সে জন্য ওই বাড়িতে অবস্থানকারী অন্যদের বিষয়ে নিরপেক্ষ বিশ্লেষণকারীরা বিশ্লেষণ করেন। কিন্তু বাড়িটি কাবুলের ডাউনটাউনে অবস্থিত হওয়ায় বিষয়টি জটিল হয়ে পড়ে। গত ২৫ জুলাই আরও একটি গোপন বৈঠকে জওয়াহিরির বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর অনুমোদন দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। শর্ত দেওয়া হয়, ওই অভিযানের সময় যাতে কোনো সাধারণ মানুষের মৃত্যু না ঘটে। বৈঠকের ঠিক পঞ্চম দিনের মাথায় অর্থাৎ ৩০ জুলাই ভারতীয় সময় সকাল ৭টা বেজে ১৮ মিনিটে ড্রোনের মাধ্যমে কাবুলে অভিযান চালায় আমেরিকা। ড্রোনটি ছিল ‘হেলফায়ার’ নামে এক ধরনের বিশেষ ক্ষেপণাস্ত্র। যার আঘাতে ওই সেফ হাউসের বারান্দায় মৃত্যু হয় আল কায়েদা প্রধানের। ওই অভিযানে অবশ্য আর কোনো ক্ষয়ক্ষতি ঘটেনি বলেই দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
জওয়াহিরি নিহত হতেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বাইডেনের গর্বিত টুইট, ‘কত দেরি হলো, সেটা বড় কথা নয়, কোথায় লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করেছিল, তাতেও ফারাক পড়ে না। আমরা ঠিক খুঁজে বের করবই।’