মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ইউক্রেন যুদ্ধে বেলারুশ কি যুক্ত হচ্ছে?

ইউক্রেন যুদ্ধে বেলারুশ কি যুক্ত হচ্ছে?

রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন গতকাল বেলারুশের রাজধানী মিনস্কে পৌঁছেছেন। তাকে স্বাগত জানান বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো। আলোচনায় লুকাশেঙ্কো মস্কোকে ইউক্রেনে আক্রমণের জন্য একটি মঞ্চ প্রস্তুত করে দেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। তবে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে, ইউক্রেনে পদাতিক অভিযানে অংশ নিতে সব থেকে ঘনিষ্ঠ মিত্র বেলারুশকে ঠেলছে রাশিয়া। আর গতকালও কিয়েভের ওপর আরও হামলার ঘটনা ঘটেছে। যদিও গতকাল ক্রেমলিন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বেলারুশকে সংঘাতে টানবে না রাশিয়া। ‘বেলারুশকে যুদ্ধে ঠেলা হচ্ছে’ এমন কথাবার্তাকে ‘ভিত্তিহীন এবং অর্থহীন’ বলে দাবি করেছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ফুটেজে দেখা গেছে পুতিন মিনস্কের একটি বরফাচ্ছন্ন বিমানবন্দরে একটি বিমান থেকে নামছেন। তাকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন লুকাশেঙ্কো। গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের পর এই প্রথম বেলারুশে গেলেন পুতিন। বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো জানিয়েছেন, পুতিনের সঙ্গে তিনি ‘সামরিক-রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। এ ছাড়া অঞ্চলের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করবেন।’ ২০২০ সালে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো দেশের মধ্যে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে পড়েন। ওই সময় লুকাশেঙ্কোকে সমর্থন দেন রুশ প্রেসিডেন্ট। এদিকে ইউক্রেন জানিয়েছে, পুতিন-লুকাশেঙ্কোর বৈঠক তারা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। বেলারুশ রাশিয়ার অন্যতম ঘনিষ্ঠ মিত্র। ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে ‘সামরিক অভিযান’ চালানোর জন্য মস্কোকে তাদের ভূমি ব্যবহার করতে দিয়েছিল দেশটি। তবে দেশটির প্রেসিডেন্ট আলেকজান্দার লুকাশেঙ্কো বরাবরই বলে আসছেন, বেলারুশের সেনা ইউক্রেনে পাঠানোর কোনো অভিপ্রায় তার নেই। কিন্তু কিইভের আশঙ্কা, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে নতুন স্থল আক্রমণে যোগ দিতে ও ফের নতুন একটি যুদ্ধক্ষেত্র খোলার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে পুতিন সেখানে যাচ্ছেন।

প্রায় দশ মাস ধরে ইউক্রেনের ওপর হামলা চালিয়ে গেলেও তেমন সুবিধা করে উঠতে পারছে না রাশিয়া। তবে এখন স্থল হামলার চেয়ে ইউক্রেনের বেসামরিক  অবকাঠামোর ওপর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। এবার বেলারুশের সহায়তায় ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আরও বড় আকারের সামরিক অভিযানের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

 আর পুতিনের এই সফরেই এমন উদ্যোগ চূড়ান্ত করতে পারেন বলে ইউক্রেন মনে করছে। বেলারুশে মোতায়েন রুশ সৈন্যরা মহড়ার প্রস্তুতি নেওয়ায় এমন আশঙ্কা বাড়ছে।  উল্লেখ্য, রাশিয়াকে সাহায্য করলেও বেলারুশ এখনো সরাসরি ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েনি।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি রবিবার বলেন, রাশিয়া ও বেলারুশ সীমান্তে সুরক্ষা নিশ্চিত করা সরকারের অগ্রাধিকারের মধ্যে পড়ে। যে কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি চলছে বলে তিনি আশ্বাস দেন। জেলেনস্কির মতে, লুকাশেঙ্কোকে যাই করতে রাজি করা হোক না কেন, সেটা ইউক্রেন ও ইউক্রেনীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মতোই ন্যক্কারজনক হবে। রাশিয়ার তীব্র আক্রমণ সত্ত্বেও বাখমুত শহরের ওপর ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

এদিকে, গতকাল ভোরেই ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ ও সংলগ্ন এলাকার ওপর আবার রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। সামরিক প্রশাসনের সূত্র অনুযায়ী নয়টি ইরানে তৈরি ড্রোন ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। তবে সতর্কবাণীর মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সাধারণ মানুষকে নিরাপদ জায়গায় থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেলেও শহরে নতুন ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যায়নি। শহরের মেয়র ভিতালি ক্লিচকো বলেন, পরে বিস্তারিত জানানো হবে।

সর্বশেষ খবর