শনিবার, ৮ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

অ্যামাজন বন নিয়ে শুভ সংবাদ দিল ব্রাজিল

কথা রেখেছেন লুলা, বন ধ্বংস হ্রাস পেয়েছে এক-তৃতীয়াংশ

অ্যামাজন বন নিয়ে শুভ সংবাদ দিল ব্রাজিল

অ্যামাজন বনকে বলা হয় পৃথিবীর ফুসফুস। বিশ্বের মোট অক্সিজেনের ২৫ শতাংশই আসে এই বনাঞ্চল থেকে। কিন্তু ব্রাজিলে গত কয়েক বছরে এই বন উজাড় উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। অথচ বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে আমাজনের অতিবৃষ্টি অরণ্য বা চিরহরিৎ বনের অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এবার এই বন নিয়ে শুভ সংবাদ জানাল ব্রাজিল সরকার।

গত ছয় মাসেই বন ধ্বংসের হার ৩৩.৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। অর্থাৎ ২০২২ সালের প্রথম ছয় মাসে যে পরিমাণ আমাজন ধ্বংস হয়েছে, ২০২৩ সালে সেই ধ্বংসের মাত্রা এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে। ২০২২ সালে যেখানে প্রথম ছয় মাসে ৩ হাজার ৯৮৮ বর্গকিলোমিটার এলাকার বন ধ্বংস হয়েছে, ২০২৩ সালে হয়েছে ২ হাজার ৬৪৯ বর্গ কিলোমিটার বন।

এটা সম্ভব হয় কেবল দেশটির বামপন্থি নেতা লুলা দা সিলভা ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর। তিনি ছয় মাস আগে ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে অ্যামাজন নিধন। সাবেক প্রেসিডেন্ট কট্টোর ডানপন্থি জইর বলসোনারোর আমলে রীতিমতো অ্যামাজন ধ্বংসের উৎসব চলেছিল। তবে গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে এই অবস্থা বদলানোর   প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন লুলা দা সিলভা। ক্ষমতায় বসেই নিজের কথার বাস্তবায়ন শুরু করেন তিনি। প্রেসিডেন্ট লুলা ২০৩০ সাল নাগাদ বন উজাড় বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু নিউইয়র্ক   সিটির চেয়ে তিনগুণেরও বেশি বড় এই বনাঞ্চল উজাড় হওয়া পুরোপুরি বন্ধ করা তার জন্য এক বিশাল চ্যালেঞ্জ।

বৃহস্পতিবার ব্রাজিলের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্পেস রিসার্চ (ইনপে) বন উজাড় কমার নতুন স্যাটেলাইট তথ্য উপস্থাপন করেছে। ব্রাজিলের পরিবেশমন্ত্রী মেরিনা সিলভা সাংবাদিকদের বলেছেন, আমরা ধীরে ধীরে অ্যামাজনের বন উজাড় কমার প্রবণতা তৈরি করতে পেরেছি। ইনপের তথ্যমতে, এ বছরের জুন মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রেকর্ড ৪১ শতাংশ কমেছে বন   উজাড়। তবে এই বনের ক্রমশ ধ্বংস হয়ে যাওয়া জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানোর যুদ্ধকে কঠিন করে তুলছে।

এ বছর জানুয়ারিতে ব্রাজিলের দায়িত্ব নেওয়া প্রেসিডেন্ট লুলা তার পূর্বসূরি কট্টর ডানপন্থি জাইর বোলসোনারোর অ্যামাজন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নীতি পরিবর্তন করার অঙ্গীকার করেছেন।

অ্যামাজনের আদিবাসী জমিতে খনির কাজ বন্ধ করেছেন লুলা। চলতি বছরের শুরুতে তিনি আদিবাসী জমিগুলোতে খনি খনন নিষিদ্ধ   করাসহ বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদেও বিধিনিষেধ আরোপ করেন।

আদিবাসী নেতারা লুলার পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে তারা বলেছেন, আমাজনের আরও অঞ্চলের সুরক্ষা প্রয়োজন। বন উজাড় যখন কমছে, তখন পরিসংখ্যানে আগুনের ঘটনা বাড়তে দেখা যাচ্ছে। স্যাটেলাইটের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, কেবল গত জুন মাসেই আমাজনে ৩,০৭৫টি দাবানল হয়েছে। ২০০৭ সালের পর এ সংখ্যা সর্বোচ্চ। এতে প্রচুর কার্বন নিঃসরণ ঘটে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে।

লুলা এর আগে ২০০৩-২০১০ সালে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন। চিরহরিৎ বন রক্ষায় বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে ধনী দেশগুলোকে অর্থায়নের জন্যও চাপ দিয়ে আসছেন তিনি।

সর্বশেষ খবর