যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের দুই দিনের সফর গতকাল শেষ হয়েছে। এর মধ্যে তিনি গতকাল চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংসহ দেশটির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকের পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ওয়াশিংটন তাইওয়ানের স্বাধীনতাকে সমর্থন করে না। অর্থাৎ এক চীন নীতির প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের অবস্থান এখনো অটুট রয়েছে। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। আমরা তাইওয়ানের স্বাধীনতাকে সমর্থন করি না।’ তবে তাইওয়ান প্রণালিতে চীনের কর্মকান্ডকে ‘উসকানিমূলক’ আখ্যায়িত করে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ তিনি প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের কাছে তুলে ধরেছেন বলে ব্লিঙ্কেন জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, শির সঙ্গে বৈঠকে ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘আগ্রাসনমূলক যুদ্ধ’সহ বৈশ্বিক নানা বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে।
অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন চীনে পৌঁছেন রবিবার। তাঁর এ সফরে বিশ্লেষকরা ধারণা করেছেন, এ সফর বিশ্বের এ দুই শক্তিধর দেশের মধ্যে বরফ গলাতে সহায়তা করবে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে চীন সফরে যাওয়ার কথা ছিল ব্লিঙ্কেনের। কিন্তু সে সময় যুক্তরাষ্ট্র চীনের সন্দেহভাজন একটি গুপ্তচর বেলুন ভূপাতিত করার পর সেটি পিছিয়ে দেওয়া হয়। গত পাঁচ বছরে এটাই কোনো মার্কিন শীর্ষ কূটনীতিকের প্রথম চীন সফর। সফরের শেষ পর্যায়ে গতকাল প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন ব্লিঙ্কেন। বেইজিংয়ের তিয়ানআনমেন স্কয়ারে গ্রেট হল অব দ্য পিপলে প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে ব্লিঙ্কেনের বৈঠক হয়। বৈঠকে শি বলেন, ‘চীন নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে এবং দুই পক্ষ (চীন ও যুক্তরাষ্ট্র) প্রেসিডেন্ট (জো) বাইডেন ও আমি বালিতে যে সাধারণ বোঝাপড়ায় পৌঁছেছিলাম তা অনুসরণ করতে সম্মত হয়েছে।’ নভেম্বরে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অনুষ্ঠিত জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের কথা উল্লেখ করে বলেন তিনি। বিবিসি জানিয়েছে, তিনি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের উন্নতির জন্য ব্লিঙ্কেনকে আরও কিছু করার আহ্বান জানান। চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক স্থিতিশীল করতে ব্লিঙ্কেন ‘আরও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবেন’ বলে তিনি আশা করেন। ‘রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের মিথস্ক্রিয়া সব সময়ই পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতা ভিত্তিক হওয়া উচিত,’ বলেন শি। তিনি আরও বলেন, ‘আমি আশা করি এ সফরের মাধ্যমে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক স্থিতিশীল করতে আপনি আরও ইতিবাচক অবদান রাখবেন।’
তাইওয়ান নিয়ে সমঝোতার সুযোগ নেই-ওয়াং : যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ইয়ের সঙ্গে ব্লিঙ্কেনের বৈঠক নির্ধারিত সময়ের চেয়ে এক ঘণ্টা বেশি স্থায়ী হয়। বৈঠকে ওয়াং ই বলেছেন, দুই দেশের বর্তমান সম্পর্কের পেছনে মূল কারণ হচ্ছে তাঁর দেশ নিয়ে যুক্তারাষ্ট্রের ‘ভুল ধারণা’।বৈঠকের পর চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ওয়াং ই ব্লিঙ্কেনকে বলেছেন, ‘তাইওয়ান নিয়ে সমঝোতার কোনো সুযোগ নেই।’ তিনি আরও দাবি করেছেন, আমেরিকা যাতে চীনের ওপর থেকে একতরফা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। সেই সঙ্গে আমেরিকা যাতে চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের ওপর ‘দমন চেষ্টা’ বন্ধ করে এবং চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করে, সে আহ্বান জানান ওয়াং ই। বিবিসি