মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিশ্বে খাদ্য নিরাপত্তার হুমকি বাড়ছে

রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা, তাপদাহ, যুদ্ধ সমস্যাকে ত্বরান্বিত করছে

ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার শস্য চুক্তির মেয়াদ ছিল ২২ জুলাই ২০২২ থেকে ১৭ জুলাই ২০২৩। নবায়ন না হওয়ায় চুক্তির জীবনকালটি ছোট, চুক্তির বেশ কিছু ত্রুটিও আছে। কিন্তু এটাই ছিল রাশিয়ার হামলার অন্ধকারাচ্ছন্ন সময়ে একমাত্র কূটনৈতিক আলো। চুক্তির মাধ্যমে ইউক্রেন কৃষ্ণসাগর ব্যবহার করে সারা বিশ্বে নিজেদের শস্য রপ্তানি করত। স্বাভাবিকের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ কম হলেও ৩ কোটি ৩০ লাখ টন শস্য রপ্তানি পরিমাণে কম নয়। কিন্ত সাম্প্রতিক সময়ে এর অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে।

শুধু রাশিয়া এবং ইউক্রেন নয়। অন্যান্য যে দেশগুলো বিশ্বের খাদ্যশস্যের জোগান দেয় সবখানেই প্রতিকূল অবস্থা বিরাজ করছে। যেমন- যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীন- পৃথিবীর প্রায় অধিকাংশ দেশ ও অঞ্চলে প্রচ তাপদাহে বিপর্যস্ত কৃষি। শস্যখেত, ফলবাগান, ডেইরি খামার- খাদ্য উৎপাদনের প্রায় প্রতিটি খাতই চাপের মধ্যে। চরম বিরূপ জলবায়ুই বৈশ্বিক খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থার প্রতি একমাত্র হুমকি নয়। চিরায়ত কিছু ভূরাজনৈতিক বাধাও ফিরে আসছে আবার। এর মধ্যে চালের শীর্ষ রপ্তানিকারক ভারত, পণ্যটি রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। যা বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যার প্রধান খাদ্য। ভারত বলছে, তারা স্থানীয় বাজারে দাম বাড়ানো রুখতে এই পদক্ষেপ নিয়েছে। বিজ্ঞানীরা আবার এর মধ্যে বলে দিয়েছেন, মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে এল নিনো জলবায়ু পরিস্থিতি। এর ফলে বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বেড়েছে; দেখা দিয়েছে খরার। যা কৃষির ক্ষয়ক্ষতি বহুগুণে বাড়িয়ে তুলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা ঘিরে উদ্বেগ আরও ঘনিয়ে আসছে; ফলে খাদ্যের চড়া মূল্য, যা লাগামহীন মূল্যস্ফীতির অন্যতম নিয়ামক হয়ে উঠতে পারে আরও স্থায়ী। আগের মূল্যস্ফীতির ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই নতুন এ আঘাতে চরম সমস্যায় পড়বে সাধারণ মানুষ। লন্ডন-ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক চ্যাথাম হাউসের খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ টিম বেনটন বলেন, ‘বর্তমানে প্রায় সবাই মূল্যস্ফীতির চাপের মধ্যে আছেন। সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতি সূচক কিছুটা পড়তির দিকে এলেও, তার মানে এই নয় যে, সব পণ্যের দামও কমছে। এর অর্থ দাম এখনো বাড়ছে, তবে আগের চেয়ে ধীরগতিতে।’

এশিয়া, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা মহাদেশের বিশাল অঞ্চলজুড়ে চলা প্রচ তাপে ঝলসে গেছে মাঠের পর মাঠের ফসল। বিশ্বের কৃষক সম্প্রদায়ের জন্য চলতি বছরটা চরম এক দুঃসময় হয়ে উঠছে। বৈরী জলবায়ুর খেয়ালখুশির সঙ্গে লড়তে হচ্ছে তাদের। তবু কখনো বা দীর্ঘস্থায়ী খরা, কখনো বা অতিবৃষ্টির মতো প্রকৃতির রুদ্ররূপের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ ছাড়া উপায় থাকে না। এদিকে গত সপ্তাহে মস্কো আনুষ্ঠানিকভাবে শস্য চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়। রাশিয়া এরপর বন্দরগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো শুরু করে যদিও এর আগে দেশটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে বন্দরে হামলা চালানো হবে না।ধ্বংসকৃত স্থাপনাগুলোর মধ্যে একটি ছিল ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় উৎপাদনকারী কোম্পানি কেরনেল-এর একটি শস্য টার্মিনাল। কর্মকর্তারা বলেন, গত সপ্তাহে ৬০ হাজার টন শস্য ধ্বংস হয়েছে।

সর্বশেষ খবর