বুধবার, ৭ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

ইউক্রেনের বিশাল বাঁধ ধ্বংস

ইউক্রেনের বিশাল বাঁধ ধ্বংস

নোভা কাখভকা শহরে নিপ্রো নদীর বাঁধ ভেঙে দেওয়ায় অনেক এলাকা পানির নিচে চলে গেছে - এএফপি

ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে চলমান যুদ্ধ আরও তীব্র হচ্ছে। দুই দেশের মধ্যে শান্তি চুক্তির দূরবর্তী কোনো সম্ভাবনা নেই। রাশিয়ান সৈন্যদের দক্ষিণ ইউক্রেনের একটি বিশেষ বাঁধ উড়িয়ে দেওয়ার সর্বশেষ ঘটনাটি সামনে এসেছে। গতকাল রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেছে ইউক্রেন। তারা যাতে নিপ্রো নদী পার হয়ে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে রুশ বাহিনীর ওপর পাল্টা আক্রমণ চালাতে না পারে সে জন্যই বাঁধটি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।

রাশিয়ার পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করে এ জন্য ইউক্রেনীয় বাহিনীর গোলাবর্ষণকেই দায়ী করা হয়েছে। এ বাঁধটি খেরসন অঞ্চলের যে নোভা কাখভকা শহরে, সেটি বর্তমানে রুশ সৈন্যদের নিয়ন্ত্রণে। নিপার নদী পাড়ের লোকজন বিপদে পড়েছেন। নিচু এলাকায় বন্যা আসার সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, বাঁধটি ধ্বংস হওয়ার কারণে ৮০টি শহর এবং বসতি বন্যার ঝুঁকিতে পড়েছে। স্থানীয় একজন সামরিক কর্মকর্তা বলছেন, খেরসন অঞ্চলের অন্তত আটটি বসতি ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়ে গেছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাস বলছে, নোভা কাখভকা শহরটি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। মস্কো-সমর্থিত স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে উদ্ধৃত করে তাস আরও বলছে, সেখানে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলছেন, বন্যার হাত থেকে লোকজনকে উদ্ধারের জন্য তারা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর আগে রাশিয়া দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনের জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। এটি পারমাণবিক কেন্দ্রটিকে বিচ্ছিন্ন করে এবং এর বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।

বিস্তৃত এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা : ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলছেন, ‘ভোর রাত স্থানীয় সময় ২টা ৫০ মিনিটে এই জলবিদ্যুৎ বাঁধটি উড়িয়ে দেওয়া হয়। তার আশঙ্কা এর ফলে ৮০টির মতো শহর ও গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তিনি বলেন, তার সরকার ও সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ভুক্তভোগী লোকজনকে রক্ষায় যা কিছু করা সম্ভব তার সবই করছে।’ এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমা প্রতিরক্ষা জোট ন্যাটোর প্রধান ইয়েন্স স্টলটেনবার্গ। তিনি বলেন, এই বাঁধ ধ্বংস করা থেকে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার বর্বরতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেছেন, এর ফলে ‘হাজার হাজার বেসামরিক লোকজন হুমকির মুখে পড়েছে এবং পরিবেশেরও বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে।’

হুমকির মুখে জাপোরিঝঝিয়া পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র : এ বাঁধের সাহায্যে তৈরি জলাধারের পানি রাশিয়ার দখলিকৃত ক্রিমিয়ায় সরবরাহ করা হয়। এ পানি ব্যবহার করা হয় জাপোরিঝঝিয়ার পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রেও যা এখন রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা আইএইএর প্রধান রাফায়েল গ্রোসি এক বিবৃতিতে বলেছেন, নোভা কাখভকা বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণে জলাধারের পানির স্তর প্রতি ঘণ্টায় পাঁচ সেন্টিমিটার করে হ্রাস পাচ্ছে।

তিনি বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে অপরিহার্য নয় এমন সব ধরনের কাজের পানির ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলছেন, পরমাণু-বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিকে শীতল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পানি না পাওয়া গেলে এর জরুরি জেনারেটর চালু রাখা বিঘিœত হতে পারে।

বাখমুত শহর দখলের জন্য কয়েক মাস ধরে রুশ বাহিনীর সঙ্গে ইউক্রেনীয় সৈন্যদের লড়াই হয়েছে। সম্প্রতি রাশিয়ার ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপ দাবি করেছে, তারা এই শহরটিকে পুরোপুরি দখল করে নিয়েছে। গতকাল ভোরেও ইউক্রেনজুড়ে বিমান হামলার সতর্ক সাইরেন বেজে ওঠে। হামলা চালানো হয়েছে রাজধানী কিয়েভ লক্ষ্য করেও। বলা হচ্ছে কিয়েভ টার্গেট করে রাশিয়ার ছোড়া ২০টিরও বেশি মিসাইল গুলি করে ধ্বংস করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর