বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংসপ্রাপ্ত জেনিন শিবিরে ফিরছে ফিলিস্তিনিরা

ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংসপ্রাপ্ত জেনিন শিবিরে ফিরছে ফিলিস্তিনিরা

ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া জেনিন শিবিরের বাড়িঘরে ফিরছেন ফিলিস্তিনি শরণার্থীরা -রয়টার্স

অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে দুই দিন ধরে সামরিক অভিযান শেষে ইসরায়েল তাদের সেনা প্রত্যাহারের পর ফিলিস্তিনিরা শরণার্থী শিবিরে নিজেদের বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছে।

ইসরায়েলি হামলায় শরণার্থী শিবিরে ব্যাপক ধ্বংসের চিত্র দেখা গেছে। এ শিবিরে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি থাকে। শিবিরের ভবনগুলোয় ইসরায়েলি হামলায় বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। গাড়িগুলো দুমড়ে-মুচড়ে গেছে এবং মাটিতে এখানে-সেখানে ভাঙা কাচ আর বুলেটের খোসা পড়ে আছে। ইসরায়েলি হামলায় যে ১২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন তাদের স্মরণে জানাজায় এবং শোকমিছিলে যোগ দেয় হাজার হাজার মানুষ।

এদিকে জেনিনে সংঘাত থামলেও ইসরায়েল এখন গাজায় বিমান হামলা শুরু করেছে। ইসরায়েল দাবি করছে, ফিলিস্তিনি জঙ্গিদের রকেট হামলার জবাবে তারা এ হামলা চালাচ্ছে। দুই দিনের হামলার সময় একজন ইসরায়েলি সেনাও নিহত হন। এদিকে গতকাল সকালে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা গাজা থেকে ছোড়া পাঁচটি রকেট মাঝপথে ধ্বংস করে দিয়েছে।

কোনো ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী এসব রকেট হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেনি। তবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলছে, হামাস ব্যবহার করত এমন একটি ভূগর্ভস্থ অস্ত্র তৈরির কারখানা তারা জেট বিমান থেকে হামলা চালিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে। ইসরায়েলের তেলআবিব শহরে মানুষের ওপর চলন্ত গাড়ি তুলে দিয়ে এবং ছুরি মেরে হামলার ঘটনায় মঙ্গলবার সাতজন আহত হন। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামলাকারী ছিল পশ্চিম তীরের এক ফিলিস্তিনি। একজন বেসামরিক লোক তাকে গুলি করে হত্যা করে। হামাস এ ঘটনাকে জেনিনে ইসরায়েলের হামলার ‘স্বাভাবিক পাল্টা ব্যবস্থা’ বলে বর্ণনা করেছে। ফিলিস্তিনি নেতারা অভিযোগ করেছেন, ইসরায়েল জেনিনে আগ্রাসন চালিয়েছে।

একজন ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র বিবিসিকে জানিয়েছেন, জেনিনের অভিযান আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে এবং সেনারা ওই এলাকা ত্যাগ করেছে।

জেনিনে ইসরায়েলি বাহিনী এ অভিযান শুরু করেছিল সোমবার একটি ড্রোন হামলার মাধ্যমে। তারা বলেছিল, এ ড্রোন হামলার টার্গেট ছিল ‘জেনিন ব্রিগেডের কমান্ড সেন্টার’। হামাসসহ বিভিন্ন কট্টরপন্থি ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী এ জেনিন ব্রিগেডের অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করা হয়। এরপর যখন শত শত ইসরায়েলি সেনা জেনিন শরণার্থী শিবিরে প্রবেশ করে, তখন আরও কিছু ড্রোন হামলা চালায় ইসরায়েল। শিবিরের ভিতরে সশস্ত্র ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে তাদের তীব্র লড়াই চলে। ইসরায়েলি বাহিনী বলেছে, তাদের ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ছিল অস্ত্রশস্ত্র জব্দ করা এবং এই শিবির যে ‘একটি নিরাপদ ঘাঁটি’ সেই ধারণা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া। এর আগে জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার দফতরের একজন মুখপাত্র জেনিনে এবং পশ্চিম তীরের অন্যান্য জায়গায় যেরকম ব্যাপক বিমান এবং স্থল অভিযান চলছে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

তিনি আরও বলেন, ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে, নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে তিনজন ছিল শিশু। তিনি বলেন, ইসরায়েলি হামলায় যেরকম ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার ফলে সেখানে এখন খাবার পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, জেনিন শরণার্থী শিবিরের কিছু কিছু এলাকায় ফিলিস্তিনি অ্যাম্বুলেন্স কর্মীদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৪০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়, এর মধ্যে ৩০ জনের আঘাত গুরুতর।

একজন ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট কর্মকর্তা জানান, প্রায় ৩ হাজার ফিলিস্তিনি, যাদের মধ্যে অনেক অসুস্থ এবং বয়স্ক মানুষও ছিলেন, তারা রাতের বেলায় ড্রোন হামলা থেকে রক্ষা পেতে পালিয়ে আসতে পেরেছেন।

হুইল-চেয়ার আরোহী এক ব্যক্তি এবং তার পরিবারকে সকালে শরণার্থী শিবির থেকে পাহারা দিয়ে বের করে আনা হচ্ছিল। তিনি বিবিসিকে জানান, তাদের ইসরায়েলি বাহিনী একটি কক্ষে আটকে রেখেছিল।

‘আমাদের সামরিক ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছিল। ইসরায়েলি সেনারা এলো, তারপর আমরা বেরিয়ে এলাম। ক্যাম্পে এখন আর কোনো লোক নেই। অবশিষ্ট লোক বলতে ছিলাম আমরাই।’

তিনি বলেন, ‘সেখানে খুব কঠিন অবস্থা ছিল। ড্রোন থেকে আমাদের দিকে গুলি করা হচ্ছিল। এখন আমরা চলে এসেছি। আমরা সবাই খুব ক্লান্ত। আমাদের কোনো খাবার নেই... কোনো পানীয় নেই।’

স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান এমএসএফ অভিযোগ করেছে, ইসরায়েলি বুলডোজার সেখানে অনেক রাস্তা ধ্বংস করেছে, রাস্তার ওপর থেকে টারমাক তুলে নিয়েছে। ফলে তাদের প্যারামেডিকদের পায়ে হেঁটে সামনে এগোতে হয়েছে।

তবে একজন ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র জানান, তাদের বুলডোজার শিবিরের ভিতরে দুই কিলোমিটার রাস্তা খুঁড়ে ফেলেছে, কারণ তার ভাষায়, সেখানে জঙ্গিরা বিস্ফোরক লুকিয়ে রাখত, আর তাতে করে বেসামরিক মানুষ এবং সেনাদের জীবন ঝুঁকিতে পড়ত।

সর্বশেষ খবর