যা কিছু হারায় তা একেবারে হারায় না। ফিরেও আসে। আজ থেকে অন্তত ২ হাজার বছর আগে লুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাচীন মায়া শহরের সন্ধান পেলেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। শহরটির মধ্যে রয়েছে পিরামিডের মতো একাধিক স্থাপত্য। রয়েছে বিশাল বিশাল থাম। এমন এক আবিষ্কার ঘিরে প্রত্নতাত্ত্বিক মহলে দেখা দিয়েছে চাঞ্চল্য। তবে এক দিনে আবিষ্কার হয়নি এই নিদর্শন। ৩০ বছর ধরে মেক্সিকোর ইউকাতান উপদ্বীপ অঞ্চলের ঘন জঙ্গলে প্রাচীন মায়া সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ খুঁজে চলেছেন ড. ইভান স্প্রাইস। জঙ্গল তাঁকে হতাশ করেনি, স্লোভেনিয়ার এই প্রত্নতত্ত্ববিদ ২০১৩ সাল থেকেই জঙ্গলে লতাপাতা কেটে বের করেছেন একাধিক শহরের ধ্বংসাবশেষ। তবে তাঁর সাম্প্রতিক আবিষ্কারের প্রতি প্রচারের আলো হয়েছে আর একটু জোরালো।
দিন কয়েক আগে মেক্সিকোর বালামকুর বাস্তুতান্ত্রিক সংরক্ষণ ক্ষেত্রের মধ্যে এমন এক প্রাচীন মায়া শহরের সন্ধান পেয়েছেন ইভান ও তাঁর দল, যা গড়ে উঠেছিল ৬০০ থেকে ৮০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। ইভান এই শহরের নাম দিয়েছেন ওকোমতুন, প্রাচীন মায়া ভাষায় যার অর্থ ‘পাথরের থাম’। প্রত্নতত্ত্ববিদদের দলটির দাবি, প্রাচীন শহরটির গঠনের জন্যই তাঁরা এই নাম বেছে নিয়েছেন। সারা শহরজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে থাম ও পিরামিডের মতো একাধিক স্থাপত্য। যেগুলোর কোনোটার উচ্চতা ৫০ ফুটেরও বেশি। পশ্চিম গোলার্ধের অন্যতম প্রাচীন সভ্যতা হলো মায়া সভ্যতা। ২০০ থেকে ৯০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্য আমেরিকায় কার্যত তাদেরই রাজত্ব চলত। গবেষকরা জানিয়েছেন, এই সভ্যতার মানুষ জ্যোতির্বিজ্ঞান, গণিত ও বিজ্ঞানে অত্যন্ত পারদর্শী ছিলেন। চকোলেট ও রাবারের আবিষ্কারও তাঁদের হাত ধরে। লেখার প্রচলনও ছিল তাঁদের মধ্যে। কিন্তু নবম শতক থেকে হঠাৎ করেই ক্ষয়ীভূত হয় এই সভ্যতা। শহরগুলো ছেড়ে চলে যান অধিবাসীরা।
আগেও গভীর জঙ্গল থেকে একাধিক শহর খুঁজে বের করেছেন ইভান। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ২০১৩ সালে খুঁজে পাওয়া অষ্টম শতকের শহর চাকতুন। যাতে বাস করত আন্দাজ ৪০ হাজার মানুষ। তার ঠিক এক বছর পরে আবিষ্কৃত লাগুনিতা এবং তামচেন শহরও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তবুও ইভান মনে করেন, ওকোমতুন আবিষ্কার হওয়ার ফলে ঠিক কী কারণে প্রায় ১২০০ বছর আগে শেষ হয়ে গেল মায়া সভ্যতা তার হদিস মিলতে পারে। হঠাৎ করে নিজেদের তৈরি শহরগুলো ত্যাগ করেছিলেন মায়া সভ্যতার মানুষ। তার পেছনে কি রয়েছে অতিমারি, শত্রুর আক্রমণ, জলবায়ুর অবক্ষয় নাকি স্রেফ জীবনধারার পরিবর্তন?