শিরোনাম
বুধবার, ২৮ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিদ্রোহী ওয়াগনার নেতাদের বিচার নিয়ে যা বললেন পুতিন

বিদ্রোহী ওয়াগনার নেতাদের বিচার নিয়ে যা বললেন পুতিন

দুই দিনের মাথায় আবারও রাশিয়ার টেলিভিশনে ভাষণ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। গত ২৪ জুন পিএমসি ওয়াগনারের বিদ্রোহ চেষ্টার সময় রুশরা যেভাবে ঐক্য ধরে রেখেছিল তার জন্য গোটা জাতিকে ধন্যবাদ দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, রক্তপাত এড়াতে প্রথম থেকেই সচেষ্ট ছিল তার প্রশাসন। পাশাপাশি তিনি ওয়াগনার বাহিনীকে ক্ষমা করে দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা পূর্ণ করার আশ্বাসও দেন। ভাষণে তিনি এও বলেন, ‘তারা (ওয়াগনার) রাশিয়াকে রক্তক্ষয়ী সহিংসতার মাধ্যমে একটি শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় দেখতে চেয়েছিলেন।’ আর এ জন্য বিদ্রোহের সংগঠকদের ‘বিচারের আওতায়’ আনা হতেও পারে। তবে তিনি সাধারণ ওয়াগনার যোদ্ধাদের ‘দেশপ্রেমিক’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন, তারা চাইলে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে পারে, বেলারুশ যেতে পারে কিংবা ঘরে ফিরে আসতে পারে। তিনি সরাসরি ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের নাম উল্লেখ করেননি। প্রিগোজিন এর আগে পুতিনকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রচেষ্টার কথা অস্বীকার করেছেন।

ওয়াগনার হচ্ছে ভাড়াটে সেনাদের একটি বাহিনী যারা ইউক্রেন যুদ্ধে রুশ সামরিক বাহিনীর পাশাপাশি লড়াই করছিল। ক্ষণস্থায়ী এক বিদ্রোহে ওয়াগনার যোদ্ধারা একটি গুরুত্বপূর্ণ রুশ শহরের দখল নেয়। এরপর তারা সারিবদ্ধ সামরিক গাড়িবহর নিয়ে মস্কোর দিকে রওনা হয়। সোমবার টেলিগ্রামে প্রকাশিত ১১ মিনিটের এক অডিও বার্তায় প্রিগোজিন দাবি করেছেন যে, ওয়াগনার গোষ্ঠীর ওপর সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া ছিল এটি।

জুনে রাশিয়া বলে, ‘স্বেচ্ছাসেবী গোষ্ঠীটিকে’ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি চুক্তি সই করতে বলা হবে, যাকে ওয়াগনারের ওপর প্রিগোজিনের নিয়ন্ত্রণের প্রতি হুমকি হিসেবে দেখা হয়েছে। ওয়াগনারের প্রধান বলেন, এটি ছিল ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধের সময় প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের ভুল পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।

তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, ওয়াগনার সবসময়ই রাশিয়ার স্বার্থের পক্ষেই কাজ করেছে।

বিদ্রোহ স্থগিত করার বিষয়ে একটি চুক্তিতে রাজি হওয়ার পর প্রিগোজিনের এটাই জনসমক্ষে প্রথম বক্তব্য। এই চুক্তির আওতায় তার বিরুদ্ধে সব ধরনের অপরাধের অভিযোগ প্রত্যাখ্যানের পর তার বেলারুশে চলে যাওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম অবশ্য বলেছে যে, তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান থাকবে।

তিনি বলেন, ‘রুশ সেনাদের রক্তপাত বন্ধ’ করার জন্যই তিনি এই বিদ্রোহের ইতি টেনেছেন। তিনি আরও বলেন, তারা তাদের অগ্রগতি থামিয়ে দেওয়ার কারণে অনেক রুশ নাগরিক হতাশা প্রকাশ করেছে। কিন্তু তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, রাশিয়ার নির্বাচিত কর্তৃপক্ষকে ক্ষমতাচ্যুত করার কোনো অভিপ্রায় তার ছিল না। যেহেতু তার বার্তাটি শুধু অডিও ছিল তাই তিনি কোথায় রয়েছেন এবং পরবর্তীতে তিনি কী করবেন তা কিছু জানা যায়নি।

রুশ নাগরিকদের উদ্দেশে তৈরি করা নিজের সংক্ষিপ্ত ভাষণে পুতিন বলেন, মস্কোর উদ্দেশে যারা যাত্রা শুরু করেছিল তাদের ‘বিচারের আওতায়’ আনা হবে এবং তার পুরনো মিত্র প্রিগোজিন রাশিয়ার ‘পিঠে ছুরি মেরেছে’ বলে উল্লেখ করেছেন।

কোন কৌশলে থামল ওয়াগনার বাহিনীর বিদ্রোহ : ওয়াগনার সেনা মস্কো দখলের হুঁশিয়ারি দেওয়ার পর ঘুম ছুটে গিয়েছিল রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের। যদিও পরে হুঁশিয়ারি থেকে সরে আসে ভাড়াটে সেনা। মস্কো দখলের পরিকল্পনা থেকে ওয়াগনার সেনার সরে আসার বেশ কয়েক ঘণ্টা পর মুখ খুললেন রুশ প্রেসিডেন্ট। সোমবার রাশিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পুতিন জানিয়েছেন, মস্কো দখলের হুমকির পর থেকে রক্তপাত এড়াতে সেনাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ভাড়াটে সেনারা যাতে তাদের বিদ্রোহ প্রত্যাখ্যানের জন্য সুযোগ পায়, তার জন্য ওই নির্দেশ ছিল বলে জানান তিনি। চ্যালেঞ্জের মুখে ভালো কাজ করার জন্য রুশ সেনার প্রশংসা করেন তিনি।

ওয়াগনার বাহিনীকে বেলারুশে স্থানান্তরিত করার সিদ্ধান্তের কথা জানান রুশ প্রেসিডেন্ট। এ সংক্রান্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রকের সঙ্গে ওয়াগনার বাহিনীর একটি চুক্তি স্বাক্ষরে চেষ্টা চালানো হবে বলে আশ্বাস দেন। ক্রেমলিনের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুসহ রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনাও সেরেছেন পুতিন।

এদিকে, ওয়াগনার সেনার এই বিদ্রোহের পেছনে আমেরিকার মদদের অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে মস্কো। যদিও রাশিয়ার এই দাবি নস্যাৎ করেছে ওয়াশিংটন। রুশ সরকার পরিবর্তনে কোনো চেষ্টা আমেরিকার নীতি নয় বলে জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কিরবি।

সর্বশেষ খবর