শনিবার, ১৭ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

ইউক্রেনে বাঁধ ধ্বংসে হুমকিতে কৃষি, খাদ্য সংকটে পড়ছে বিশ্ব

ইউক্রেনে বাঁধ ধ্বংসে হুমকিতে কৃষি, খাদ্য সংকটে পড়ছে বিশ্ব

দক্ষিণ ইউক্রেনে সোভিয়েত যুগের কাখোভকা বাঁধ ধ্বংস হওয়ায় ইউক্রেনের বিস্তীর্ণ জমি সেচের পানি পাবে না। ডিনিপ্রো নদীর বিশাল বাঁধটি ধ্বংস করে ফেলায় বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তার ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।

আর ইউক্রেনের কৃষিমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রায় ৬ লাখ হেক্টর জমিতে পানি যেত কাখোভকা বাঁধের  রিজার্ভার থেকে। বাঁধটি ধ্বংস হওয়ায় সব পানি বের হয়ে বন্যা হয়েছে। এবার খরার আশঙ্কা দেখা  দিয়েছে। ওই বাঁধ থেকে যে জমিতে পানি যেত সেখানে আর পানি পৌঁছবে না। ফলে ওই জমি চাষের অযোগ্য হয়ে পড়বে। এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব দেখা যাবে বিশ্ববাজারে। খাদ্যশস্যের দাম বাড়বে। খাদ্যের অভাবও তৈরি হতে পারে। কারণ এ খাদ্যশস্য   বিশ্বের বহু দেশে খাদ্যের জোগান দেয়।      ইউক্রেনের কৃষি মন্ত্রণালয়ের দাবি, ওই অঞ্চলের জমিতে ৪০ লাখ টন খাদ্যশস্য এবং তেলের বীজ তৈরি হতো। যার বাজারমূল্য সব মিলিয়ে এক দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। এ বাজারটি এবার সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে।

সমস্যার সূত্রপাত আগেই। পূর্ব ইউরোপের এ অঞ্চলের অনেকটা অংশ আগেই রাশিয়া দখল করেছিল। দেড় বছর ধরে সেখানে লাগাতার যুদ্ধ চলছে। ফলে বহু চাষি জমি ছেড়ে পালিয়ে এসেছিলেন। গত বছরও তারা নিজেদের জমিতে ফসল ফলাতে পারেননি। যুদ্ধের জন্য বহু খেত নষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে মিসাইলের আঘাতে বাঁধটি ভেঙে যায়। এ বাঁধের পানি পূর্ব ইউক্রেনের বিস্তীর্ণ চাষের জমিতে যেমন সেচের পানি পৌঁছে দেয়, ঠিক তেমনি ২০১৪ সালে রাশিয়ার দখল করা ক্রিমিয়া অঞ্চলেও পানি পৌঁছে দেয়। বাঁধ ভাঙার ফলে ক্রিমিয়ার কৃষকরাও পানি পাবেন না।

গোটা ইউক্রেনের মোট জমির পরিমাণের মাত্র দুই শতাংশ আছে ওই অঞ্চলে। কিন্তু ইউক্রেনের মোট ফসলের ১২ শতাংশ তৈরি হয় সেখানে। খেরসন অঞ্চলে মাটি উর্বর। সেখানে সবচেয়ে ভালো হয় তরকারি। ওই অঞ্চলের টমেটো বিশ্ববিখ্যাত। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, কিছুদিনের মধ্যে এর প্রভাব বোঝা না-ও যেতে পারে। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে ধীরে ধীরে প্রভাব পড়তে শুরু করবে। খাদ্যশস্যের দাম তিন শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। তার চেয়েও বড় সমস্যা, ইউক্রেন পরিমাণমতো খাদ্যশস্য রপ্তানি করতে পারবে না। ফলে আফ্রিকা এবং ইউরোপের দেশগুলো ফের খাদ্য সংকটে পড়তে পারে। বস্তুত এর প্রভাব পড়তে পারে কৃষ্ণসাগরীয় চুক্তিতেও। ইউক্রেন এবং রাশিয়া তুরস্কের মধ্যস্থতায় কৃষ্ণসাগরের বাণিজ্যপথ খুলে রাখার চুক্তি করেছে। সেই চুক্তিতেও প্রভাব ফেলতে পারে এ ঘটনা। কাখোভকা বাঁধে কারা আক্রমণ চালিয়েছিল, তা এখনো স্পষ্ট নয়। দুই দেশই একে অন্যের দিকে আঙুল তুলেছে।

মধ্যস্থতার চেষ্টায় এবার আফ্রিকা : ইউক্রেন যুদ্ধের শক্ত প্রভাব পড়া আফ্রিকার দেশগুলো এবার মস্কো-কিয়েভের মধ্যস্থতায় উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নেতারা গতকাল কিয়েভে ও আজ রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে সফরে গিয়ে যুদ্ধের মধ্যস্থতা নিয়ে আলোচনা করবেন বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে রয়টার্স। নেতাদের মধ্যে থাকছেন সেনেগালের প্রেসিডেন্ট ম্যাকি সাল, সাউথ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা এবং জাম্বিয়া, কমোরোস ও মিসরের প্রধানমন্ত্রীরা। যুদ্ধের কারণে আফ্রিকার এই দেশগুলো খাদ্য সংকট, মুদ্রাস্ফীতিসহ বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। এদিকে আফ্রিকার নেতারা এক শান্তি মিশনে ইউক্রেনে সফর শুরু করার মধ্যেই অন্তত দুটি বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছে রাজধানী কিয়েভ।

সর্বশেষ খবর