ইউক্রেনের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলে এক রাশিয়ান সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, ইউক্রেনের ক্লাস্টার বোমা হামলায় এই সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। পাশাপাশি ইউক্রেনের বন্দরনগরী ওডেসার ওপর রাশিয়ার চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত একজন নিহত এবং ১৯ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া ট্রান্সফিগারেশন ক্যাথেড্রাল নামে একটি ঐতিহাসিক গির্জাও গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এএফপি জানায়, রাসতিসলাভ জোরাভলোভ নামে নিহত এই সাংবাদিক রাশিয়ার রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম আরআইএ-এর যুদ্ধ সাংবাদিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার আরও তিন সহকর্মীও আহত হয়েছেন। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, পশ্চিমা শক্তি ও কিয়েভ এই ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ঘটনার দায়ীদের জবাব দেওয়ার হুমকিও দিয়েছে রাশিয়া।
অন্যদিকে দোনবাসে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রাশিয়ার হামলায় ডয়চে ভেলের এক ক্যামেরাম্যান আহত হয়েছেন। সেনাবাহিনীর ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটিতে সাংবাদিক ইভগেন শিলকোকে প্রতিবেদন তৈরির জন্য পাঠানো হয়েছিল। ডয়চে ভেলের সাংবাদিক মাঠিয়াস ব্যোলিংগার বলেন, ‘আমরা ইউক্রেন সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণের ভিডিও করছিলাম। এমন সময় কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাই। তখন আমরা শুয়ে পড়লাম, এরপর আরও কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেলাম। দেখলাম, কয়েকজন আহত হয়েছেন।এদিকে রাশিয়ায় অধিকৃত ক্রিমিয়ার একটি গোলাবারুদের ভান্ডারে শনিবার ব্যাপক বিস্ফোণের শব্দ শোনা গেছে। সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থলের আশপাশের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। হামলার কথা স্বীকার করে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা সেই অঞ্চলটিতে ড্রোন হামলা চালিয়ে একটি তেলের ভান্ডার এবং রাশিয়ার সেনাবাহিনীর একটি গুদাম ধ্বংস করেছে।
এদিকে ওডেসায় আঞ্চলিক গভর্নর ওলেহ কিপার জানিয়েছেন, রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আবাসিক ভবনও আক্রান্ত হয় এবং ঐতিহাসিক অর্থডক্স গির্জারও গুরুতর ক্ষতি হয়েছে। ইউক্রেন থেকে কৃষ্ণসাগরের ভিতর দিয়ে নিরাপদে শস্য রপ্তানির নিশ্চিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি থেকে রাশিয়া গত সোমবার নিজেদের প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর থেকেই ওডেসার ওপর একের পর এক আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে মস্কো। ইউক্রেন অভিযোগ করেছে, রাশিয়া ওই চুক্তি ও শস্য রপ্তানির সঙ্গে সম্পর্কিত অবকাঠামোগুলোকে লক্ষ্য করে আক্রমণ চালাচ্ছে। ইউক্রেনীয় অর্থডক্স গির্জাটি ঊনবিংশ শতাব্দির শুরুতে তৈরি। এটি ১৯৩৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ধ্বংস করে দিয়েছিল, তবে ২০০৩ সালে তা আবার পুনর্র্নির্মাণ করা হয়।
এদিকে গতকাল রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন সেন্ট পিটার্সবার্গে তার ঘনিষ্ঠ মিত্র বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে বৈঠক করছেন।
লুকাশেঙ্কো রাশিয়ার ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের সাম্প্রতিক বিদ্রোহ অবসানে ভূমিকা রাখেন এবং এর প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন ও তার কিছু যোদ্ধাকে সে দেশে থাকতে দিয়েছেন। এর পর এই প্রথম পুতিনের সঙ্গে তার মুখোমুখি সাক্ষাৎ হচ্ছে। পুতিন বলেন, তাদের এ আলোচনা কয়েক দিন ধরে চলতে পারে।
এদিকে বৈঠকে লুকাশেঙ্কো আভাস দেন, তাকে ওয়াগনারের যোদ্ধাদের সংযত করতে হয়েছে। কারণ তারা পোল্যান্ডে ঢুকতে আগ্রহী ছিল।