শুক্রবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

গরমে অশনিসংকেত!

বিশ্বে রেকর্ড হারে বৃদ্ধি পেতে পারে তাপমাত্রা

গরমে অশনিসংকেত!

এপ্রিলের গা জ্বালানো গরমে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশসহ এশিয়ার বেশির ভাগ দেশ। রোজই হচ্ছে রেকর্ড। গত দুই সপ্তাহ বৃষ্টির দেখা নেই। অসহনীয় গরমে কাহিল সবাই। এর মধ্যেই এক নতুন আশঙ্কার কথা জানালেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা।

চলতি বছর এবং আগামী বছরে পৃথিবীর তাপমাত্রা রেকর্ড হারে বৃদ্ধি পাবে। এর কারণ হিসাবে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ‘এল নিনো’র প্রত্যাবর্তন ঘটছে। আর এর প্রভাবেই বিশ্বে তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পাবে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স সূত্রে এই খবর জানা গেছে। আবহাওয়ার বিভিন্ন মডেল দেখে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন যে, প্রশান্ত মহাসাগরে ‘লা নিনা’ পরিস্থিতির পর ‘এল নিনো’র প্রত্যাবর্তন ঘটছে। ‘লা নিনা’ পরিস্থিতির ফলে তাপমাত্রা কমে। আর ‘এল নিনো’র ক্ষেত্রে ঠিক উল্টোটা হয়।

চিলি, পেরুসহ দক্ষিণ আমেরিকার প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব উপকূলবর্তী দেশগুলোতে ‘এল নিনো’ ঘটে। ২ থেকে ৭ বছর অন্তর ফেরে এই পরিস্থিতি। এর ফলে মহাসাগরের পানিস্তরের (সি সারফেস) তাপমাত্রা ২ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পায়। এর ফলে উপকূল এলাকার বায়ুমন্ডলও গরম হয়ে ওঠে। এই পরিস্থিতির জেরে প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম প্রান্ত থেকে গরম জলের স্রোত মহাসাগরের পূর্ব দিকে ধেয়ে যায়। এল নিনো চলাকালে নিরক্ষরেখা বরাবর পশ্চিমমুখী বায়ুপ্রবাহ ধীর হয়ে যায় এবং পানির উষ্ণ স্রোতগুলোর পূর্বমুখী প্রবণতা দেখা দেয়, এতে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। ওই সময় সমুদ্রের তলদেশ থেকে ঠান্ডা পানিও ওপরে উঠে আসতে পারে না। ফলে সেখানকার সমুদ্রের পিঠের পানিস্তর ঠান্ডা হওয়ার সুযোগই পায় না। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের ডিরেক্টর কার্লো বুয়োনটেম্পো জানিয়েছেন, বিশ্বে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে যোগ রয়েছে এল নিনোর। তবে সেটা ২০২৩ বা ২০২৪ সালে হবে কি না, তা জানা যায়নি এখনো। তবে এই পরিস্থিতি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

অতীতে ২০১৬ সাল ছিল বিশ্বের উষ্ণতম বছর। ‘এল নিনো’র জেরে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছিল উপমহাদেশের অনেক দেশকে। ২০১৫ সালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে খরা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। বৃষ্টির পরিমাণও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছিল। চলতি বছরে দেশের একাংশে গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। যদিও মৌসম ভবন আশ্বস্ত করেছে যে, চলতি বছরে দেশে বর্ষা স্বাভাবিক হবে।

ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডনের গ্রানথাম ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ফ্রেডেরিক অটো জানিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে সব দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এল নিনোর মাধ্যমে বাড়তি উষ্ণতার কারণে সেখানকার পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। এসব দেশে মারাত্মক তাপপ্রবাহ, খরা ও দাবানলের মতো দুর্যোগ দেখা দিতে পারে।

অটো বলেন, ‘মানুষ জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো অব্যাহত রাখায় বিশ্ব আরও উষ্ণ হয়ে উঠছে বিবেচনায় এল নিনো শুরু হলে ২০২৩ এর ২০১৬ থেকেও বেশি উষ্ণ হয়ে উঠতে পারার ভালো সম্ভাবনা আছে।’

গতকাল (বৃহস্পতিবার) ইইউ কোপার্নিকাস বিজ্ঞানীদের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে গত বছর বিশ্ব আবহাওয়ার যেসব চরম পরিস্থিতির অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছে সেগুলোর মূল্যায়ন করা হয়েছে; এতে বলা হয়েছে, রেকর্ড অনুযায়ী ২০২২ ছিল বিশ্বের পঞ্চম উষ্ণতম বছর। কোপার্নিকাস জানিয়েছে, প্রাক-শিল্পযুগের তুলনায় বিশ্বের গড় তাপমাত্রা এখন ১ দশমিক ২ সেলসিয়াস বেশি।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর