রবিবার, ২৫ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

রাশিয়ায় নজর গোটা বিশ্বের

রাশিয়ায় নজর গোটা বিশ্বের

রুস্তভ -অন-ডন শহরে টহল দিচ্ছে ওয়াগনার সেনারা -এএফপি

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে হঠাৎ প্রেক্ষাপট পরিবর্তন। রাশিয়া যে ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার নিয়ে এত দিন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধ চালিয়েছে সেই ওয়াগনার বাহিনী হঠাৎ করেই রাশিয়া তথা পুতিনের বিরুদ্ধেই বিদ্রোহ করেছে। বাহিনীর প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন ঘোষণা দিয়েছেন তিনি তার ২৫ হাজার সৈন্য নিয়ে মস্কো দখল করবেন। গতকালের এ ঘটনার পর রাশিয়ার দিকে এখন নজর গোটা বিশ্বের। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এর আগে নিজের দেশে এরকম কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েননি।

ডয়চে ভেলের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার ভাড়াটে আধা-সামরিক বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপ নাটকীয়ভাবে মস্কোর দিকেই অস্ত্র তাক করেছে। এটির নেতা ইয়েভগেনি প্রিগোজিন ১৯৯৯ সাল থেকে রাশিয়া শাসন করা পুতিনকে হটানোর ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে, পুতিন প্রিগোজিনকে বিচারের মুখোমুখি করার ঘোষণা দিয়েছেন।

এতকাল রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সঙ্গে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল ওয়াগনার গ্রুপ। কিন্তু এই গ্রুপটি এবার পুতিনবিরোধী হয়ে ওঠায় রাশিয়ায় তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বনেতারা ইতোমধ্যে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখার কথা জানিয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে উল্লেখ করে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র অ্যাডাম হজ বলেন, ‘এই পরিস্থিতি নিয়ে মিত্র এবং অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।’

ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান চার্লস মিশেল এ বিষয়ে টুইটারে লিখেছেন, ‘জোটটি রাশিয়ার পরিস্থিতির দিকে নিবিড়ভাবে চোখ রাখছে। এ বিষয়ে ইউরোপীয় নেতা এবং জি-সেভেন অংশীদারদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। তবে তিনি এটাও উল্লেখ করেছেন যে, বিষয়টি রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং ইউক্রেনের প্রতি জোটের সমর্থন অপরিবর্তিত থাকবে।’

ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক সব পক্ষকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে এবং বেসামরিক মানুষদের রক্ষায় সচেষ্ট থাকতে আহ্বান জানিয়েছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘আমরা এই পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের মিত্রদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। আমি আজকে তাদের সঙ্গে কথা বলব। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সব পক্ষের দায়িত্বশীল আচরণ করা।’ জার্মান সরকারও রাশিয়ার পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মস্কোর কেন্দ্রীয় অঞ্চলের পাশাপাশি সরকারি ও সামরিক ভবন এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে। এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ওয়াগনারের বিদ্রোহ দেখাচ্ছে যে রাশিয়া দুর্বল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার দুর্বলতা স্পষ্ট। পূর্ণমাত্রায় দুর্বলতা। রাশিয়া আরও যত বেশি সময় এটির সেনা এবং ভাড়াটে সেনাদের আমাদের জমিনে রাখবে ভবিষ্যতে এটি ততই বিশৃঙ্খলা, যন্ত্রণা এবং সমস্যা ভোগ করবে।’

কীভাবে এই সংকটের সমাধান : শেষ পর্যন্ত কীভাবে হবে এ সংকটের সমাধান তা এখনো স্পষ্ট নয়। প্রেসিডেন্ট পুতিনের একজন সাবেক উপদেষ্টা সের্গেই মারকভ বিবিসিকে বলেন, সামরিক দিক থেকে বিবেচনা করলে পরিস্থিতি খুবই বিপজ্জনক। তিনি বলেন, ওয়াগনার গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে আছে ১০ থেকে ২০ হাজার সৈন্য। এদের বেশির ভাগই এখন রোস্তভ শহরে। রোস্তভ শহর বেশ বড় শহর। ১০ লাখের বেশি মানুষ আছে এই শহরে। ‘শহর এলাকার লড়াইয়ে ওয়াগনার গ্রুপ বেশ দক্ষ। বাখমুতের লড়াই থেকে আমরা এর প্রমাণ পাই। কাজেই এই সামরিক পথে এই সমস্যার সমাধান বেশ কঠিন হবে,’ বলছেন তিনি। সের্গেই মারকভের মতে, ওয়াগনার গ্রুপের প্রায় ২০ হাজার মোটামুটি পেশাদার সৈন্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর অন্তত ৫০ হাজার সৈন্য নিয়ে আসতে হবে ইউক্রেনের রণক্ষেত্র থেকে। সঙ্গে সঙ্গেই এটা কিন্তু ইউক্রেনীয় বাহিনীর জন্য বড় সুযোগ তৈরি করবে। কাজেই এটা কোনো সমাধান নয়। তার মতে, ক্রেমলিন তাই অন্যভাবে সংকট সমাধানের চেষ্টা করছে।

প্রেসিডেন্ট পুতিন ওয়াগনার গ্রুপের সদস্যদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘তোমরা রাশিয়ার জন্য, তোমরা প্রিগোজিনের জন্য নও, যদিও তিনি আসলে ভাষণে প্রিগোজিনের নাম করেননি, কিন্তু তার ভাষণের মর্মার্থ অনেকটা এ রকমই।’

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর