যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি সত্ত্বেও সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন দেশগুলোর সংগঠন ‘ওপেক প্লাস’ তেল উত্তোলন কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে সৌদি আরবকে এর জন্য পরিণতি ভোগ করতে হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত মঙ্গলবার এমন প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন। ওদিকে মার্কিন সিনেটের একটি অংশ ঘোষণা করেছে সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়ন করছে হোয়াইট হাউস। গত সপ্তাহে তেল উৎপাদন কমানোর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সৌদি নেতৃত্বাধীন তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর সংগঠন ওপেকের সদস্য, রাশিয়াসহ মিত্রদেশগুলো। এ সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপটে সিনেটের ফরেন রিলেশন কমিটির চেয়ারম্যান প্রভাবশালী ডেমোক্র্যাট সিনেটর বব মেনেন্দেজ বলেছিলেন, অবিলম্বে অস্ত্র বিক্রিসহ সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের সহযোগিতা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
এরপরই এ বিষয়ে বাইডেনও কথা বললেন। অবশ্য কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে তিনি ভাবছেন, সিএনএনের জ্যাক ট্যাপারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ নিয়ে কিছু বলেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জ্যঁ-পিয়েরে বলেছেন, নীতি পর্যালোচনা করা হবে। তবে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে কোনো সময়সীমা দেননি তিনি। পুনর্মূল্যায়নের এ কাজে কে নেতৃত্ব দেবেন, সে তথ্যও দেননি। গত সপ্তাহে ওপেক প্লাস গ্রুপ বলেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের চাপকে উপেক্ষা করে দিনে ২০ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন কমিয়ে দেবে। তারা বলেছে, এই সিদ্ধান্ত তেলের মূল্যের জন্য নয়, তেলের বাজারকে স্থিতিশীল করতে নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সুদের হার বাড়িয়ে দেওয়া এবং বৈশ্বিক আর্থিক মন্দার প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, তেলের উত্তোলন কমিয়ে দেওয়ার কারণে বিশ্বজুড়ে মূল্যবৃদ্ধি পাবে। যা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসনে অব্যাহত অর্থ জোগান দিয়ে যাবে।ওদিকে নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। এমন সময় তেলের উত্তোলন কমিয়ে দেওয়াকে বাইডেন প্রশাসনের জন্য হোঁচট হিসেবে দেখেন কেউ কেউ। ওয়াশিংটন থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক কিমবারলি হলকেট বলেছেন, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষই সুবিধা পাবে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি কোনোভাবেই প্রেসিডেন্টের রাজনীতির জন্য শুভ নয়। অন্য একটি বিষয়ে হোয়াইট হাউস হয়তো খুশি হবে না। তা হলো, রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ছে সৌদি আরব।
এদিকে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান বলেছেন, ওপেক প্লাসের সিদ্ধান্ত একেবারেই অর্থনীতিকেন্দ্রিক এবং সদস্যদেশগুলো সর্বসম্মতভাবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আল-অ্যারাবিয়া টেলিভিশনকে তিনি বলেন, ওপেক প্লাস সদস্যরা দায়িত্বশীলভাবে কাজ করেছে এবং যথাযথ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ইউক্রেনে হামলার জবাব হিসেবে রাশিয়ার তেলের দাম বেঁধে দেওয়ার চেষ্টা করছে পশ্চিমা দেশগুলো। তবে দেশটি এ প্রচেষ্টার বিরোধিতা করে আসছে। তেল উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সৌদি আরব রাশিয়ার বশ্যতা মেনে নিয়েছে বলে অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা চুপচাপ দেশটির বৃহত্তম আরব অংশীদারকে তেল উৎপাদন কমানোর ধারণা ত্যাগ করতে রাজি করানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু সৌদি আরবের ‘ডি ফ্যাক্টো’ শাসক যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এতে প্রভাবিত হননি।
হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, ‘কীভাবে এ বিষয়ে এগিয়ে যাওয়া উচিত, সেটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে কংগ্রেসের সঙ্গে কাজ করবেন বাইডেন।
ওদিকে মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে অবস্থিত সৌদি আরবের দূতাবাস একটি বিবৃতি দিয়েছে। তাতে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ককে কৌশলগত বলে বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এতে মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতায় অগ্রগতি হয়েছে। সৌদি আরবের কিছু সমর্থক যুক্তি দেখিয়েছেন যে, ওয়াশিংটন ও রিয়াদের মধ্যে নিরাপত্তামূলক সম্পর্ক পারস্পরিক সুবিধার ভিত্তিতে। এটা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে যাবে এমন নয়। নেড প্রাইস বলেছেন, বাইডেন প্রশাসন ইরানের বিষয়কে এড়িয়ে যাবে না। সৌদি আরবের কাছে যুক্তরাষ্ট্র যেসব অস্ত্র বিক্রি করে তার বেশির ভাগই তৈরি করা হয়েছে ইরানের হুমকির বিষয়টি মাথায় রেখে।